@=হাজীদের প্রতি কিছু খোলা চিঠি
হজ্জ ও উমরাহ্ পালনকারীদের প্রতি কিছু খোলা চিঠি
লেখক:
শাইখ ড. ইয়াহ্ইয়া ইবন ইব্রাহীম আল-ইয়াহ্ইয়া
অনুবাদ ও সম্পাদনা :
সাইফুল্লাহ বিন আহমাদ কারীম,
নূরুল্লাহ তারীফ,
মাসউদুর রহমান নূর
ও
ওহীদুজ্জামান মাসুদ
|
|||
||||||
|||
|
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ্ তা'আলার জন্য, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ তা'আলা ছাড়া প্রকৃত কোন মা'বুদ নেই, তিনি সৎকর্মশীলদের অভিভাবক। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দাহ ও রাসূল, তিনি মুখোজ্জল সৎকর্মশীলদের নেতা। তিনি যথাযথভাবে আমাদের কাছে রেসালাত পৌঁছিয়েছেন, আমানত আদায় করেছেন, উম্মতের কল্যাণ কামনা করেছেন এবং আমাদেরকে শুভ্র উজ্জ্বল-স্পষ্ট দ্বীনের উপর রেখে গেছেন, যার সকল বিষয় দিবালোকের মত সুস্পষ্ট, একমাত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যক্তিই এতে বক্রতার পথ অবলম্বন করে থাকে। আল্লাহর অপার করুণা ও রহমত বর্ষিত হোক তাঁর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর উপর এবং যারা কেয়ামত পর্যন্ত তার এ দাওয়াতে অংশগ্রহণ করে তার সুন্নাতের অনুসরণ করেছেন, তার পদাংক অনুবর্তন করে তার প্রদর্শিত পথে পরিচালিত হয়েছেন; তাদের সকলের উপর।
সুপ্রিয় হাজী ভাই,
আপনাকে মহান আল্লাহ্ তা'আলা মিলিয়ন মিলিয়ন মুসলমানদের মধ্য থেকে তাঁর পবিত্র ঘর যিয়ারতের জন্য মনোনীত করেছেন। আল্লাহ্ তা'আলার কাছে আবেদন করি তিনি যেন দুনিয়া ও আখেরাতে আপনাকে অভিভাবকত্ব দান করেন এবং যেখানেই থাকুন না কেন সেখানেই আপনাকে বরকতময় করেন।
সম্মানিত ভাই,
আপনি অনেক কষ্ট বরদাশ্ত করেছেন। অনেক কঠিন পরিস্থিতি সহ্য করেছেন। অনেক সম্পদ-অর্থ-কড়ি ব্যয় করেছেন। নিজ দেশ, আপন-জন, পরিবার পরিজন,সন্তান-সন্ততি ছেড়ে এসেছেন। এসব কেবলমাত্র এ জন্য যে আল্লাহ্ তা'আলা আপনার উপর তাঁর পবিত্র ঘরের হজ্জ পালন করা ফরজ করেছেন, তা সম্পন্ন করার জন্যই আপনার এ আগমন। আল্লাহ্ আপনার হজ্জকে কবুল ও কলুষমুক্ত করুন।
সম্মানিত হাজী ভাই,
আপনার আগমনে আমার ভালবাসা ও অনুরাগ আপনার প্রতি। আপনার সন্তুষ্টি ও আনন্দ, আপনার নিরাপত্তা ও শান্তিতে আমার মানসিক আনন্দ, আর এটাই আমাকে আপনার প্রতি আমার কিছু করণীয় আদায়ের লক্ষ্যে কয়েকটি উন্মুক্ত চিঠি প্রেরণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এর মাধ্যমে আমি আমার প্রতি আমার মহিয়ান গরিয়ান প্রতিপালকের সে নির্দেশের বাস্তবায়ন করতে চাই। যাতে তিনি বলেনঃ
((إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْر))
العصر: 3
((কিন্তু উহারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্য্যের উপদেশ দাও।)) [সূরা আল-আসরঃ ৩]
আর আমাদের নবী, হাবীব, ইমাম ও আদর্শ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে নির্দেশের অনুসরণ করনার্থে, যাতে তিনি এরশাদ করেছেনঃ
مَثَلُ الْْمؤمنينِ فِيْ تَوَادِّهِمْ وَ تَرَاحُمِهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ كَمََُثَلِ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عَُْضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَائِر الجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْْحُمّى.
((পরস্পরের প্রতি ভালবাসা, দয়া, করুণা ও অনুকম্পার ক্ষেত্রে মুমিনদের উদাহরণ হচ্ছে এক দেহের মত, যখন দেহের কোন একটি অংশ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন গোটা দেহ অনিদ্রা ও জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়ে।))[1]
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেছেনঃ
المُؤمِنُ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضا.
((একজন মুমিন ব্যক্তি অপর মুমিন ব্যক্তির জন্য একটি প্রাচীরের মত, যার কিছু অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে।))[2]
সুপ্রিয় হাজীভাই!
সুতরাং আপনার কাছে আমার অনুরোধ ও আশা- আপনি আপনার প্রতি আন্তরিক এ ভাইয়ের চিঠিগুলো গভীরভাবে উপলব্ধি করবেন, সম্ভবত আল্লাহ্ তা'আলা এর মাধ্যমে আপনাকে উপকৃত করবেন।
লেখক
ইয়াহ্ইয়া ইবনে ইব্রাহীম আল-ইয়াহ্ইয়া
প্রথম চিঠি
সুপ্রিয় হাজীভাই,
আপনার প্রথম উদ্দেশ্যে, একমাত্র উদ্দেশ্য, যার জন্য আপনি এ পবিত্র নগরীতে আগমন করেছেন তা ভুলে গেলে চলবে না, আর তা হচ্ছে হজ্জ পালন করা। তাই জেনে নিন -আল্লাহ্ আপনাকে হেফাযত ও তত্ত্বাবধায়ন করুন- হজ্জ সহ সকল নেকআমল আল্লাহ্ তা'আলার কাছে কবুল ও প্রতিদান যোগ্য হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে-
প্রথমত: নিরঙ্কুশভাবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সকল নেকআমল হতে হবে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
((وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ))
البينة:5
((আর তাদেরকে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য দ্বীনকে নিরঙ্কুশ করে ইবাদাত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।)) [সূরা আল-বাইয়্যেনাহঃ ৫]
দ্বিতীয়ত: সমস্ত নেকআমল রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত বা তরিকা অনুযায়ী সঠিকভাবে হতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামেরশাদ করেছেনঃ
من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد.
((যে এমন কাজ করল যাতে আমাদের অনুমোদন নেই তা প্রত্যাখ্যাত।))[3] অর্থাৎ, তার সে আমল তার প্রতি প্রত্যাখ্যাত এবং তার কাছ থেকে অগ্রহণযোগ্য।
সুতরাং আপনার সম্পূর্ণ গুরুত্ব ও প্রচেষ্টা হওয়া দরকার আপনার আমল গ্রহণযোগ্য হল কি হল না সে ক্ষেত্রে। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের ক্ষেত্রে তাঁর সুস্পষ্ট বক্তব্যে এভাবে বলেছেনঃ
خذوا عني مناسككم.
((তোমরা আমার কাছ থেকে হজ্জের বিধান গ্রহণ করো।))[4] অর্থাৎ, তোমরা জান এবং সে অনুযায়ী আমল কর যা আমি হজ্জে সম্পাদন করেছি, নিজেদের পক্ষ থেকে কোন বেদআত করো না। সুতরাং একজন মুসলমানের জন্য সর্বোত্তম হচ্ছে সেভাবে হজ্জ ও উমরার বিধানসমূহ আদায় করা যেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে এ বিধানগুলো বর্ণিত ও অনুসৃত হয়েছে। যাতে করে এর মাধ্যমে আল্লাহর ভালবাসা ও ক্ষমা লাভ করা যায়। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
)قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ) (آل عمران:31)
((বলুন, যদি তোমরা আল্লাহ্কে ভালবেসে থাক তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ্ সমূহ ক্ষমা করবেন।)) [সূরা আলে-ইমরানঃ ৩১]
সুপ্রিয় হাজীভাই,
সুতরাং আপনার অন্যতম কর্তব্য হচ্ছে হজ্জের বিধানসমূহ যথাযথভাবে জেনে নেয়া এবং হজ্জের কার্যাদি শুরু করার আগে আলেমদেরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা। এখানে আমি হজ্জ ও উমরার সম্পাদন পদ্ধতি সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করবো, আপনার কর্তব্য হবে এক্ষত্রে বিস্তারিত যা লেখা হয়েছে তা পাঠ করা ও জেনে নেয়া।
১. মীকাতে পৌঁছে যথাসম্ভব অপবিত্রতা থেকে যেভাবে গোসল করে থাকেন সেভাবে গোসল করবেন। যদি উত্তম কোন সুগন্ধি থাকে তা ব্যবহার করবেন। অতঃপর ইহরামের কাপড় পরবেন। আর তা হচ্ছে ২টি সাদা চাদর। আর মহিলারা যেকোন ধরনের পোষাক পছন্দ করে, সেগুলো পরবে। তবে তাতে সৌন্দর্য্যের খোলামেলা প্রকাশ ও পুরুষদের পোষাক সাদৃশ হতে পারবে না। অতঃপর একথা বলে উমরার ইহরাম করবেঃ
لَبَّيْكَ عُمْرَةً (লাব্বাইকা উমরাতান)
অতঃপর তালবিয়া যেভাবে এসেছে তা পাঠ করবেনঃ
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَ النِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكُ لَا شَرِيْكَ لَكَ.
লাব্বায়েকা আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক, লাব্বায়েকা লা-শারিকালাকা লাব্বায়েক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নেয়'মাতা লাকা, ওয়াল মুলকা লা শারিকালাকা।
মনে রাখবেন মীকাত হতে ইহরাম করা ওয়াজিব। আপনি যদি হজ্জ অথবা উমরা পালন করার ইচ্ছা পোষণ করেন, তাহলে ইহরাম ব্যতীত মীকাত অতিক্রম করা আপনার জন্য জায়েয নেই।
২. যখন আপনি ইহরামের নিয়ত করবেন তখন আপনাকে জানতে হবে যে, ইহরামের কারণে আপনার উপর নিম্নোক্ত বিষয়গুলো হারাম হয়ে যাবেঃ
ক. শরীরের যে কোন ধরনের পশম বা চুল কাটা, যেহেতু আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেনঃ
) وَلا تَحْلِقُوا رُؤُوسَكُمْ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ)(البقرة: من الآية196)
((আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মাথা মুন্ডন করো না যতক্ষণ পর্যন্ত না হাদী (হজ্জের কুরবানী) যথাস্থানে পৌঁছবে।)) [সূরা আল-বাকারাহঃ ১৯৬]
খ. শরীর, পোষাক-পরিচ্ছেদ ও খাদ্যে সুগন্ধি ব্যবহার করা, যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে ব্যক্তির হাদীসে বলেছেন, যে ব্যক্তি বাহন থেকে পড়ে মারা গিয়েছেঃ
لا تحنطوه ولا تخمروا رأسه.
((তোমরা তাকে সুগন্ধি লাগিও না এবং তার মাথা ঢেকে দিও না।))[5]
মুহরিমের জন্য এমন পোষাক পরিধান করা জায়েয নেই যাতে সুগন্ধি রয়েছে অথবা এ জাতীয় কোন বস্তু ব্যবহার করা হয়েছে যেমন ওরাস ও জাফরান ইত্যাদি।
গ. স্ত্রী সহবাস করা। আর এটা নিষিদ্ধ কাজ সমূহের মধ্যে কঠোরতম কেননা তাহাল্লুলে আউয়ালের পূর্বে যদি স্ত্রী সহবাস ঘটায়, তাহলে তা হজ্জকে বিনষ্ট করে দেয় এবং তার উপর এ হজ্জ সম্পূর্ণ করা ও একটি উট জবেহ করা অপরিহার্য হয়ে যায়।
অনুরূপভাবে কামভাব প্রবল হয়ে সহবাসপূর্ব যে কোন কাজ চাই তা চুম্বন করা ,গুপ্তস্থান ব্যতিরেকে সহবাস করা অনুরূপ অন্যসকল কাজ হারাম বা নিষিদ্ধ।
ঘ. মুহরিমের জন্য বিবাহের আক্দ সম্পন্ন করা হারাম, মুহরিম বিয়ে করতে পারবে না এবং কাউকে বিয়ে দিতেও পারবে না। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ((মুহরিম বিয়ে করবে না, অন্যকে বিয়ে দিবে না এবং বিয়ের প্রস্তাব পেশ করবে না।))[6]
ঙ. পুরুষদের উপর বিশেষ করে সেলাই করা কাপড় পরা হারাম। সেলাই করা কাপড় বলতে বুঝায় যা শরীরের মাপ অনুযায়ী তৈরী করা হয়। যেমন পাঞ্জাবী, জামা অথবা শরীরের কোন অংশের পরিমাপে তৈরী করা হয় যেমন,গেঞ্জি,পায়জামা। পুরুষদের উপর অনুরূপভাবে মাথার সাথে জুড়ে থাকে যেমন- পাগড়ী, টুপি ইত্যাদি দিয়ে মাথা ঢেকে রাখা হারাম।
চ. মুহরিম নারী পুরুষ সকলের উপর স্থলচর প্রাণী শিকার করা, শিকারে সাহায্য করা এবং শিকারকে তার স্থান থেকে তাড়ানো হারাম।
ছ. মহিলাদের উপর বিশেষ করে নেকাব ব্যবহার করা হারাম। নেকাব হচ্ছে মুখমণ্ডল ঢাকার জন্য এমন আচ্ছাদন ব্যবহার করা যাতে কেবল চোখ খোলা রাখার ব্যবস্থা থাকে। অনুরূপভাবে মাহিলাদের উপর হাত মোজা ব্যবহার করাও হারাম আর তা হচ্ছে হাতের পরিমাপ অনুযায়ী যা তৈরী করা। এর প্রমান হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্যঃ
((মুহরিম নারী নেকাব পরবে না এবং হাত মোজা পরিধান করবে না।))
তবে মুহরিম নারী যদি অপরিচিত বেগানা পুরুষদের সামনে পড়ে যায় সে তার মুখমণ্ডল ঢেকে দিবে। যেহেতু আয়েশা রাদিয়াল্লাহু 'আনহা বলেনঃ
((হাজীদের দলগুলো আমার পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করতেন। আর আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম তারা যখন আমাদের পাশাপাশি চলে আসতো, আমাদের মহিলারা তাদের মাথা হতে পূর্ণগাউন তাদের মুখের উপর নামিয়ে দিতেন, [মুখ ঢেকে নিতেন] আর তারা যখন আমাদের অতিক্রম কের যেত আমরা তা খুলে দিতাম।))
৩. অতঃপর মক্কা পৌঁছে কাবা ঘরের তাওয়াফ শুরু করা পর্যন্ত বেশী বেশী তালবিয়া পাঠ করবেন। যখন মক্কায় পৌঁছবেন তখন কাবা ঘরের চারদিকে সাত চক্কর তাওয়াফ করবেন হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করবেন এবং হাজরে আসওয়াদে গিয়ে এক চক্কর শেষ করবেন। অতঃপর মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে অথবা কাছাকাছি যেকোন স্থানে দু'রাকা'আত নামায পড়বেন।
৪.দু'রাকাআত নামায পড়ার পর সাফা পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রাওয়ানা করবেন। এর পর সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাতবার সায়ী করবেন। এটা হবে উমরার সায়ী, আর তা শুরু হবে সাফা পাহাড় হতে এবং শেষ হবে মারওয়া পাহাড়ে। সাফা থেকে মারওয়া পর্যন্ত একবার আবার মারওয়া থেকে সাফা পর্যন্ত একবার, এভাবে সাতবার মারওয়াতে গিয়ে সায়ী শেষ হবে।
৫. যখন সায়ী শেষ করবেন তখন আপনার সম্পূর্ণ মাথা হতে চুল কামাবেন অথবা ছোট করবেন, তবে কামানো উত্তম। এর মাধ্যমেই আপনার 'উমরা শেষ হবে। এবং আপনার জন্য বৈধ হবে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে স্বাভাবিক পোশাক পরিধান করা।
৬. আর যদি আপনি শুধু মাত্র হজ্জের ইচ্ছা করে থাকেন তাহলে মীকাত হতে 'উমরার পরিবর্তে হজ্জের নিয়ত করবেন এবং বলবেনঃ
لَبَّيْكَ حَجًّا (লাব্বায়কা হাজ্জান)।
অতঃপর ইহরাম অবস্থায় বেশী বেশী তালবিয়া পাঠ করতে থাকবেন জামরায় আকাবাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত। যখন আল্লাহর ঘরে পৌঁছবেন তখন আল্লাহর ঘরের চারদিকে সাত চক্কর তাওয়াফে কুদুম করবেন। আর যদি সাফা ও মারওয়ার মাঝে সায়ী করে থাকেন তাহলে এ সায়ী আপনার হজ্জের সায়ী হিসাবে যথেষ্ট হয়ে যাবে। আপনি মাথার চুল ছোট করবেন না, ঈদের দিন হালাল হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি ইহরাম অবস্থায় থাকবেন।
৭. আর যদি হজ্জ এবং উমরা দু'টি মিলিয়ে কেরান করতে চান তাহলে মীকাতে হতে ইহরাম করার সময় এভাবে বলবেনঃ
لَبَّيْكَ عُمْرَةً وَحَجًّا (লাব্বায়কা উমরাতান ওয়া হাজ্জান)
অতঃপর জামরায় আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত বেশী বেশী করে তালবিয়া পড়বেন এবং শুধু হজ্জ পালনকারী মুফরিদ যেভাবে হজ্জের কাজ সম্পন্ন করবেন সেভাবে বাকী কাজ সম্পন্ন করবেন।
হজ্জের কার্যাবলী
১. জিলহজ্জ মাসের আট তারিখ মধ্যাহ্নের আগেই আপনি মক্কার যেখানে আছেন সেখান থেকে হজ্জের ইহরাম করে নিবেন যদি তামাত্তু করার ইচ্ছে করে থাকেন। আর সম্ভব হলে গোসল করে নিবেন, অতঃপর ইহরামের কাপড় পরবেন এভাবে বলবেনঃ
لَبَّيْكَ حَجًّا (লাব্বায়কা হাজ্জান)
এ দিন থেকে জামরায় আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত বেশী বেশী তালবিয়া পাঠ করা আপনার অন্যতম কাজ হবে।
২. এরপর মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করবেন, সেখানে গিয়ে যোহর নামায পড়বেন দু'রাকাত, আসরের নামায পড়বেন দু'রাকাত, মাগরিব তিন রাকাত ও এশা দু'রাকাত, তবে প্রত্যেক নামায সময় মত আদায় করবেন।
৩. নয় তারিখ আরাফার দিন যখন সূর্য উদিত হবে, তখন তালবিয়া পাঠ করতে করতে আরাফাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করবেন। সেখানে যোহর ও আসরের নামায যোহরের ওয়াক্তে একত্রে আদায় করবেন। এক আজানে, দু'একামতে যোহর দু'রাকাত ও আসর দু'রাকাত পড়বেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান করবেন। কেবলামুখী হয়ে এখানে বেশী বেশী দো'আ ও যিকির করবেন।
সুপ্রিয় ভাই,
আরাফাতের সীমায় আপনার প্রবেশ নিশ্চিত করবেন। এবং সূর্যাস্তের পূর্বে আরাফাতের ময়দান হতে কোন অবস্থাতে বের হবেন না।
৫. যখন সূর্য সম্পূর্ণরূপে অস্তমিত হয়ে যাবে তখন আরাফাত থেকে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে ধীরতা ও প্রশান্তির সাথে রওয়ানা করবেন। মুযদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও এশা একত্রে এক আজানে ও দু'একামাতে আদায় করবেন। মাগরিব তিন রাকাত এবং এশা দু'রাকাত পড়বেন। অতঃপর সেখানে ফজর নামায পড়বেন। অতঃপর সূর্য উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দো'আ ও যিকিরের জন্য অবস্থান করবেন।
৬. সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে মুযদালিফা থেকে তালবিয়া পাঠ করতে করতে মুযদালিফা থেকে মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। মিনায় পৌঁছে ঐদিন নিম্নোক্ত কাজসমূহ সম্পন্ন করবেনঃ
ক. জামরায় আকাবাতে রমি বা পাথর নিক্ষেপ করবেন। মক্কা হতে এটা সবচেয়ে নিকটবর্তী জামরাহ। এতে পরপর সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। প্রত্যেক কঙ্কর নিক্ষেপের সময় আল্লাহু আকবার বলবেন। কঙ্কর যাতে হাউজের মধ্যে পড়ে এ ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করবেন।
খ. হাদী জবেহ করবেন, তা থেকে নিজেও খাবেন এবং ফকির মিসকিনদের প্রতি সাদকাহ করবেন।
তামাত্তু ও কিরান হজ্জ সম্পাদনকারীর উপর হাদী জবেহ করা ওয়াজিব। তবে যদি সম্ভব না হয় তাহলে হজ্জের মধ্যে তিনদিন রোযা রাখবেন এবং পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে গিয়ে সাতটি রোযা রাখবেন। সর্বমোট দশটি রোযা।
গ. মাথার চুল কামাবেন অথবা ছোট করবেন। তবে চুল কামানোই উত্তম। মুহরিম নারী শুধুমাত্র এক কর পরিমাণ চুল ছোট করবেন।
এ তিনটি কাজই সম্পন্ন করবেন, প্রথমে কংকর নিক্ষেপ, তারপর জবেহ, তারপর চুল কামানো; যদি সম্ভব হয় এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করবেন। তবে এ কাজ গুলোর মধ্যে একটি অন্যটির চেয়ে আগে পরে করার মধ্যে কোন সমস্যা নেই। রমি ও হলক অথব কসরের পর আপনি প্রথমিক হালাল হয়ে যাবেন। এরপর আপনি স্বাভাবিক পোষাক পরতে পারবেন এবং ইহরামের কারণে নিষিদ্ধ সকল কাজ আপনার জন্য হালাল হয়ে যাবে কেবল স্ত্রী সহবাস ব্যতীত।
৭. অতঃপর মক্কায় যাবেন, সেখানে গিয়ে তাওয়াফে ইফাদা বা হজ্জের তাওয়াফ পালন করবেন। এবং সাফা ও মারওয়ার মাঝে হজ্জের সায়ী শেষ করবেন যদি আপনি তামাত্তুকারী হয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে আপনি দ্বিতীয়বারের মত সম্পূর্ণরূপে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবেন এবং আপনার জন্য ইহরামের নিষিদ্ধ সকল কাজ হালাল হয়ে যাবে এমনকি স্ত্রী সহবাসও হালাল হয়ে যাবে।
৮. আর আপনি যদি কিরানকারী অথবা ইফরাদ হজ্জকারী হয়ে থাকেন তাহলে আল্লাহর ঘরে সাতবার তাওয়াফ করবেন। আর তাওয়াফে কুদুমের সাথে যদি সায়ী না করে থাকেন তাহলে সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করবেন।
৯. অতঃপর তাওয়াফ ও সায়ী করে মিনায় ফিরে যাবেন। এবং মিনায় এগার ও বার তারিখের রাত্রি যাপন করবেন।
১০. এরপর এগার ও বার তারিখ সূর্য হেলে যাওয়ার পর তিন জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। প্রথমটি থেকে শুরু করবেন এটা মক্কার দিক থেকে সর্বশেষটি,এরপর মধ্যবর্তীটি এরপর জামরায় আকাবায়। প্রত্যেকটিতে পরপর সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। প্রত্যেক কঙ্কর নিক্ষেপের সময় আল্লাহু আকবার বলবেন। প্রথম ও দ্বিতীয়টির পর কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর কাছে দো'আ করা মুস্তাহাব। এ দুইদিন সূর্য হেলে যাওয়ার আগে কঙ্কর নিক্ষেপ করা বৈধনা এবং তা আদায় হবে না।
১১. বার তারিখ রমি করার পর আপনি যদি ইচ্ছে করলে মিনা থেকে সূর্যাস্তের পূর্বেই প্রস্থান করতে পারবেন। আর যদি ইচ্ছে করেন সেখানে থাকতে পারবেন। মনে রাখবেন থাকাটা উত্তম। যদি থাকেন তাহলে আপনি তের তারিখ সেখানে রাত্র যাপন করবেন এবং ঐদিন সূর্য হেলে যাওয়ার পর বার তারিখের ন্যায় সবগুলো জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন।
১২. এরপর আপনি যদি দেশে অথবা গন্তব্যে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা করেন তাহলে মক্কা থেকে বের হওয়ার আগে সাতচক্কর আল্লাহর ঘরের বিদায়ী তাওয়াফ করে নিবেন। ঋতুবতী ও প্রসবস্রাব আক্রান্ত মহিলার বিদায়ী তাওয়াফ নেই।
মদীনা শরীফ যিয়ারত
সম্মানিত ভাই,
হজ্জের মৌসুমে অথবা অন্য যে কোন সময় মুসলমানের জন্য সঙ্গত আছে মসজিদে নববী শরিফ যিয়ারত করা। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে এরশাদ করেছেনঃ
((তিনটি মসজিদ ব্যতীত আর কোন মসজিদের দিকে (যিয়ারত, সম্মান ও ফযীলত লাভের উদ্দেশ্যে) ভ্রমন করো না; আমার এ মসজিদ, মক্কার মসজিদুল হারাম ও মসজিদুল আকসা।))
সম্মানিত ভাই, আল্লাহ্ তা'আলার হেফাজত ও নিরাপত্তায় যখন আপনি মদীনা শরীফে এসে পৌছবেন প্রথমেই মসজিদে হাজির হয়ে নামায পড়বেন কেননা এ মসজিদে নামায পড়া অন্য মসজিদে একহাজার নামায পড়ার মর্যাদা সম্পন্ন। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ
((আমার মসজিদে এক ওয়াক্ত নামায (মক্কার) মসজিদুল হারাম ছাড়া অন্য যে কোন মসজিদে একহাজার নামায (পড়া) অপেক্ষা উত্তম।
তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবু বকর ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, তাদের কবরের সামনে গিয়ে সালাম দিবেন।
প্রিয় ভাই, আপনার জন্য মসজিদে কুবা ও যিয়ারত করা সুন্নাত। এখানে নামায পড়বেন। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করছেনঃ (( যে ব্যক্তি নিজ ঘর থেকে বের হয়ে এই মসজিদ অর্থাৎ, মসজিদে কুবায় আগমন করবে এবং এতে নামায পড়বে তা তার জন্য একটি উমরা সম্পন্ন করার সম পরিমান সওয়াব হবে।))
বাকী' কবরস্থান ও উহুদের শহীদদের কবরস্থান যিয়ারত করা আপনার জন্য সঙ্গত, যাতে আপনি তাদের জন্য দো'আ ও ইসতিগফার করতে পারেন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাকী কবরস্থান ও উহুদের শহীদদের স্থানে আসতেন এবং কবর বাসীদের জন্য এভাবে দো'আ করতেনঃ
((আপনাদের প্রতি সালাম হে কবরবাসী মুমিন ও মুসলিম! আমরাও আল্লাহর ইচ্ছায় আপনাদের সাথে মিলিত হব।))
আল্লাহ্ তা'আলা আপনাকে সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন। পবিত্র মদীনা শরীফে এসব স্থান হচ্ছে আপনার জন্য যিয়ারতের বৈধ স্থান। এ ছাড়া অন্য কোন স্থানে যিয়ারত করা, নামায পড়া, কিছুই সুন্নাত সম্মত নয়। কেননা যদি তা আমাদের জন্য সওয়াবের কাজ হত এবং কল্যাণকর হত তাহলে আমাদের হাবীব ও নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করতে আমাদেরকে নির্দেশ করতেন। কেননা আমরা সবাই এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি রিসালত আমাদের নিকট পৌঁছিয়েছেন, আমানত আদায় করেছেন, উম্মাতের কল্যাণ কামনা করেছেন এবং আমাদেরকে এমন একটি উজ্জ্বল ও শুভ্র শরীয়তের উপর রেখে গেছেন যার অস্পষ্ট বিষয়গুলো দিবালোকের মত স্পষ্ট। ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যক্তিই এতে কেবলমাত্র বক্রতা অবলম্বন করে থাকে। আল্লাহ্ তা'আলা তার দ্বীন ও নেয়ামত পরিপূর্ণ করা পর্যন্ত তাকে মৃতু্য দান করেননি। সুতরাং আমার রবের সকল দয়া, প্রশান্তি ও প্রাচুর্য তাঁর প্রতি, তাঁর পরিবার পরিজন ও সকল সাহাবীদের প্রতি।
দ্বিতীয় চিঠি
প্রিয় হাজী ভাই,
হজ্জের কার্যাবলীতে আমরা অনেকেই নানা ধরণের ভুল করে থাকি। এর কোনটি আমাদের না জানার কারণে, আর কোনটি আমাদের অসচেতনতা বা অবহেলার কারণে হয়ে থাকে। এ পত্রে আমরা হজ্জের নানাবিধ ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে আলোচনার প্রয়াস পাব, যেন আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের হজ্জ ত্রুটিমুক্তভাবে সম্পাদিত হতে পারে।
এক : ইহরামের সাথে সংশ্লিষ্ট ভুলসমূহ
১. মীকাত থেকে ইহরাম না বাধা।
২. ইহরামের কাপড় পাল্টানো যাবে না-এ ধারণা পোষণ করা, প্রকৃতপক্ষে ইহরামের কাপড় যখন ইচ্ছা তখন পাল্টানো যাবে।
৩. ইহরামের শুরু থেকে ইজত্বেবা করা। (ইজত্বেবা মানে হচ্ছে- ডান কাঁধ খোলা রেখে চাদরটা ডান বগলের নীচ দিয়ে এনে বাম কাঁধের উপর ফেলে দেয়া।) অথচ শুধুমাত্র তাওয়াফের সময় ইজত্বেবা করা সুন্নত। তাও যদি সেটি তাওয়াফে কুদুম হয়। তাওয়াফে কুদুমকে বাংলায় আগমনী-তাওয়াফ বলা যেতে পারে।
৪. ইহরাদের জন্য বিশেষ নামাজ পড়াকে ওয়াজিব মনে করা।
দুই: মীকাত থেকে মসজিদে হারামে পৌঁছার পূর্বে যেসব ভুল লক্ষণীয়
১. তালবিয়া না পড়ে অন্য কথা বার্তায় ব্যতিব্যস্ত থাকা। এমনকি কেউ কেউ গুনার কাজে লিপ্ত হতেও লজ্জাবোধ করেন না, যেমন- গান শুনা।
২. সমস্বরে তালবিয়া পড়া।
তিন : মসজিদে হারামে প্রবেশ সংক্রান্ত নানা গলদ
১. নির্ধারিত কোন দরজা দিয়ে হারামে প্রবেশ করাকে বাধ্যতামূলক মনে করা। এমনও দেখা যায় যে বাব ফাত্হ খুঁজতে খুঁজতে হাজীসাহেব ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়েন। অথচ এ বিষয়টিকে এত কঠিনভাবে নেয়া ঠিক নয়, বরং আপনি সুবিধামত যে কোন দরজা দিয়ে হারামে প্রবেশ করতে পারেন। তবে বাব 'বনী শায়বা'' দিয়ে প্রবেশ করতে পারলে ভাল। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করেছিলেন।
২. কিছু কিছু দো'আকে হারামে প্রবেশের বিশেষ দো'আ বলে মনে করা। প্রকৃতপক্ষে হারামে প্রবেশের বিশেষ কোন দো'আ নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য মসজিদে প্রবেশকালে যে দো'আ পড়তেন হারামে প্রবেশকালেও একই দো'আ পড়েছেন। আর তা হল,
بِسْمِ الله وَ الصَّلاةُ وَ السَّلاَمُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوْبِيْ وَ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ.
((আল্লাহর নামে শুরু করছি। রাসূলের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ্, আমার গোনাহ্ খাতা মাফ করে দিন, আমার জন্য আপনার রহমতের দুয়ার খুলে দিন।))
চার : তাওয়াফ সংক্রান্ত নানা ত্রুটি-বিচু্যতি
১. নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা। যেমন, কাউকে বলতে শুনা যায়-
(اللهم إني نويت أن أطوف بالبيت سبعة أشواط)
((হে আল্লাহ্, আমি সাতবার কাবা শরীফ তাওয়াফ করার নিয়ত করছি।)) এ ধরণের কোন নিয়ত না রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে, আর না সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্নিত হয়েছে। অতএব, শুধু অন্তরে নিয়ত করাই যথেষ্ট।
২. ঠিক হাজারে আসওয়াদের সীমানা থেকে তাওয়াফ শুরু না করা। সীমানায় পৌঁছার আগে তাওয়াফের নিয়ত করা যেমন ঠিক নয়, তেমনি সীমানা পার হয়ে তাওয়াফ শুরু করলে সে চক্কর বাতিল বলে পরিগণিত হবে।
৩. হাজারে আসওয়াদে চুমা দেয়ার জন্য বা রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করার জন্য স্থানদ্বয়ে প্রচণ্ড ভিড় করা। ভিড় সৃষ্টি করে মানুষকে কষ্ট দেয়া আদৌ জায়েয নয়।
৪. হাজারে আসওয়াদে চুমা না দিলে তাওয়াফ আদায় হবে না মনে করা। অথচ এই পাথরটিকে চুম্বন করা সুন্নতমাত্র, যা অনাদায়ে ফরজের কোন ক্ষতি হয় না।
৫. রুকনে ইয়ামানীতে চুমা দেয়া, অথচ সুন্নত হল শুধু স্পর্শ করা।
৬. তাওয়াফের সকল চক্করে রমল করা। (রমল মানে- ছোট ছোট পা ফেলে দ্রুত হাটা) অথচ সুন্নত হল শুধু প্রথম তিন চক্করে রমল করা। তাও শুধু পুরুষের জন্য।
৭. প্রত্যেক চক্করের জন্য কোন একটি দো'আকে খাস করে নেয়া। কোন কোন তাওয়াফকারী তো একটা দো'আর বই সাথে রাখেন, আর অর্থ না বুঝে তোতা পাখির মত বইয়ের দো'আগুলো আওড়িয়ে যান-এটা আরো জঘন্য বিদআত।
৮. হিজ্র বা হাতীমের ভেতর দিয়ে তাওয়াফ করা। যেহেতু হাতীম কাবার ভিটার অংশ বিশেষ, এ কারণে হাতীমের ভেতর দিয়ে তাওয়াফ করলে পূর্ণ কাবার তাওয়াফ করা হবে না বিধায় তাওয়াফ বাতিল বলে পরিগণিত হবে।
৯. তাওয়াফের সময় কাবাকে বামে না রাখা। যেমন, কেউ কেউ তাদের সাথের মহিলাদেরকে ভিড় থেকে মুক্ত রাখার জন্য কয়েকজন মিলে মানববন্ধন তৈরী করে। এটা করতে গিয়ে কাবা শরীফ হয়ত তাদের কারো সামনে থাকে, কারো পিছনে থাকে, আবার কারো ডানে থাকে। অথচ এভাবে তাওয়াফ করলে আদায় না হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। যেহেতু তাওয়াফের অন্যতম শর্ত হল কাবাকে বামে রাখা।
১০. রোকনে ইয়ামানীর মত কাবার অন্যান্য স্তম্ভগুলোকেও স্পর্শ করা।
১১. এত উচ্চঃস্বরে দো'আ পড়া যাতে একাগ্রতা থাকে না, অন্যদিকে যা আল্লাহর ঘরের গাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করে এবং তাওয়াফরত হাজীদের বিরক্ত করে। আর ইবাদাতের মধ্যে কাউকে কষ্ট দেয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ।
১২. কারো কারো ধারণা তাওয়াফের দু'রাকাত সুন্নত নামাজ 'মাকামের' সন্নিকটে না হলেই নয়। এজন্য তিনি তাওয়াফের স্থান সংকীর্ণ করে মানুষকে কষ্ট দেন।
১৩. এ দু'রাকাত নামাজকে অত্যন্ত দীর্ঘ করা। অথচ এটি সুন্নাহ বিরোধী। যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নামাজটা অত্যন্ত সংক্ষেপে আদায় করতেন সেখানে এ ব্যক্তি নামাজটাকে দীর্ঘ করে অন্যকে বঞ্চিত করে, মানুষকে কষ্ট দেয়।
১৪. 'মাকামে ইব্রাহীমের' কাছে পড়ার জন্য কোন একটি দো'আকে খাস করে নেয়া। আর যদি এ দো'আ হয় সম্মিলিতভাবে তাতো আরো জঘন্য গর্হিত কাজ।
১৫. 'মাকামে ইব্রাহীম' হাত দিয়ে স্পর্শ করা। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ ব্যাপারে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।
পাঁচ : সা'ঈ সংক্রান্ত ভুলসমূহ
১. নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা হয়। অথচ নিয়ত করতে হবে অন্তরে।
২. পুরুষ ব্যক্তি দুই দাগের মাঝখানে না দেঁৗড়ানো।
৩. এর বিপরীতে- সাফা থেকে মারওয়া পুরা পথটাই দৌড়ে পার হয় অনেকে। যা অনেকগুলো অমঙ্গল নিয়ে আসে- সুন্নাহর বিরোধিতা, নিজেকে হয়রান করা, অন্যদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে তাদেরকে কষ্ট দেয়া। আর কেউ কেউ ইবাদাত থেকে তাড়াতাড়ি খালাস পাওয়ার জন্য এ কাজ করে থাকেন। তা আরো বেশী গর্হিত। কারণ এটা ইবাদাতের প্রতি অনীহার বহিঃপ্রকাশ, যা মারাত্মক গোনাহ। বরঞ্চ ইবাদাত আদায় করতে হবে পরিপূর্ণ আন্তরিকার সাথে, আনন্দ ও প্রফুল্লচিত্তে।
৪. প্রতিবার সাফা ও মারওয়ায় আরোহনকালে নিম্নোক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করা হয়।
)إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْراً فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ) (البقرة:158)
অথচ আয়াতটি তেলাওয়াত করার কথা শুধু প্রথমবার সাফায় আরোহনকালে। কারণ আল্লাহ্ তা'আলা আয়াতে কারীমাতে যে পাহাড়কে আগে উল্লেখ করেছেন সে পাহাড় থেকে তাওয়াফ শুরু করতে হবে এ কথা জানানোর জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফাতে উঠাকালে বলেনঃ "আল্লাহ্ যা দিয়ে শুরু করেছেন আমিও তা দিয়ে শুরু করছিঃ
)إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْراً فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ) (البقرة:158)
((নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তভর্ুক্ত। সুতরাং যে কেউ কা'বা গৃহের হজ্জ কিংবা 'উমরা সম্পন্ন করে এ দুইটির মধ্যে সা'ঈ করলে তার কোন পাপ নেই। আর কেউ স্বতঃস্ফূর্ত সৎকার্য করলে আল্লাহ্ তো পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ।))" [সূরা আল-বাকারাঃ ১৫৮]
১. প্রতি চক্কর সা'ঈর জন্য আলাদা আলাদা দো'আ খাস করে নেয়া।
২. মারওয়া থেকে সা'ঈ শুরু করা।
৩. সাফা থেকে পুনরায় সাফা আসাকে এক চক্কর হিসাব করা। প্রকৃতপক্ষে তখন সা'ঈ হয়ে যাবে চৌদ্দ চক্কর।
৪. নফল তাওয়াফের মত নফল সা'ঈ করা। মূলতঃ হজ্জ বা উমরা আদায়ের পর আর কোন সা'ঈ নেই।
ছয় : মাথা মুণ্ডানো বা চুল কাটা সংক্রান্ত ভ্রান্তিসমূহ
১. মাথার কিছু অংশ কামানো।
২. মাথার একদিকের কয়েকটি চুল কাটা। এটি
) مُحَلِّقِينَ رُؤُوسَكُمْ وَمُقَصِّرِينَ )(الفتح: من الآية27)
((তোমাদের কেউ কেউ মস্তক মুণ্ডিত করবে আর কেউ কেউ কেশ কর্তন করবে।)) আয়াতের বিধানের বিরোধিতা।
৩. 'উমরা আদায়কারী মাথা নেড়া করা বা চুল কাটার আগেই ইহরামের কাপড় খুলে ফেলা।
সাত : জিলহজ্জের আট তারিখে লোকেরা যে সকল ভুল করেন
১. ইহরামের আগে দু'রাকাত নামাজ পড়াকে ওয়াজিব মনে করা। অনুরূপভাবে নতুন কাপড়ে ইহরাম করাকে ওয়াজিব মনে করা।
২. ইহরামের পর পরই ইজত্বেবা করে ফেলা। অথচ ইজত্বেবা করতে হয় শুধুমাত্র তাওয়াফে কুদুমে।
৩. যে কাপড় পরে 'উমরা আদায় করা হয়েছে সে কাপড়ে হজ্জের ইহরাম বাধা যাবে না মনে করা।
৪. মিনা যাওয়ার পথে শব্দ করে তালবিয়া না পড়া।
৫. অনেকে মক্কা থেকে সরাসরি আরাফায় চলে যান, যা সুন্নতের খেলাফ।
৬. মিনায় না এসে মক্কায় থেকে যাওয়া।
৭. মিনাতে দুই ওয়াক্তের নামাজ একত্রে এক ওয়াক্তে আদায় করতে হবে মনে করা। (যোহর ও আসর একত্রে, এবং আসর ও মাগরিব একত্রে।)
৮. মিনাতে কসর না পড়ে পূর্ণ নামাজ আদায় করা।
আট : আরাফায় গমন ও অবস্থান সংশ্লিষ্ট ভুল
১. আরাফা ত্যাগের সময় সশব্দে তালবিয়া না পড়া।
২. সূর্য হেলে যাওয়ার পরও আরাফা-ময়দানের বাহিরে অবস্থান করা।
৩. কিবলা বাদ দিয়ে পাহাড়ের দিকে ফিরে দো'আ করা।
৪. পাহাড়ে অবস্থান করাকে ওয়াজিব মনে করা।
৫. কারো কারো মাঝে এ ভুল ধারণা আছে যে, আরাফার মাঠ হারামের অংশ, অতএব আরাফা মাঠের গাছপালা কাটা যাবেনা।
৬. কেউ কেউ মনে করেন জাবালে রহমতের বিশেষ মর্তবা রয়েছে। এ জন্য পাহাড়ের ওপরে ওঠে নামাজ পড়ার চেষ্টা করেন, গাছে সুতা বাঁধেন।
৭. সূর্যাস্তের পূর্বে আরাফার ময়দান ত্যাগ করা।
৮. বেহুদা কাজে সময় নষ্ট করা। আর হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া তো আরো বড় অপরাধ। যেমন, ছবি উঠানো, অশ্লীল কথা-বার্তা বলা, গান-বাজনা শুনা, মানুষকে কষ্ট দেয়া।
নয় : মুযদালিফার পথে যেসব ভুল হয়ে থাকে
১. খুব দ্রুত চলা।
২. মুযদালিফার সীমানায় না ঢুকে রাত্রি যাপন করা।
৩. মুযদালিফা পৌঁছার আগে পথিমধ্যে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করে ফেলা।
৪. যেখানেই হোক না কেন ওয়াক্তের মধ্যে এশার নামাজ আদায় না করা। অনেকের গাড়ী রাস্তায় যানজটে পড়ার কারণে মুযদালিফা পৌঁছতে মধ্যরাতের পর বা ফজরের কাছাকছি সময় হয়ে যায়। কিন্তু তারা মুযদালিফা না পৌঁছার কারণে নামাজ আদায় করে না। এটাতো তাদের মস্তবড় ভুল। কারণ ওয়াক্ত পার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হলে তাদের উচিত যেখানে সম্ভব সেখানে নামাজ পড়ে নেয়া।
৫. ওয়াক্তের আগে ফজর নামাজ পড়ে ফেলা। যেমন, সুবহে সাদেকের উদয়ন নিশ্চিত না হয়ে কেউ একজনকে আজান দিতে শুনেই নামাজ পড়ে ফেলা।
৬. রাত্রি থাকতেই মুযদালিফা ত্যাগ করা।
৭. এ-কথা সে-কথা বা গোনাহর কাজে রাত্রিটা বরবাদ করা।
৮. সূযের্াদয় পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করা।
৯. মুযদালিফা থেকে পাথর সংগ্রহ করাকে ওয়াজিব মনে করা।
দশ : কংকর নিক্ষেপ সংক্রান্ত বিভিন্ন ত্রুটি-বিচু্যতি
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কংকর নিক্ষেপের হেকমত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ
((বায়তুল্লাহ তাওয়াফ, সাফা-মারওয়াতে সা'ঈ, কংকর নিক্ষেপ এ সকল কিছুর উদ্দেশ্য হল আল্লাহর স্মরণ প্রতিষ্ঠিত করা। অতএব নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সঠিক নয়-
১. কংকরগুলো ধৌত করা, সুগন্ধি লাগানো।
২. জমরাতগুলোকে শয়তান মনে করা। এটি একটি ভুল ধারণা। বরঞ্চ আমরা কংকর নিক্ষেপের মাধ্যমে আল্লাহর যিকির প্রতিষ্ঠা করি,তার ইবাদাত বাস্তবায়ন করি। লোকদের এ বদধারণা থেকে যে কত সমস্যার উদ্ভব হয় তা বলা বাহুল্য। যেমন-
ক. তীব্র ক্রোধ ও প্রচণ্ড ক্ষিপ্রতা নিয়ে এসে মানুষকে কষ্ট দেয়া।
খ. কংকর নিক্ষেপের মাধ্যমে যে একটা ইবাদাত পালন করা হচ্ছে সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ গাফেল থাকা। বড় পাথর খণ্ড, কাঠ, জুতা ইত্যাদি ছুড়ে মারা। বলতে গেলে এ ভ্রান্ত ধারণার কারণে শরীয়ত অনুমোদিত আমলটা শরীয়ত গর্হিত আমলে পরিণত হয়।
৩. পাথরগুলো পিলারের গায়ে লাগাকে আবশ্যক মনে করা। সঠিক হলো পাথরগুলো কূপের ভিতরে পড়াই যথেষ্ট।
৪. নিজে কংকর মারতে সক্ষম হওয়া শর্তেও অন্যকে দিয়ে মারানো।
৫. কংকরগুলো মুযদালিফা থেকেই নিতে হবে-এ ধারণা পোষণ করা। সঠিক হলো যে কোন স্থানের কংকর হলেই চলবে।
৬. জমরাতগুলোর মাঝে ধারবাহিকতা রক্ষা না করা। অর্থাৎ, কংকর মারতে হয় প্রথমে ছোট জমরাতে, তারপর মাঝারি, সবশেষে বড় জমরাত-এই ধারাবাহিকতা ভঙ্গ করা।
৭. নিক্ষেপের সময় শুরু হওয়ার আগেই কংকর মেরে ফেলা। নিক্ষেপের সময় শুরু হয় সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পর মুহূর্ত থেকে।
৮. কংকর সাতটার চেয়ে কম মারা।
৯. প্রথম ও দ্বিতীয় জমরাতে কংকর মারার পর দুআ' না করা।
১০. শরীয়ত নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে বেশী কংকর মারা। অথবা এক জমরাতে একাধিক বার মারা।
এগার : মিনাতে যে সকল ভুল হয়ে থাকে
১. কোন ওজর ছাড়াই মিনাতে রাত্রি যাপন না করা। মিনাতে অবস্থানের মত জায়গা আছে কি নাই এ ব্যাপারে পরিপূর্ণ খোঁজ-খবর না নিয়ে, নিশ্চিত না হয়ে জায়গা নাই বলে মক্কায় বা আযীযিয়াতে রাত্রি কাটানো।
২. ১২ জিলহজ্জ সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ার আগেই মিনা থেকে বেরিয়ে যাওয়া।
প্রিয় দ্বীনি ভাই, পরিশেষে বলতে চাই একটা বিষয়ে হাজীদের অনেকেই যথাযথ সর্তকতা অবলম্বন করেন না। তা হল- হালাল রুজি দিয়ে হজ্জব্রত পালন করা। আপনি দেখবেন যে হারাম উপার্জন দিয়ে তিনি হজ্জ করতে এসেছেন। অথচ তিনি ভুলে যান
إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّباً.
((নিশ্চয় আল্লাহ্ পবিত্র। তিনি একমাত্র পবিত্রটাই গ্রহণ করেন।))
আবার কাউকে কাউকে দেখা যায়, হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়া মাত্র পরিবার-পরিজনের জন্য যতসব হারাম জিনিস-পত্র কেনায় ব্যস্ত হয়ে যান। যেমন, গানের ক্যাসেট, সিডি, বিভিন্ন বাদ্য-যন্ত্র হাবিজাবি সব। নিঃসন্দেহে এ ধরণের কাজ আল্লাহর নেয়ামতের নাশুকরী এবং এ ব্যক্তির হজ্জ কবুল না হওয়ার আশংকা হয়। সুতরাং হালাল-রুজি দিয়ে হজ্জ আদায় করুন, এবং পরিবার-পরিজনের জন্য এমন কিছু খরিদ করুন যা তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে উপকারে আসবে। যেমন, ভাল দ্বীনি বই, তেলাওয়াতের বা কোন ইসলামী আলোচনার ক্যাসেট।
তৃতীয় চিঠি
প্রিয় দ্বীনি ভাই,
আল্লাহ্ আপনাকে যাবতীয় গোনাহ্ থেকে হেফাজত করুন। জেনে রাখুন শয়তান মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য বদ্ধপরিকর। আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনের অনেক জায়গায় শয়তানের সে সকল ঔদ্যত্বপূর্ণ বাণী উদ্ধৃত করেছেন। যেমন,
) وَقَالَ لَأَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيباً مَفْرُوضاً)(النساء: من الآية118)
((সে বলল আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করে নিব।)) [সূরা আন্-নিসাঃ ১১৮] অন্য জায়গায় এসেছে,
)قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ) (لأعراف:16)
)ثُمَّ لَآتِيَنَّهُمْ مِنْ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَنْ شَمَائِلِهِمْ وَلا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ) (لأعراف:17)
((সে বলল, 'তুমি আমাকে শাস্তিদান করলে, এইজন্য আমিও তোমার সরল পথে মানুষের জন্য নিশ্চয় ওঁত পেতে থাকব। অতঃপর আমি তাদের নিকট আসব তাদের সম্মুখ, পশ্চাৎ, দক্ষিণ ও বাম দিক থেকে এবং তুমি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবে না।)) [সূরা আল-আ'রাফঃ ১৬, ১৭]
শয়তান এক পা দুই পা করে মানুষকে ভ্রান্ত পথে নিয়ে যায়। যা মানুষ টেরও করতে পারেনা। এজন্য শয়তানের পদাংক অনুসরণ থেকে হুশিয়ার করতে গিয়ে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
)يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَنْ يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَوْلا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَى مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ أَبَداً وَلَكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ) (النور:21)
((হে মু'মিনগণ তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। কেউ শয়তানের অনুসরণ করলে শয়তান তো অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়। আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউ কখনো পবিত্র হতে পারবে না, তবে আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করে থাকেন এবং আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।)) [সূরা আন্-নূরঃ ২১]
শয়তান মানুষকে যে সব ফাঁদে ফেলতে চায় তার মধ্যে সব চেয়ে ভয়াবহ ফাঁদ হচ্ছে শির্ক। কারণ সে জানে আল্লাহ্ তা'আলা শিরকের গোনাহ্ কখনোই মাফ করবেন না। তিনি ইরশাদ করেছেন,
)إِنَّ اللَّهَ لا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْماً عَظِيماً) (النساء:48)
((নিশ্চয় আল্লাহ্ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করবেন না। এটা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন; এবং যে কেউ আল্লাহর শরীক করে সে এক মহাপাপ করে।)) [সূরা আন্-নিসাঃ ৪৮]
শ্রদ্ধাস্পদ মুসলিম ভাই,
জেনে রাখুন শয়তান সরাসরি কোন শির্ক করার আদেশ দেয় না। বরং শির্কের পথ সুগমকারী কিছু কিছু আমলকে সুন্দর মোড়কে উত্থাপন করে মাত্র। শির্কের সূচনা হয় নূহ নবীর উম্মতের মাঝে। তাদের মধ্যে কিছু নেক্কার, পরহেজগার বান্দাহ্ ছিলেন। তাদের মৃতু্যর পর শয়তান এসে প্রস্তাব করল- তোমরা তো এ সকল পূণ্যবানদের কিছু ছবি আঁকতে পার। যেগুলো দেখলে তোমাদের মাঝে ইল্ম ও আমলের স্পৃহা জাগ্রত হবে। তোমরা নব উদ্যমে আমলে লেগে যাবে। তাদের অনর্্তধানের পর নতুন প্রজন্ম এল। শয়তান এসে তাদেরকে বললঃ 'তোমাদের বাপ-দাদারা বিপদ-আপদে সাহায্য চাওয়ার জন্য এসব ছবি গুলো বানিয়েছিল।' এভাবে শয়তান তাদেরকে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য সত্তার ইবাদাতের দিকে নিয়ে যায়।
সাধারণ লোকদের মধ্যে অনেকে এমন কিছু বিষয়ে লিপ্ত হন যা তাদেরকে শির্কের শেষ সীমানায় পৌঁছে দেন; কিন্তু তারা বেখবর। যেমন, এ ধরণের কথা বলা - ((হে আমার পীর হোসাইন)), বা ((হে আমার রুহানী মা যয়নব)), অথবা ((ও বাবা শাহজালাল)), কিংবা ((ও বাবা বায়েজিদ বোস্তামী)), নতুবা ((হে আমার অমুক পীরসাহেব)) আমাকে সাহায্য করুন, আমাকে বাঁচান, আমি আপনার আশ্রয় চাই, আমার রোগ নিরাময় করুন, আমাকে একটা সন্তান দিন, আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিন, আমার শত্রুকে পরাস্ত করার ক্ষমতা দিন, জালেমকে প্রতিহত করার তাওফিক দিন। তদ্রূপ কবরে সিজদা দেয়া, কবরের কাছে নামাজ পড়াকে পূণ্যের কাজ মনে করা, কেবলা বাদ দিয়ে কবরের দিকে ফিরে নামাজ পড়াকে উত্তম জ্ঞান করা, কবরের চতুর্দিকে তাওয়াফ করাকে কাবা-তাওয়াফের চেয়ে বেশী সওয়াবের কাজ বিবেচনা করা। উল্লেখিত সবগুলো আমল শির্ক। অথচ এগুলোকে পূর্ণের কাজ মনে করা হয়।
কিভাবে একজন বিবেকবান মানুষ মৃত ব্যক্তির কাছে সাহায্য চাইতে পারে, আশ্রয় চাইতে পারে?! যদি সে ব্যক্তি নিজের জন্য কিছু করতে পারতেন তবে তো নিজে মরতেন না। এই ওলি বা নেককার লোকটা কি রাসূলের চেয়েও বড় মর্যাদার অধিকারী যাঁর চেয়ে উত্তম মানুষ এই পৃথিবীতে আসে নাই। তাঁকে আল্লাহ্ পাক নির্দেশ দিচ্ছেন,
)قُلْ لا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعاً وَلا ضَرّاً إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ) (لأعراف:188)
((বলুন, 'আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত আমার নিজের ভাল-মন্দের উপরও আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানতাম তবে তো আমি প্রভূত কল্যাণই লাভ করতাম এবং কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো শুধু মুমিন সমপ্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা বৈ আর কিছু নই।)) [সূরা আল-আ'রাফঃ ১৮৮]
আল্লাহ্ তা'আলা অন্যস্থানে বলেছেন,
)قُلْ إِنِّي لا أَمْلِكُ لَكُمْ ضَرّاً وَلا رَشَداً) (الجـن:21)
)قُلْ إِنِّي لَنْ يُجِيرَنِي مِنَ اللَّهِ أَحَدٌ وَلَنْ أَجِدَ مِنْ دُونِهِ مُلْتَحَداً) (الجـن:22)
((বলুন, 'আমি তোমাদের ইষ্ট-অনিষ্টের মালিক নই।' বলুন, 'আল্লাহর শাস্তি হতে কেউ আমাকে রক্ষা করতে পারবে না এবং আল্লাহ্ ব্যতীত আমি কোন আশ্রয়ও পাব না।)) [সূরা জিনঃ ২১, ২২]
রাসূলই যদি নিজের কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক না হন, আল্লাহর শাস্তি হতে কেউ তাকে রক্ষা করতে না পারে তবে আর এমন কে আছে যে অন্যের ইষ্ট-অনিষ্টের অধিকার রাখে। সাবধান! এটা কোন মুসলমানের বিশ্বাস হতে পারে না। বরং এ তো মূর্তিপূজারী মুশরিকদের বিশ্বাস। যাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
)وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لا يَضُرُّهُمْ وَلا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللَّهَ بِمَا لا يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلا فِي الْأَرْضِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ) (يونس:18)
((ওরা আল্লাহ্ ব্যতীত যার ইবাদাত করে তা ওদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। ওরা বলে, 'এগুলো আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।' বল, 'তোমরা কি আল্লাহ্কে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিবে যা তিনি জানেন না?)) [সূরা ইউনুসঃ ১৮]
এরপরও কি কোন মুসলমানের উচিত মুশরিকদের অনুকরণে ওলি-আউলিয়া, পীর-দরবেশের কাছে শাফায়াত চাওয়া?!!
আল্লাহ্ পাক মুশরিকদের প্রসঙ্গে বলেন যে, তারা এই দাবীতে ওলি-আউলিয়া বা প্রতিমাগুলোর পূজা করত যে এরা তাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী ব্যক্তিতে পরিণত করবে।
) وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ إِنَّ اللَّهَ لا يَهْدِي مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ)(الزمر: من الآية3)
((যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা বলে, 'আমরা তো এদের পূজা এজন্য করি যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহর সানি্নধ্যে এনে দিবে।' ওরা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করেছে আল্লাহ্ তার ফয়সালা করে দিবেন। যে মিথ্যাবাদী ও কাফের, আল্লাহ্ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।)) [সূরা আয্-যুমারঃ ৩]
এটা কি কল্পনা করা যায় যে আল্লাহর কালামের উপর বিশ্বাসস্থাপনকারী কোন মুসলিম আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে ওলি-আউলিয়া বা নেককার-পরহেজগারদের উপাসনা করবে, আর মুশরিকদের মত বলবে যে আমরা তো আল্লাহ্কে পাওয়ার জন্য এদেরকে ডাকি?
আল্লাহ্ পাক স্পষ্ট ভাষায় এ সকল বাতিল উপাস্যদের দূর্বলতা ও অক্ষমতা বর্ণনা করে বলেন,
)وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ لا يَسْتَطِيعُونَ نَصْرَكُمْ وَلا أَنْفُسَهُمْ يَنْصُرُونَ) (لأعراف:197)
((আল্লাহ্ ব্যতীত তোমরা যাদেরকে আহ্বান কর তারা তো তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে না এবং তাদের নিজেদেরকে পারে না।)) [সূরা আল-আ'রাফঃ ১৯৭]
আল্লাহ্ পাক নিজে যেখানে ঘোষণা দিচ্ছেন যে, তারা তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে না, বরঞ্চ তারা নিজের জন্যও কিছু করতে পারে না সেখানে কোন বিবেকবান মুসলিম কি এ বিশ্বাস করতে পারে যে তারা তাদেরকে সাহায্য করতে পারে? এরপরও যে বলবেঃ হঁ্যা এরা সাহায্য করতে পারে তবে সে আল্লাহ্কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। আর যে আল্লাহ্কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে সে কাফের। হোক না সে পাক্কা মুসলি্ল, সাচ্চা রোযাদার এবং নিজেকে মুসলিম দাবীদার।
নবীকূল শিরোমনি, রাসূলদের সর্দার, গোটা বনী আদমের যিনি নেতা, যার সুপারিশে কিয়ামতের দিন মহা সংকট থেকে নিস্তার মিলবে, যার উচ্চ মর্যাদার কারণে নবী-রাসূল সবাই তাঁর পতাকা তলে সমবেত হবেন; তিনি যদি তাঁর নিকটাত্মীয়দের জন্য কিছু করতে না পারেন তবে আর কার সাধ্য আছে অন্যের জন্য কিছু করার? একদিন সাফা পাহাড়ে উঠে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বক্তব্য দিয়েছিলেন তা কি আপনি জানেন না? ইমাম বোখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে ইবনু আব্বাস ও আবু হোরায়রা থেকে বর্ণনা করেন তারা বলেন, যখন আল্লাহ্ তা'আলার বাণীঃ
)وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ) (الشعراء:214)
((তোমার নিকট-আত্মীয়বর্গকে সতর্ক কর।)) (সূরা আশ্-শু'আরাঃ ২১৪]
নাযিল হল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে বললেন, 'ও কুরাইশেরা (অথবা কোন সমীপশব্দ) নিজেদের জান নিজেরা খরিদ করে নাও। আল্লাহর শাস্তি থেকে আমি তোমাদেরকে বাঁচাতে পারব না। ও আবদে মানাফের বংশধরেরা, আল্লাহর আযাব থেকে আমি তোমাদেরকে বাঁচাতে পারব না। ও আব্বাস বিন আব্দুল মোত্তালিব, আমি আপনাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচাতে পারব না। ও সাফিয়্যা (রাসূলের ফুফু), আমি আপনাকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে পারব না। ও ফাতেমা (রাসূলের মেয়ে) তুমি আমার কাছে সম্পদ দাবী করতে পার, কিন্তু তোমাকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচানোর জন্য আমি কিছু করতে পারব না।))
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তাঁর আপন চাচা, আপন ফুফুর জন্য কিছু করতে না পারে; এমনকি তাঁর ঔরশজাত মেয়ের জন্যও কিছু করতে না পারে তবে অন্যের জন্য কিভাবে পারবেন?! সুতরাং সাবধান হোন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর চাচা আবু তালেবের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার মনস্থ করলেন -যে চাচা তাঁকে সবসময় সাহায্য করছেন, বিপদে আশ্রয় দিয়েছেন- আল্লাহ্ স্পষ্ট ভাষায় তাঁকে নিষেধ করে দেন।
)مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَى مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ) (التوبة:113)
((আত্মীয়-স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী এবং মু'মিনদের জন্য সংগত নয় যখন এটা সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, নিশ্চিত ওরা জাহান্নামী।)) [সূরা আত্-তাওবাঃ ১১৩]
আল্লাহ্ তা'আলা যখন লক্ষ্য করলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাচার হেদায়েতের জন্য তীব্র আগ্রহী তখন ইরশাদ করলেনঃ
)إِنَّكَ لا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ) (القصص:56)
((তুমি যাকে ভালবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভাল জানেন সৎপথ অনুসারীদেরকে।)) (সূরা আল-কাসাসঃ ৫৬]
প্রিয় মুসলিম ভাই,
যারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য সত্তার কাছে দো'আ করে, সেসব অজ্ঞ-মূর্খ লোকদের কর্মকাণ্ডে বিভ্রান্ত হবেন না।
)وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لا يَمُوتُ وَسَبِّحْ بِحَمْدِهِ وَكَفَى بِهِ بِذُنُوبِ عِبَادِهِ خَبِيراً) (الفرقان:58)
((তুমি নির্ভর কর তাঁর উপর যিনি চিরঞ্জীব, যিনি মরবেন না এবং তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর, তিনি তাঁর বান্দাদের পাপ সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত।)) [সূরা ফুরকানঃ ৫৮]
অতএব একমাত্র আল্লাহর দরবারে ধর্ণা দিন। তাঁর কাছে দো'আ করুন। তাঁর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করুন। অনুনয়-বিনয় একমাত্র তাঁর কাছে পেশ করুন। একমাত্র তাঁর কাছে সাহায্য চান। জেনে রাখুন, আল্লাহ্ পাক আপনার অতি নিকটে। তিনি বলেছেন,
)وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ) (البقرة:186)
((আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি তো নিকটেই। আহ্বানকারী যখন আহ্বান করে আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই।)) [সূরা আল-বাকারাঃ ১৮৬]
প্রিয় দ্বীনি ভাই,
আল্লাহ্ আপনাকে হেফাযতে রাখুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আপন চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ বিন আব্বাসকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিলেন 'যদি কিছু চাও তবে একমাত্র আল্লাহর কাছে চাও, সাহায্যের মুখাপেক্ষী হলেও একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। জেনে রাখ, সমস্ত মানুষ যদি তোমার হিতকামনায় ঐক্যবদ্ধ হয় তবুও তারা আল্লাহর লিপির বাইরে তোমার এক বিন্দুও উপকার করতে পারবে না। আর সমস্ত মানুষ যদি তোমার দুশমনি করার জন্য ঐকমত্যে পৌঁছে, তবুও তারা আল্লাহর লিপির বাইরে তোমার এক চুলও ক্ষতি করতে পারবে না। কলম তুলে রাখা হয়েছে। লিখিত-লিপি শুকিয়ে গেছে। এরপরও কি আর কোন যুক্তি-প্রমাণ থাকতে পারে? আল্লাহ্ ও আল্লাহর রাসূলের কথার উপরে কি আর কোন কথা থাকতে পারে?
আত্মার আত্মীয় দ্বীনি ভাই,
এমন কিছু দো'আ আছে যেগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবাদের শিক্ষা দিতেন। যেগুলো ব্যাপক অর্থবহ এবং অধিক কল্যাণবাহী। এ দো'আগুলো সকলেরই মুখস্থ থাকা উচিত এবং এর চাহিদা মাফিক আমল করা উচিত। নিম্নে এ ধরণের কিছু দো'আ উল্লেখ করার প্রয়াস পাব।
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ ِمنْ جَهْدِ الْبَلَاِء، وَدَرَكِ الشَّقَاءِ، وَسُوْءِ الْقَضَاءِ، وَشَمَاتَةِ الْأَعْدَاءِ.
((হে আল্লাহ্, আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যাবতীয় বিপদআপদ থেকে , অশুভ পরিণতি থেকে, মন্দভাগ্য থেকে, এবং শত্রুর ঠাট্টা-বিদ্রূপ থেকে।))
اللهم أصلح لي ديني الذي هو عصمة أمري، وأصلح لي دنياي التي فيها معاشي، وأصلح لي آخرتي التي فيها معادي، واجعل الحياة زيادة لي في كل خير، واجعل الموت راحة لي من كل شر.
((হে আল্লাহ্, আমার দ্বীনদারীকে পরিশুদ্ধ করে দিন। যার উপর নির্ভর করে আমার সবকিছুর শুদ্ধতা। দুনিয়াকে আমার জন্য উপযোগী করে দিন। যেখানে রয়েছে আমার জীবিকার উপকরণ। আখেরাতকে আমার জন্য শুভময় করুন। যেখানে আমাকে ফিরে যেতেই হবে। আমার হায়াতকে নেক কাজে লাগাবার তাওফিক দিন। আর মৃতু্যকে যাবতীয় কষ্ট-ক্লেশ থেকে নাজাতের ওসিলা করে দিন।))
اللهم إني أسألك من الخير كله: عاجله وآجله ما علمتُ منه وما لم أَعْلَمْ، وأعوذ بك من الشر كله: عاجله وآجله ما علمتُ منه ومَا لَمْ أَعْلَمْ، اللهم إني أسألك من خير ما سألك منه عبدك ونبيك صلى الله عليه وسلم، وأعوذ بك من شر ما استعاذ منه عبدك ونبيك -صلى الله عليه وسلم- .اللهم إني أسألك الجنة وما قرب إليها من قول أو عمل، وأعوذ بك من النار وما قرب إليها من قول أو عمل، وأسألك أن تجعل كل قضاء قضيته لي خيرا.
((হে আল্লাহ্, আমি আপনার কাছে সমুদয় কল্যাণ চাই। তা নিকটে হোক অথবা দূর ভবিষতে হোক, তা আমার জ্ঞান-সীমায় থাকুক অথবা না থাকুক। এবং আমি সমুদয় অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চাই। তা নিকটে হোক অথবা দূর ভবিষতে হোক, আমার জ্ঞান-সীমায় থাকুক অথবা না থাকুক। আপনার বান্দাহ, আপনার নবী আপনার কাছে যে কল্যাণ প্রার্থনা করেছেন আমিও আপনার কাছে সে কল্যান প্রার্থনা করি। আপনার বান্দাহ্, আপনার নবী যে অনিষ্ট থেকে পানাহ্ চেয়েছেন আমিও তা থেকে পানাহ্ চাই। হে আল্লাহ্, আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জান্নাতের পথ সুগমকারী কথা ও কাজ করার তাওফিক চাই। আর জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই এবং জাহান্নামের পথে ধাবিতকারী কথা ও কাজ থেকে মুক্তি চাই। আমি আপনার কাছে আরো আবদার করছি আমার জন্য যা কিছু নির্ধারণ করেছেন সবই যেন কল্যাণকর হয়।))
اللهم احفظني بالإسلام قائما، وبالإسلام قاعدا، واحفظني بالإسلام راقدا، ولاتشمت بي عدوا ولاحاسدا، اللهم إني أسألك كل خير خزائنه بيدك، وأعوذ بك من كل شر خزائنه بيدك.
((হে আল্লাহ্, দাঁড়ানো, বসা, শোয়া সর্বাবস্থায় ইসলামের দ্বারা আমাকে হেফাযত করুন। আমাকে শাস্তি দিয়ে শত্রু বা নিন্দুকের হাসির খোরাক বানাবেন না। হে আল্লাহ্, আমি আপনার কাছে সমুদয় কল্যাণ কামনা করি; যার ভাণ্ডার আপনার হাতেই রয়েছে এবং যাবতীয় অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থণা করি; যার ভাণ্ডারও আপনার হাতে রয়েছে।))
اللهم إني أسألك يا ألله بأنك الواحد الأحد، الصمد الذي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ أن تغفر لي ذنوبي إنك أنت الغفور الرحيم.
((হে আল্লাহ্! আপনি এক ও অদ্বিতীয়। আপনি অমুখাপেক্ষী। আপনি কাউকে জন্ম দেননি, কারো ঔরশজাতও নন। আপনার সমতুল্য কেউ নেই। আমি আপনার কাছেই প্রার্থনা করছি। আমার যাবতীয় গোনাহ্ মাফ করে দিন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।))
اللهم إني أسألك بأن لك الحمد لا إله إلا أنت وحدك لا شريك لك، المنان، يا بديع السماوات والأرض يا ذا الجلال والإكرام، يا حي يا قيوم أسألك الجنة وأعوذ بك من النار.
((হে আল্লাহ্, সকল প্রশংসা আপনারই জন্য। আপনি ছাড়া ইবাদাতের উপযুক্ত কোন উপাস্য নেই। আপনি এক, আপনার কোন শরীক নেই, আপনি অনুকম্পাকারী। হে আকাশ ও জমিনের স্রষ্টা, হে মহিমাময় ও মহানুভব, হে চিরঞ্জীব ও সর্বসত্তার ধারক, আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই, জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই।))
اللهم إني أعوذ بك من زوال نعمتك وتحول عافيتك، وفجاءة نقمتك، وجميع سخطك.
((হে আল্লাহ্, আমি আপনার নেয়ামতের অনর্্তধান থেকে ও ক্ষমার নামঞ্জুরি থেকে আশ্রয় চাই। এবং আকস্মিক শাস্তি থেকে ও যাবতীয় অসন্তুষ্টি থেকে পানাহ্ চাই।))
যদি আপনি কোন দুঃশ্চিন্তায় পড়েন বা বিপদগ্রস্ত হন তবে নিম্নোক্ত দো'আটি পড়তে পারেন।
لا إله إلا الله العظيم الحليم، لا إله إلا الله رب العرش العظيم، لا إله إلا الله رب السماوات ورب الأرض ورب العرش الكريم.
((আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন মা'বুদ নেই। তিনি অতি মহান; সহনশীল। আল্লাহ্ ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য কোন মা'বুদ নেই। তিনি মহান আরশের মালিক। আল্লাহ্ ছাড়া ইবাদাতের উপযুক্ত কোন মা'বুদ নেই। তিনি আকাশ-জমিন ও মহান আরশের প্রতিপালক।))
يا حي يا قيوم برحمتك أستغيث فأصلح لي شأني كله ولا تكلني إلى نفسي طرفة عين.
((হে চিরঞ্জীব, হে সর্বসত্তার ধারক, আপনার রহমতের ওসিলা দিয়ে আমি সকাতর নিবেদন করছি- আমার অবস্থা পরিবর্তন করে দিন। এক মুহূর্তের জন্যও আমাকে আমার নিজের উপর ছেড়ে দিবেন না।))
) لا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ)(الانبياء: من الآية87)
((তুমি ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই; তুমি পবিত্র, মহান! আমি তো সীমালংঘনকারী।)) [সূরা আম্বিয়াঃ ৮৭]
اللهم إني عبدك، وابن عبدك، وابن أمتك، ناصيتي بيدك، ماض في حكمك، عدل في قضاؤك، أسألك بكل اسم هو لك، سميت به نفسك، أو أنزلته في كتابك، أو علمته أحدًا من خلقك، أو استأثرت به في علم الغيب عندك: أن تجعل القرآن ربيع قلبي، ونور صدري ، وجلاء حزني، وذهاب همي.
((হে আল্লাহ্, আমি আপনার বান্দা এবং আপনারই বান্দা-বান্দীর পুত্র। আমার ভাগ্য আপনার হস্তে, আমার উপর আপনার নির্দেশ কার্যকর, আমার ব্যাপারে আপনার ফয়সালাই ইনসাফপূর্ণ। আপনার যতগুলো নাম আছে আমি সবগুলো নামের ওসিলা দিয়ে আপনার কাছে দো'আ করছি- যে নামগুলো আপনি নিজের জন্য পছন্দ করেছেন, অথবা কিতাবে নাযিল করেছেন, অথবা আপনার সৃষ্টিজীবের কেউ একজনকে শিক্ষা দিয়েছেন অথবা স্বীয় ইলমের ভাণ্ডারে নিজের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন- কুরআন দ্বারা আমার হৃদয়কে প্রশান্ত করে দিন, বক্ষকে জ্যোর্তিময় করে দিন। কুরআনের মাধ্যমে আমার দুঃখ-বেদনা দূর করুন, আমাকে দুশ্চিন্তা-মুক্ত করুন।))
اللهم إني أسألك العافية في الدنيا والآخرة، اللهم إني أسألك العفو والعافية في ديني ودنياي وأهلي ومالي، اللهم استر عوراتي وآمن روعاتي، اللهم احفظني من بين يدي ومن خلفي وعن يميني وعن شمالي ومن فوقي، وأعوذ بعظمتك أن أغتال من تحتي.
((হে আল্লাহ্, আমি আপনার নিকট ইহকাল ও পরকালের নিরাপত্তা কামনা করি। হে আল্লাহ্, আমাকে দ্বীন ও দুনিয়ার নিরাপত্তা দিন। হে আল্লাহ্, আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি মার্জনার আর কামনা করছি আমার দ্বীন-দুনিয়া, আমার পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্ততির নিরাপত্তা। হে আল্লাহ্, আমার দোষগুলোকে ঢেকে রাখুন, চিন্তা ও উদ্বিগ্নতাকে শান্তি ও নিরাপত্তায় রূপান্তরিত করে দিন। হে আল্লাহ্, অগ্র-পশ্চাত, ডান-বাম, উর্ধ এসব দিক থেকে আমাকে আপনার হেফাজতে রাখুন এবং পায়ের দিক থেকে গুপ্ত হত্যার শিকার হওয়া থেকেও আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই।))
চতুর্থ চিঠি
প্রিয় পাঠক,
আপনি নিশ্চয় আমার সাথে সাক্ষ্য দিবেন যে, আমাদের নবী, আমাদের প্রিয়পাত্র মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দাহ্ ও রাসূল। আল্লাহ্ তাঁকে জগতবাসীর জন্য রহমতসরূপ প্রেরণ করেছেন। তাঁকে মুত্তাকীদের ইমাম বানিয়ে এবং সমস্ত সৃষ্টিকূলের উপর সাক্ষী বানিয়ে পাঠিয়েছেন। তিনি তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। আল্লাহর বাণী প্রচার করেছেন, উম্মতকে নসীহত করেছেন। আমাদেরকে এমন এক সরল-সোজা, আলোকোজ্জ্বল পথে রেখে গেছেন যে পথে দিবা-নিশি সমান। একমাত্র দুর্ভাগাই এই পথ থেকে বিচু্যত হতে পারে। আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর মাধ্যমে হেদায়েতের দিশা দিয়েছেন, অন্ধত্ব দূর করেছেন। আল্লাহ্ তাঁর খ্যাতিকে সমুন্নত করেছেন, তাঁর অন্তর খুলে দিয়েছেন, তাঁর কাঁধ থেকে যাবতীয় বোঝা অপসারণ করেছেন। অন্যদিকে তাঁর নির্দেশ লঙ্ঘনকারীর জন্য লাঞ্ছনা ও অবমাননা অনিবার্য করে দিয়েছেন। অতএব তাঁর উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। অনুরূপভাবে তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবাদের উপরও আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। তদ্রূপ কেয়ামত পর্যন্ত তাঁর সকল অনুসারী, অনুগামী ও তাঁর দ্বীন প্রচারকের উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।
তাঁর আনুগত্য করা, তাঁকে ভালবাসা আল্লাহ্ তা'আলা বান্দার উপর ফরজ করে দিয়েছেন। তাঁকে শ্রদ্ধা করা, সম্মান করা ও তাঁর অধিকার আদায় করাও ফরজ। তবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্যই বা কি? নিঃসন্দেহে আমাদের উপর তাঁর অনেক অধিকার রয়েছে। যেমন-
এক : তাঁর প্রতি বেশী বেশী দরূদ পড়া। আল্লাহ্ তা'আলা ঘোষণা দিয়েছেন,
)إِنَّ اللَّهَ وَمَلائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيماً) (الأحزاب:56)
((আল্লাহ্ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং ফিরিশ্তাগণও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম কর। নবী করিম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার সালাত পড়ে (রহমত কামনা করে) আল্লাহ্ তাঁর প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন।))
প্রিয় দ্বীনি ভাই,
জেনে রাখুন, রাসূলের প্রতি সালাত-সালাম পেশ করার সর্বোত্তম পদ্ধতি তা, যা তিনি নিজে তাঁর সাহাবাদেরকে শিখিয়ে গেছেন। বোখারী ও মুসলিমে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবাদের বললেনঃ তোমরা বল,
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ.
((হে আল্লাহ্, তুমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশধরদের রহমত বর্ষণ কর; যেমনটি বর্ষণ করেছিলে ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর বংশধরদের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানিত। এবং তুমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশধরদের প্রতি বরকত নাযিল কর যেভাবে বরকত নাযিল করেছিলে ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর বংশধরদের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানিত।))
দুই : একনিষ্ঠভাবে অন্তর থেকে তাঁকে ভালবাসা এবং সকল ভালবাসার উপরে তাঁর ভালবাসাকে প্রাধান্য দেয়া। তিনি বলেছেন,
لايؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من ولده ووالده و الناس أجمعين.
((তোমাদের কেউ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও অন্য সকল মানুষের চেয়ে প্রিয় না হই।))
আর তাঁর ভালবাসার অন্যতম প্রমাণ হল তাঁকে অনুসরন করা। তাঁর আদব-আখলাকে নিজেকে সুশোভিত করা। সকল পথ ও মতের উপরে তাঁর সুন্নাহকে অগ্রর্ািধকার দেয়া। তাঁর নিষেধকৃত যাবতীয় সবকিছু থেকে বিরত থাকা।
তিন : তাঁর নির্দেশ পালন করা, নিষেধ থেকে বিরত থাকা, এবং তাঁর আনীত সংবাদে বিশ্বাস স্থাপন করা। আল্লাহ্ তা'আলা ইরশাদ করেছেন,
) وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ)(الحشر: من الآية7)
((রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক এবং তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর; আল্লাহ্ তো শাস্তি দানে কঠোর।))[সূরা হাশরঃ ৭]
আল্লাহ্ তা'আলা অন্যত্র বলেছেন,
)قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ) (آل عمران:31)
((বল, 'তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভালবাস তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ্ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।)) [সূরা আলে-ইমরামঃ ৩১]
আল্লাহ্ তা'আলা আরো বলেনঃ
)لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيراً) (الأحزاب:21)
((তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ্ ও আখিরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহ্কে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।)) [সূরা আল-আহযাবঃ ২১]
চার : রাসূলের সুন্নাহর কাছে ফয়সালা চাওয়া এবং কোনরূপ বৈরীভাব প্রকাশ না করে তাঁর রায়ে সন্তুষ্ট থাকা। আল্লাহ্ তা'আলা বলছেন,
)فَلا وَرَبِّكَ لا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجاً مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيماً) (النساء:65)
((কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মু'মিন হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার ভার তোমার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বদ্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে লয়।)) [সূরা আন্-নিসাঃ ৬৫]
পাঁচ : একমাত্র তাঁর আনীত শরীয়ত মোতাবেক আমরা আল্লাহর ইবাদাত করবো। নানা যুক্তি প্রমাণ, খেয়াল-খুশি, ব্যক্তি-স্বার্থ, বাপ-দাদার রসম-রেওয়াজ অথবা বিদআত দ্বারা প্রভাবিত হব না। বরং বিশুদ্ধ সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে যা প্রমাণিত হয়েছে সে অনুযায়ী আমল করবো। যেহেতু তিনিই আল্লাহর বাণীবাহক। নিঃসন্দেহে তিনি আমানতদারির সাথে আল্লাহর রিসালাহ পৌঁছে দিয়েছেন। উম্মতকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। যা কিছু কল্যাণকর তিনি তার নির্দেশনা দিয়েছেন, যা কিছু ক্ষতিকর তা থেকে তিনি সতর্ক করেছেন। (আমাদের পিতা-মাতা তার জন্য উৎসর্গ হোক।) আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর মাধ্যমে নেয়ামতকে পূর্ণ করেছেন, দ্বীনকে কামেল ঘোষণা করেছেন। অতএব একমাত্র তাঁর শরীয়তেই রয়েছে প্রভূত কল্যাণ। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
) الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْأِسْلامَ دِيناً )(المائدة: من الآية3)
((আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাংগ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য একমাত্র দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।)) [সূরা আল-মায়েদাঃ ৩]
পঞ্চম চিঠি
প্রিয় হাজী ভাই,
আল্লাহ্ আপনাকে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে সম্মানিত করুন। আপনি কি জানেন বর্তমান বিশ্বের সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে, বিজাতিদের সর্বগ্রাসী আক্রমণে এবং সকল কুফরী শক্তির দরাজ কণ্ঠের প্রকাশ্য শত্রুতাময় পরিস্থিতিতে মুসলিম জাতির যে বিষয়গুলোকে সবচেয়ে গুরুত্বের সাথে দেখা দরকার, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- আকীদা; যাকে নির্মল, পরিপাটি ও বিশুদ্ধ করা দরকার। কেননা, সঠিক আকী্বদাই মুসলিম জাতিকে অন্য সকল জাতি থেকে বিশেষত্ব দিয়েছে এবং কাফের-মুশরিকদের মধ্যে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছে। সঠিক আক্বীদাই হতে পারে মুসলিম ঐক্যের মূলমন্ত্র এবং শত্রুর যাবতীয় শত্রুতাকে পরিহত করার ধারলো অস্ত্র। একমাত্র আকীদার মাধ্যমে শত্রুর যাবতীয় ষড়যন্ত্রের সঠিক রূপরেখা উপলব্দি করা সম্ভব। অতএব আকীদাই হলো মুসলিম উম্মাহর বিশেষত্ব।
আকীদার যে দিকটির উপর মুসলিম উম্মাহ্র অস্তিত্ব নির্ভরশীল, যা কুফরী জাতীয়তায় বিলীন হওয়া থেকে উম্মাহ্কে রক্ষা করে এবং উম্মাহ্র ঐক্য ও সংহতিকে মজবুত রাখে তা হল - 'বাবুল ওলা ওয়াল বারা' তথা ((বন্ধুত্ব এবং শত্রুতার অধ্যায়))। (এর দ্বারা উদ্দেশ্যে হল, একজন মুমিন তার বন্ধু বা শত্রু নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কি নীতিমালা অবলম্বন করবে তার নির্দেশনা।) আর এই আকীদাটি মুসলিম জীবন থেকে মুছে ফেলার জন্য শত্রুরা সব ধরণের মিডিয়ার মাধ্যমে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা কিভাবে এই আকীদাকে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করবে, অথচ আল্লাহ্ তা'আলা প্রতিদিন অন্ততঃ সতের বার ইয়াহূদী এবং খৃষ্টানদের নীতি থেকে তাঁর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ.
((সূরা ফাতেহা পাঠ করা ছাড়া কোন নামাজ নেই।)) আপনি কি মনে করেন যে, মুসলিম সমাজগুলোর উপর সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কারণে খুব শীঘ্র এই আকীদা বিলীন হয়ে যাবে? অথচ তারা প্রতিটি দিন-রাতে পাঠ করছেঃ
)اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ) (الفاتحة:6)
)صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلا الضَّالِّينَ) (الفاتحة:7)
((আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন; তাদের পথ যাদেরকে আপনি নেয়ামত দান করেছেন, তাদের পথ নয় যারা আপনার অভিশাপ প্রাপ্ত এবং যারা পথভ্রষ্ট।)) অর্থাৎ, তাদের পথ নয় যাদের উপর অভিসম্পাত পতিত হয়েছে। আর তারা হচ্ছে ইয়াহূদীরা। কেননা তাদের কাছে ইলম ছিল, কিন্তু তারা ইলম অনুযায়ী আমল করেনি। আর তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট, তারা হচ্ছে খৃষ্টান সমপ্রদায়। যারা আল্লাহর ইবাদাত করেছে অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতার মধ্য দিয়ে।
প্রত্যেক মুসলিমের সামনে মহাগ্রন্থের যে আয়াতগুলো রয়েছে, তা সকল মুসলিমকে কোন কাফেরের প্রতি কোন রকম আস্থা, ঝোঁক ও বিশ্বাস স্থাপন করা থেকে সতর্ক করে দিচ্ছে, তাদের সাথে কারো সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা; চাই তার কুফরী যে রকমই হোক না কেন। কুরআনে-কারীম 'একক সত্তার ইবাদাত' এবং 'বন্ধুত্ব ও শত্রুতা' বিষয়ে প্রতিটি দিক থেকে বিশদ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা পেশ করেছে। যার ফলে পূর্ববর্তী মুসলিম সমাজ তার সব ধরণের কাজ-কর্মে, সর্ব পরিস্থিতিতে ছিল এক দেহের ন্যায়। কাফেরের প্রতি তাদের কোন আস্থা ছিল না। তাদের সংবাদ, প্রতিশ্রুতি, অঙ্গিকার বা কথা-বার্তায় তারা বিশ্বাস করত না। আর যখনি 'বন্ধুত্ব ও শত্রুতার আকীদা' দূর্বল হয়ে পড়ে বা সমূলে হারিয়ে যায় এবং মানুষের মাঝে এ বিষয়ে অজ্ঞতা বিরাজ করে তখনি তারা তাদের শত্রুদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে তাদের উপর নেমে আসে নিকৃষ্টতম আযাব, তাদের সম্মান ও মর্যাদা ধুলায় ভুলুন্ঠিত হয়। এ রকম পরিস্থিতিতে আলেমসমাজ জেগে উঠেন- বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে জাতিকে হুশিয়ার করেন, ইলম ছড়িয়ে দেন এবং সন্দেহ-সংশয়ের জবাব দেন। এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আলেমরা যা উল্লেখ করে থাকেন তার কিছু নিম্নে পেশ করার প্রয়াস পাব।
এক : মুসলিম আল্লাহর কিতাবে পাঠ করেন যে, মুসলিমদের ব্যাপারে কাফেরদের অবস্থান দু'টি। হয় তাকে নিকৃষ্টভাবে হত্যা করবে অন্যথায় তাকে তার দ্বীন থেকে ফিরিয়ে আনবে। এর বাইরে অন্য কিছু না।
)إِنَّهُمْ إِنْ يَظْهَرُوا عَلَيْكُمْ يَرْجُمُوكُمْ أَوْ يُعِيدُوكُمْ فِي مِلَّتِهِمْ وَلَنْ تُفْلِحُوا إِذاً أَبَداً) (الكهف:20)
((যদি তারা তোমাদের উপর বিজয়ী হয়, তাহলে তোমাদের হত্যা করবে অথবা তাদের ধর্মে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিবে, তাহলে তোমরা কখনোই সফল হবে না।)) [সূরা আল-কাহ্ফঃ ২০]
দুই : সতর্ক মুসলিম মানেই একথা জানেন যে, কাফেররা আমাদের হত্যা এবং কষ্ট দিতে বদ্ধপরিকর আর তারা ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তিবোধ করবে না যতক্ষণ না আমাদেরকে আমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে না দিবে যদি তারা পারতো। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
)َ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّى يَرُدُّوكُمْ عَنْ دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا وَمَنْ يَرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُولَئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ)(البقرة: من الآية217)
((তারা তোমাদেরকে হত্যা করতেই থাকবে যতক্ষণ না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে না দিবে যদি তারা তা পারতো। আর তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি তার দ্বীন থেকে ফিরে যাবে এবং কাফের অবস্থায় মৃতু্যবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের আমলসমূহ ধ্বংস হয়ে গেল। আর তারাই হচ্ছে জাহান্নামবাসী এবং তারা সেখানে সর্বদাই থাকবে।)) [সূরা আল-বাকারাহঃ ২১৭]
তিন : ইয়াহূদী এবং খৃষ্টানদের জন্য আপনি যতই হীন হন না কেন এবং নিজের অধিকার ত্যাগ করে তাদের সন্তুষ্টির যতই চেষ্টা করুন না কেন এবং যতই অপদস্থতা ও অপমানকে মেনে নেন না কেন এবং তাদের প্রতিটি ইচ্ছাই পূরণ করুন না কেন, তবুও তারা কখনোই আপনার উপর সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করবেন। এবং নিজ দ্বীন, আকীদা ও স্বজাতি থেকে পৃথক না হবেন। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
)وَلَنْ تَرْضَى عَنْكَ الْيَهُودُ وَلا النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ )(البقرة: من الآية120)
((ইয়াহূদী ও খৃষ্টানরা কখনোই আপনার উপর সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করবেন।)) [সূরা আল-বাকারাহঃ ১২০]
চার : তারা আমাদের প্রতি যতই মমত্ববোধ, ভালবাসা এবং অধিকার সংরক্ষণের আগ্রহ দেখাক না কেন, এসব তাদের বেলায় শুধুমাত্র মৌখিক। অন্যদিকে তাদের অবস্থা এবং অন্তরসমূহ আমাদের শত্রুতায় বদ্ধ পরিকর। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
)ً يُرْضُونَكُمْ بِأَفْوَاهِهِمْ وَتَأْبَى قُلُوبُهُمْ وَأَكْثَرُهُمْ فَاسِقُونَ)(التوبة: من الآية8)
((তারা তাদের মুখ দিয়ে তোমাদের সন্তুষ্ট করে আর তাদের অন্তরসমূহ তা অস্বীকার করে, আর তাদের অধিকাংশ ব্যক্তিই ফাসেক।)) [সূরা আত্-তাওবাহঃ ৮]
পাঁচ : তারা আমাদের ক্ষতি করতে প্রচেষ্টার কোন ত্রুটি করে না। যখন আমাদের উপর কোন অনিষ্ট বা বিপদাপদ পৌঁছে, তখন এটাই হয় তাদের আনন্দ, খুশি এবং ভালবাসার উদ্দেশ্য। তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণকারী দেখতে পাবে যে, কেবল তাদের মৌখিক প্রকাশ আর তাদের অন্তর যা গোপন করে তা অত্যন্ত জঘন্য। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
)يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِنْ دُونِكُمْ لا يَأْلُونَكُمْ خَبَالاً وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآياتِ إِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُونَ) (آل عمران:118)
((হে ঈমানদারগণ, তোমরা তোমাদের ব্যতীত অন্য কাউকে সঙ্গী-সাথী হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের ক্ষতি করতে ছাড়বে না। তারা তোমাদের কষ্ট দিতে চায় আর তাদের মুখ থেকে শত্রুতা প্রকাশ পেয়েছে আর তাদের অন্তর যা গোপন করে তা অতি জঘন্য। আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বর্ণনা করে দিয়েছি; যদি তোমরা বুঝতে পার।)) [সূরা আলে-ইমরানঃ ১১৮]
আল্লাহ্ তা'আলা আরো বলেনঃ
)إِنْ تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِنْ تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوا بِهَا وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئاً إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ) (آل عمران:120)
((যদি তোমাদের কারো কল্যাণ সাধিত হয়, তা তাদের কষ্ট দেয়, আর যদি তোমাদের কোন অনিষ্ট হয়, তাতে তারা খুশি হয়। যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং আল্লাহ্কে ভয় কর, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ্ তাদের সকল কর্ম বেষ্টনকারী।)) [সূরা আলে-ইমরানঃ ১২০]
আল্লাহ্ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, তারা নির্জনে যখন একে অপরের সাথে মিলিত হয় তখন আমাদের উপর সবচাইতে নিকৃষ্ট কঠিন রাগ ও হিংসা পোষণ করে। আল্লাহ্ বলেনঃ
) وَإِذَا خَلَوْا عَضُّوا عَلَيْكُمُ الْأَنَامِلَ مِنَ الْغَيْظِ )(آل عمران: من الآية119)
((যখন তারা একাকী হয় তখন তোমাদের উপর রাগে নিজেদের আঙ্গুল কামড়ায়।)) [সূরা আলে-ইমরানঃ ১১৯]
আর এটা খুবই পরিচিত বিষয় যে, মানুষ যখন রাগান্বিত হয়, তখন নিজ আঙ্গুল কামড়ায়। কিন্তু তারা যখন রাগান্বিত হয় তখন আমাদের প্রতি তাদের রাগের প্রচণ্ডতার কারণে তাদের সব আঙ্গুলই কামড়ায়।
ছয় : সন্তান-সন্ততি বা আত্মীয়-স্বজনদের বিপদের আশংকা করে কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার যুক্তি অগ্রহণযোগ্য। আল্লাহ্ বলেনঃ
)يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ )(الممتحنة: من الآية1)
((হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার এবং তোমাদের শত্রুকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না এবং তাদের প্রতি ভালবাসা পোষণ করো না।)) [সূরা আল-মুমতাহিনাঃ ১]
অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা যারা মাল এবং সন্তান-সন্তুতির অভিযোগ করে, তাদের উপমা দিয়ে বলেনঃ
)لَنْ تَنْفَعَكُمْ أَرْحَامُكُمْ وَلا أَوْلادُكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَفْصِلُ بَيْنَكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ) (الممتحنة:3)
((কেয়ামতের দিন তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি কোন উপকারে আসবে না; বরং তোমাদের থেকে পৃথক হয়ে যাবে। আর আল্লাহ্ তোমাদের কর্মসমূহ দেখছেন।)) [সূরা আল-মুমতাহিনাঃ ৩]
সাত: কাফেররা যদিও তাদের নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য করে থাকে এবং তাদের মাঝে যুদ্ধ-বিগ্রহও সংঘটিত হয়, কিন্তু এ জাতির বিরুদ্ধে যদি যুদ্ধ করতে হয় তখন তারা একীভুত ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবে। তখন তারা সে বিষয়ে এক জাতিতে পরিণত হবে এবং একে অপরের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পোষণ করবে। আর মুমিনরা যখন পরস্পর ঐক্যবদ্ধ না হবে এবং পরস্পরের বন্ধুত্ব গ্রহণ না করবে তখন তাদের উপর নিপতিত হবে মহাধ্বংস এবং বিরাট পরীক্ষা। আল্লাহ্ বলেনঃ
)وَالَّذِينَ كَفَرُوا بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ إِلَّا تَفْعَلُوهُ تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ كَبِيرٌ) (لأنفال:73)
((আর যারা কুফরী করেছে তারা একে অপরের বন্ধু, তারা যা করে তা হবে দুনিয়ার মধ্যে বিপদ এবং মহাধ্বংস।)) [সূরা আল-আনফালঃ ৭৩]
আট: নিজের অজান্তে ইয়াহূদী বা খ্রীষ্টানে পরিণত হওয়া থেকে সতর্ক থাকা তোমাদের সবার জন্য আবশ্যক। কারণ আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেনঃ
)يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ) (المائدة:51)
((হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু আর তোমাদের যে ব্যক্তি তাদের বন্ধু হবে সে তাদের অন্তভর্ুক্ত হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অত্যাচারী সমপ্রদায়কে হেদায়াত দান করেন না।)) [সূরা আল-মায়েদাঃ ৫১]
মহান আল্লাহ্ পিতা এবং ভাইকেও যেখানে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন যদি তারা কাফের হয়; তাহলে সেখানে কিভাবে অন্যদের গ্রহণ করা যাবে? আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
)يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْأِيمَانِ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ) (التوبة:23)
((হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের পিতা এবং ভাইকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না যদি তারা ঈমানের চেয়ে কুফরকে বেশী ভালবাসে, আর তোমাদের মধ্যে যে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, তারাই হবে অত্যাচারী।)) [সূরা আত্-তাওবাহঃ ২৩]
আল্লাহ্ তা'আলা কাফেরকে ভালবাসা থেকে সতর্ক করেছেন যদিও তারা পিতা বা সন্তান বা ভাই হয়। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
)لا تَجِدُ قَوْماً يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُولَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْأِيمَانَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوحٍ مِنْهُ) (المجادلة:22)
((এমন কোন জাতি পাবে না যারা আল্লাহ্ এবং কেয়ামতের দিবসকে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের শত্রুদের ভালবাসে, যদিও তারা তাদের পিতা বা সন্তান বা ভাই বা আত্মীয় হয়। এরা তারাই যাদের অন্তরে আল্লাহ্ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ্ দ্বারা জোরদার করা হয়েছে।)) [সূরা মুজাদালাহঃ ২২]
সম্মানিত ভাই, জেনে রাখুন, কাফেরদের ভালবাসা, তাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ যেসব আলামত যা আলেমগণ বর্ণনা করেছেন, সেগুলো যেমন-
১) চরিত্র এবং পোষাক এবং অন্যান্য বিষয়ে তাদের সদৃশ হওয়া, কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
من تشبَّه بقومٍ فهو منهم
অর্থাৎ, ((যে ব্যক্তি কোন সমপ্রদায়ের সাদৃশ্যতা গ্রহণ করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে))।
২) মুসলিমদের উপর তাদের সাহায্য-সহযোগিতা, এটা ইসলাম বিরোধিতার মধ্যে একটি এবং ইসলাম ধর্ম ত্যাগের কারণসমূহের মধ্যে একটি।
৩) তাদেরকে বন্ধু বানানো যে বন্ধুত্বের মাধ্যমে তারা মুসলিমদের গোপন খবর নিতে পারে এবং এমনিভাবে তাদেরকে সঙ্গী-সাথী এবং উপদেষ্টা হিসেবে গ্রহণ করা।
৪) তাদের ঈদ এবং আনন্দানুষ্ঠানে শরিক হওয়া বা তাতে সহযোগিতা করা বা তাদের অভিনন্দন জানানো।
((((((কাজ চলছে))))))
পবিত্র হজ্জ মৌসুম এখন, তাই দ্রুত আপলোড করতে হলো। আপাততঃ দৃশ্যমান ভুলগুলোর জন্য দুঃখিত। খুব শীঘ্রই বানান ভুলসহ অন্যান্য এডিটিং সম্পন্ন করবো ইনশাআল্লাহ।
No comments:
Post a Comment