Sunday, January 28, 2007

@=ঈমানের স্তম্ভসমূহ (২)

চতুর্থ স্তম্ভ
الركن الرابع: الإيمان بالرسل
চতুর্থ রুকনঃ রাসূলদের প্রতি ঈমান ।

(১) রাসূল 'আলাইহিমুস্ সালামদের প্রতি ঈমান আনাঃ ইহা ঈমানের রুকন সমূহের একটি রুকন, যার প্রতি ঈমান আনা ছাড়া কোন ব্যক্তির ঈমান পরিপূর্ণ হবেনা।
রাসূলগণের প্রতি ঈমান হলোঃ এ কথার দৃঢ় বিশ্বাস করা যে, আল্লাহর অনেক রাসূল রয়েছে যাদেরকে তিনি তাঁর রিসালাত প্রচার করার জন্য নির্বাচন করেছেন। যারা তাঁদের অনুসরণ করবে, তারা হেদায়াত (সঠিক পথ) পাবে। আর যারা তাঁদের অনুসরণ করবেনা তারা পথভ্রষ্ট হবে। আল্লাহ তাদের নিকট যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তা সুস্পষ্ট ভাবে প্রচার করেছেন। তারা অর্পিত আমানত আদায় করেছেন, এবং স্বীয় উম্মাতকে কল্যাণের উপদেশ দিয়েছেন। তাঁরা আল্লাহর পথে যথাযথ জিহাদ করেছেন। এবং যা সহ প্রেরিত হয়েছেন তার কোন অংশ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও গোপন না করে স্বজাতির উপর হুজ্জাত (পক্ষ-বিপক্ষের দলীল) কায়েম করেছেন। আল্লাহ যে সকল রাসূলদের নাম আমাদের কাছে উল্লেখ্য করেছেন, আর যাদের নাম উল্লেখ্য করেন নাই তাদের সকলের প্রতি আমরা ঈমান আনবো। প্রত্যেক রাসূলই তাঁর পূর্ববর্তী রাসূল আগমনের সুসংবাদ দিতেন এবং পরবর্তী রাসূল পূর্ববতী রাসূলের সত্যায়ন করতেন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ُولُواْ آمَنَّا بِاللّهِ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنزِلَ إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالأسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَى وَعِيسَى وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لاَ نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ
سورة البقرة، الآية:136]]
অর্থঃ ((তোমরা বলঃ আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, এবং তদীয় বংশধরের প্রতি এবং মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীকে তাঁদের পালন কর্তার পক্ষ হতে যা দান করা হয়েছে, তৎসমূদয়ের উপর। আমরা তাঁদের মধ্যে পার্থক্য করিনা। আর আমরা তাঁরই আনুগত্যকারী।)) [সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-১৩৬]
আর যে ব্যক্তি কোন রাসূলকে মিথ্যা জানল, সে যেন অস্বীকার করল যা সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল। এবং যে ব্যক্তি তাঁর (রাসূলের) অবাধ্য হলো, সে মূলত তাঁর অবাধ্য হলো যিনি তাকে আনুগত্যের আদেশ করেছেন। (অর্থাৎ, আল্লাহর)। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُواْ بَيْنَ اللّهِ وَرُسُلِهِ وَيقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُواْ بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلاً - أُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقّاً وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَاباً مُّهِيناً
[سورة النساء، الآيتان:150-151]
অর্থঃ ((যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণকে অস্বীকার করে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য করতে চায় আর বলে যে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি ও কতককে অস্বীকার করি এবং এরাই মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়। প্রকৃত পক্ষে এরাই সত্য অস্বীকারকারী। আর যারা সত্য অস্বীকার কারী তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছি অপমান জনক শাস্তি।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৫০-১৫১]

(২) নবুওয়াতের হাকীকতঃ নবুওয়াত হলোঃ স্রষ্টা (আল্লাহ) ও সৃষ্টজীবের (বান্দার ) মাঝে তাঁর শরিয়াত প্রচারের মাধ্যম। আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা নবুওয়াতের জন্য মনোনীত করেন এবং নবুওয়াত দিয়ে সম্মানিত করেন। এতে আল্লাহ্ ছাড়া কারো কোন প্রকার ইখতিয়ার নেই। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
اللَّهُ يَصْطَفِي مِنَ الْمَلَائِكَةِ رُسُلاً وَمِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ
[سورة الحج، الآية:75]
অর্থঃ ((আল্লাহ ফিরিশতা ও মানুষের মধ্য থেকে রাসূল মনোনীত করেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।)) [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত-৭৫] নবুওয়াত (আল্লাহ কতৃর্ক) প্রদত্ত,কারো অর্জিত নয়, অধিক ইবাদাত বা আনুগত্যের মাধ্যমে পাওয়া যায় না। কোন নবীর ইচ্ছায় বা তাঁর চাওয়ার মাধ্যমে ও আসেনা। ইহা শুধু মাত্র মহান আল্লাহর নির্বাচন ও মনোনয়ন। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
اللَّهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَن يُنِيبُ
[سورة الشورى، الآية:13]
অর্থঃ ((আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমূখী হয়, তাকে পথ প্রদর্শন করেন।)) [সূরা আশ্-শূরা,আয়াত-১৩]

(৩) রাসূল প্রেরণের হিকমত বা রহস্যঃ রাসূলগণের (আলাইহিমুস্ সালাম) প্রেরণের হিকমত বা রহস্য নিম্নরূপঃ
প্রথমতঃ বান্দাদেরকে বান্দার ইবাদাত করা হতে মুক্ত করে বান্দার প্রতিপালকের (আল্লাহর) ইবাদাতে নিয়ে যাওয়া এবং সৃষ্টিজীবের দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্ত করে স্বীয় প্রতিপালকের (আল্লাহর) স্বাধীন ইবাদাতের পথ দেখানো। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
[سورة الأنبياء، الآية:107]
অর্থঃ ((আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।)) [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত-১০৭]
দ্বিতীয়তঃ যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ সৃষ্টিজীব সৃষ্টি করেছেন, সে উদ্দেশ্যের সাথে (মানুষকে) পরিচয় করা। সে উদ্দেশ্য হলো তাঁর একত্ববাদ বিশ্বাস ও ইবাদাত করা। ইহা এক মাত্র রাসূলগণের মাধ্যমে জানা যায়। যাদেরকে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টজীব হতে মনোনয়ন করেছেন এবং সকলের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ
[سورة النحل، الآية:36]
অর্থঃ ((আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগূত (আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদাত) থেকে নিরাপদ থাক।)) [সূরা আন-নহল,আয়াত-৩৬]
তৃতীয়তঃ রাসূলগণ প্রেরণের মাধ্যমে মানুষের উপর হুজ্জাত (পক্ষ-বিপক্ষের দলীল) প্রতিষ্ঠিত করা। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃرُّسُلاً مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِئَلاَّ يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ وَكَانَ اللّهُ عَزِيزاً حَكِيماً
[سورة النساء، الآية:165]
অর্থঃ ((সুসংবাদদাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণের পরে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করার মত কোন অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে, আল্লাহ পরাক্রমশীল, প্রজ্ঞাময়।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৬৫]
চতুর্থতঃ কিছু অদৃশ্যের বিষয় বর্ণনা করা, যা মানুষ তাদের জ্ঞান দ্বারা উপলদ্ধী করতে পারেনা। যেমন-আল্লাহর নাম সমূহ ও তাঁর গুনসমূহ এবং ফিরিশতাদের ও শেষ দিবস সম্পর্কে জানা ইত্যাদি।
পঞ্চমতঃ যাতে তাঁরা (রাসূলরা) অনুসরণীয় উত্তম আদর্শ হয় কেননা আল্লাহ তাঁদেরকে উত্তম চরিত্রে পূর্ণ করেছেন। এবং তাঁদেরকে সংশয় ও প্রবৃত্তির অনুসরণ হতে মুক্ত রেখেছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ُوْلَـئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ
[سورة الأنعام، الآية:90]
অর্থঃ ((তারা এমন ছিলেন, যাদেরকে আল্লাহ পথ-প্রদর্শন করে ছিলেন, অতএব আপনিও তাদের পথ অনুসরণ করুন।)) [সূরা আল-আনআম,আয়াত-৯০] তিনি আরো বলেনঃ
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيهِمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
[سورة الممتحنة، الآية:6]
অর্থঃ ((তোমাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে উত্তম আদর্শ-রয়েছে।)) [সূরা আল-আযহাব, আয়াত-২১]
ষষ্ঠতঃ আত্মশুদ্ধি ও পবিত্র করণ এবং আত্ম বিনষ্টকারী হতে সর্তক-সাবধান করা। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولاً مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
[سورة الجمعة، الآية:2]
অর্থঃ ((তিনি নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠকরেন তাঁর আয়াত সমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষাদেন কিতাব ও হিকমত।)) [সূরা আল-জুমু'আহ, আয়াত-২] রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
إنما بعثت لأتمم مكارم الأخلاق
[رواه أحمد، والحاكم]
অর্থঃ ((আমি উত্তম আদর্শ পরিপূর্ণ করার জন্যেই প্রেরিত হয়েছি।)) [আহমাদ ও হাকেম]

(৪) রাসূলগণের (আলাইহিমুস্ সালাম) দায়িত্ব সমূহঃ রাসূলগণের ( আলাইহিমুস্ সালাম) অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে, তা নিম্নে বর্ণিত হলঃ
(ক) শরীয়াত প্রচার করা, মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদাত করতে এবং তিনি ব্যতীত অন্যের ইবাদাত হতে মুক্ত হওয়ার আহ্বান করা। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
الَّذِينَ يُبَلِّغُونَ رِسَالَاتِ اللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَداً إِلَّا اللَّهَ وَكَفَى بِاللَّهِ حَسِيباً
[سورة الأحزاب، الآية:39]
অর্থঃ ((তাঁরা (নবীগণ) আল্লাহর রিসালাত প্রচার করতেন ও তাঁকে ভয় করতেন। তাঁরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করতেন না। হিসাব গ্রহণের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।)) [সূরা আল-আহ্যাব,আয়াত-৩৯]
(খ) দ্বীনের অবতীর্ণ বিধান বর্ণনা করা। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
[سورة النحل، الآية:44]
অর্থঃ ((আপনার কাছে আমি উপদেশ ভান্ডার (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি। যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐ সব বিষয় বিবৃত করেন, যে গুলো তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা ভাবনা করে।)) [সূরা আন-নাহাল,আয়াত-৪৪]
(গ) উম্মাতকে কল্যাণের পথ প্রদর্শণ ও অকল্যাণ হতে সতর্ক সাবধান করা, এবং তাদেরকে পূণ্যের সুসংবাদ ও তাদেরকে শাস্তির ভীতি-প্রদর্শন করা।আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
رُّسُلاً مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ
[سورة النساء، الآية:165]
অর্থঃ ((সুসংবাদ্দাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি। [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৬৫]
(ঘ) মানুষকে কথায় ও কাজে সুন্দর চরিত্র ও উত্তম আদর্শবান করে তুলা।
(ঙ) আল্লাহর শরীয়াত বান্দাদের মাঝে প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ণ করা।
(চ) রাসূলগণের 'আলাইহিস্ সালাম স্বীয় উম্মাতের বিপক্ষে শেষ দিবসে এ স্বাক্ষ্য দেওয়া যে তাঁরা তাদের নিকট স্পষ্ট ভাবে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছায়েছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِن كُلِّ أمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَـؤُلاء شَهِيداً
[سورة النساء، الآية:41]
অর্থঃ ((আর তখন কি অবস্থা দাঁড়াবে, যখন আমি প্রতিটি উম্মাতের মধ্য থেকে সাক্ষী উপস্থাপন করব এবং আপনাকে তাদের উপর সাক্ষী উপস্থাপন করব।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত,৪১]

(৫) ইসলাম সকল নবীদের ধর্মঃ ইসলাম সকল নবী ও রাসূলগণের ধর্ম। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ
[سورة آل عمران، الآية:19]
অর্থঃ ((নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহনযোগ্য দ্বীন বা ধর্ম একমাত্র ইসলাম।)) [সূরা-আলে-ইমরান,আয়াত-১৯] তাঁরা সকলেই এক আল্লাহর ইবাদাত করার দিকে, এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদাত বর্জন করার আহবান জানাতেন। যদি ও তাদের শরীয়াত ও বিধি-বিধান ভিন্ন রকম ছিল, কিন্তু তাঁরা সকলেই মূলনীতীতে একমত ছিলন, তা হলো তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
الأنبياء إخوة لعلات
[رواه البخاري]
অর্থঃ ((নবীরা (আলাইহিমুস্ সালাম) একে অপরে বৈমাত্রেয় ভাই ছিলেন।)) [বুখারী]

(৬) রাসূলগণ মানুষ তাঁরা গায়েব জানেন নাঃ ইলমে গায়েব জানা উলুহীয়াতের (আল্লাহর) বৈশিষ্ট, নবীগণের গুণ নয়। কারণ তাঁরা অন্যান্য মানুষের মত মানুষ। তাঁরা পানাহার করেন, বৈবাহিকসূত্রে আবদ্ধ হন, নিদ্রা যান, অসুস্থ হন ও ক্লান্ত হন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَما أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِينَ إِلَّا إِنَّهُمْ لَيَأْكُلُونَ الطَّعَامَ وَيَمْشُونَ فِي الْأَسْوَاقِ
[سورة الفرقان، الآية:20]
অর্থঃ ((আপনার পূর্বে যত রাসূল প্রেরণ করেছি, তাঁরা সবাই খাদ্য গ্রহণ করত এবং হাটে বাজারে চলা ফেরা করত।)) [সূরা আল-ফুরকান,আয়াত-২০] আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلاً مِّن قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجاً وَذُرِّيَّةً
[سورة الرعد، الآية:38]
অর্থঃ ((আপনার পূর্বে আমি অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি, এবং তাঁদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছি।)) [সূরা আর-রা'দ,আয়াত-৩৮] তাঁদেরকে ও চিন্তা, দুঃখ আনন্দ ও কর্ম প্রেরণা স্পর্শ করে যেমন-সাধারণ মানুষকে পেয়ে থাকে। কিন্তু আল্লাহ তাঁদেরকে তাঁর দ্বীন প্রচার করার জন্য মনোনয়ন করেছেন। আল্লাহ তাঁদেরকে (রাসূলদেরকে ইলমে গায়েব হতে) যা অবগত করান তা ব্যতীত কোন ইলমে গায়েব জানেন না। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
َالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَداً - إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِن رَّسُولٍ فَإِنَّهُ يَسْلُكُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ رَصَداً
[سورة الجن، الآيتان 26-27]
অর্থঃ ((তিনি অদৃশ্ব্যের জ্ঞানী, পরন্ত তিনি অদৃশ্যের বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না। তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। তখন তিনি তার অগ্রেও পশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত করেন।)) [সূরা আল-জিন, আয়াত-২৬-২৭]

(৭) রাসূলগণ মা'সূম বা নিস্পাপঃ আল্লাহ তা'আলা তাঁর রিসালাত প্রদান ও প্রচার করার জন্য তাঁর সৃষ্টজীব হতে উত্তম জাতীকে নির্বাচন করেছেন। যারা সৃষ্টিগত ও চরিত্র গত দিক হতে পরিপূর্ণ, আল্লাহ তাঁদেরকে কবীরাহ্ গুনাহ হতে নিরাপদে রেখেছেন। সকল ক্রটি হতে তাঁদেরকে মুক্ত করেছেন। যাতে তাঁরা আল্লাহর ওয়াহী স্বীয় উম্মাতের নিকট পৌঁছাতে সক্ষম হন। আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর (আল্লাহর) রিসালাত প্রচারের ব্যাপারে যে সংবাদ দিয়েছেন, তাতে তাঁরা যে মা'সূম তা সর্বজন সিদ্ধ। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ
[سورة المائدة، الآية:67]
অর্থঃ ((হে রাসূল, পৌঁছে দিন আপনার প্রতি পালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন,তবে আপনি তাঁর রিসালাত কিছুই পৌঁছালেন না, আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে নিরাপদে রাখবেন।)) [সূরা আল-মায়িদাহঃ ৬৭] তিনি আরো বলেনঃ
الَّذِينَ يُبَلِّغُونَ رِسَالَاتِ اللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَداً إِلَّا اللَّهَ
[سورة الأحزاب، الآية:39]
অর্থঃ ((তাঁরা (নবীগণ) আল্লাহর রিসালাত প্রচার করতেন ও তাঁকে ভয় করতেন,তাঁরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করতেন না।)) [সূরা আল-আহ্যাব,আয়াত-৩৯] তিনি আরো বলেনঃ
لِيَعْلَمَ أَن قَدْ أَبْلَغُوا رِسَالَاتِ رَبِّهِمْ وَأَحَاطَ بِمَا لَدَيْهِمْ وَأَحْصَى كُلَّ شَيْءٍ عَدَداً
[سورة الجن، الآية:28]
অর্থঃ ((যাতে আল্লাহ তা'আলা জেনে নেন যে, রাসূলগণ তাঁদের পালনকর্তার রিসালাত পৌঁছিয়েছেন কিনা। রাসূলগণের কাছে যা আছে, তা তাঁর জ্ঞান-গোচর। তিনি সব কিছুর সংখ্যার হিসাব রাখেন।)) [সূরা আল-জিন,আয়াত-২৮] এবং যখন তাঁদের কারো পক্ষ হতে এমন কোন ছোট পাপ কর্ম প্রকাশিত হয় যা তাবলীগের (দ্বীন প্রচারের) সাথে সম্পৃক্ত নয়। নিশ্চয় তখন তা তাঁদের নিকট বর্ণনা করা হবে। আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ ও তাঁর দিকে ধাবমান হওয়ার সাথে সাথেই মনে হবে যেন (এই পাপ) তাঁদের কাছ থেকে প্রকাশ পায় নাই, এবং এর বিনমিয়ে তাঁরা তাঁদের পূর্বের মর্যাদার চেয়ে আরো উচ্চ মর্যাদা লাভ করবেন। ইহা এ জন্য যে, আল্লাহ তাঁর নবীদেরকে (আলাইহিমুস্ সালাম) পূর্ণ সৎ চরিত্রে ও ভাল গুণে বিশেষিত করেছেন। এবং তাঁদের মান মর্যাদা সুউচ্চ অবস্থান ক্ষুন্ন করে এমন সকল জিনিস হতে তাঁদেরকে আল্লাহ পবিত্র রেখেছেন।

(৮) নবী ও রাসূলগণের সংখ্যা ও তাঁদের মধ্যে যারা উত্তমঃ রাসূলগণের সংখ্যা তিন শত দশের কিছু বেশী প্রমাণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যখন রাসূলগণের সংখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়; তখন তিনি বলেনঃ
ثلاثمائة وخمس عشرة جماً وغفيراً
[رواه الحاكم]
অর্থঃ ((তিনশত পনের জনের বিরাট এক দল।)) [হাকিম] আর নবীদের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশী। আল্লাহ তাঁদের কারোও কথা তাঁর কিতাবে আমাদের জন্য বর্ণনা করেছেন, আর কারোও কথা বর্ণনা করেন নাই। আল্লাহ তাঁর কিতাবে পঁচিশ জন নবী ও রাসূলের নাম উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَرُسُلاً قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِن قَبْلُ وَرُسُلاً لَّمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ
[سورة النساء، الآية:164]
অর্থঃ ((আর এমন কতক রাসূল প্রেরণ করেছি যাদের ইতিবৃত্ত আমি আপনাকে বর্ণনা করেছি ইতি পূর্বে, এবং এমন কতক রাসূল প্রেরণ করেছি যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে বর্ণনা করিনি।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত১৬৪] তিনি আরো বলেনঃ
وَتِلْكَ حُجَّتُنَا آتَيْنَاهَا إِبْرَاهِيمَ عَلَى قَوْمِهِ نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مَّن نَّشَاء إِنَّ رَبَّكَ حَكِيمٌ عَلِيمٌ - وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ كُلاًّ هَدَيْنَا وَنُوحاً هَدَيْنَا مِن قَبْلُ وَمِن ذُرِّيَّتِهِ دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَى وَهَارُونَ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ - وَزَكَرِيَّا وَيَحْيَى وَعِيسَى وَإِلْيَاسَ كُلٌّ مِّنَ الصَّالِحِينَ - وَإِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَيُونُسَ وَلُوطاً وَكُلاًّ فضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِينَ - وَمِنْ آبَائِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ وَإِخْوَانِهِمْ وَاجْتَبَيْنَاهُمْ وَهَدَيْنَاهُمْ إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
[سورة الأنعام، الآيات:83-87]
অর্থঃ ((এটি ছিল আমার যুক্তি, যা আমি ইব্রাহীমকে তাঁর সম্প্রদায়ের বিপক্ষে প্রদান করেছিলাম। আমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদায় সমুন্নত করি। আপনার পালনকর্তা প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী। আমি তাঁকে দান করেছি ইসহাক ও ইয়াকুব। প্রত্যেককেই আমি পথ-প্রদর্শন করেছি এবং পূর্বে আমি নূহকে পথ-প্রদর্শন করেছি-তাঁর সন্তানদের মধ্যে দাউদ, সোলায়মান,আইউব, ইউসুফ, মূসা ও হারুনকে। এমনি ভাবে আমি সৎকর্মীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। আরও যাকারিয়া, ইয়াহ্ইয়া, ঈসা এবং ইলিয়াসকে। তাঁরা সবাই পূণ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এবং ইসমাঈল, ঈসা, ইউনুস, লূতকে প্রত্যেককেই আমি সারা বিশ্বের উপর গৌরবান্বিত করেছি। আরো তাঁদের কিছু সংখ্যক পিতৃপুরুষ,সন্তান-সন্ততি ও ভ্রাতাদেরকে, আমি তাঁদেরকে মনোনীত করেছি এবং সরল পথ প্রদর্শন করেছি।)) [সূরা আল-আনআম, আয়াত ৮৩-৮৭]
আল্লাহ নবীদের কাউকে অন্যদের উপর শ্রেষ্টত্ব দান করেছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَلَقَدْ فَضَّلْنَا بَعْضَ النَّبِيِّينَ عَلَى بَعْضٍ
[سورة الإسراء، الآية:55]
অর্থঃ ((আমি নবীদেরকে কতককে কতকের উপর শ্রেষ্টত্ব দান করেছি।)) [সূরা আল-ইসরা,আয়াত-৫৫] এবং আল্লাহ রাসূলদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্টত্ব দান করেছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ
[سورة البقرة، الآية:253]
অর্থঃ ((এ রাসূলগণ আমি তাদের কাউকে কারো উপর মর্যাদা দান করেছি।)) [সূরা আল-বাক্বারাহ্, আয়াত-২৫৩] রাসূলগণের মধ্যে যারা উলুলআয্ম (উচ্চ অভিলাষী) তাঁরা সর্ব উত্তম। তাঁরা হলেন নূহ, ইব্রাহীম, মূসা, ঈসা, ও আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
َاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُوْلُوا الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ
[سورة الأحقاف، الآية:35]
অর্থঃ ((অতএব আপনি ধৈর্য ধরুন, যেমন উলুল আয্ম (উচ্চ অভিলাষী) রাসূলগণ ধৈর্য ধরেছেন।)) [সূরা আল-আহক্বাফ, আয়াত-৩৫] তিনি আরো বলেনঃ
وَإِذْ أَخَذْنَا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثَاقَهُمْ وَمِنكَ وَمِن نُّوحٍ وَإِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ وَأَخَذْنَا مِنْهُم مِّيثَاقاً غَلِيظاً
[سورة الأحزاب، الآية:7]
অর্থঃ ((যখন আমি নবীগণের কাছ থেকে, আপনার কাছ থেকে এবং নূহ, ইব্রাহীম মূসা ও মারিইয়ামের পুত্র ঈসার কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম, আরো অঙ্গীকার নিলাম তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার।)) [সূরা আল-আহযাব,আয়াত-৭] মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সর্ব শেষ নবী, মুত্তাকীনদের ইমাম, আদম সন্তানের সরদার। নবীরা যখন একত্রিত হন তখন তিনি তাঁদের ইমাম। যখন তাঁরা কোন জায়গাহ হতে প্রতিনিধি দল হিসাবে আগমণ করেন তখন তিনি তাঁদের প্রবক্তা হন। তিনি মাকামে মাহমুদের (প্রশংসিত স্থানের) মালিক, যে স্থানকে নিয়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলেই ঈর্ষা করবে। অবতরণ স্থান, হাউজ ও হামদ-বা প্রশংসার ঝান্ডার মালিক। শেষ দিবসে সমস্ত সৃষ্টজীবের সুপারিশকারী, জান্নাতের ওয়াসীলা নামক স্থান ও মর্যাদার মালিক। আল্লাহ তাকে তাঁর দ্বীনের সর্বোত্তম শরীয়াত বিধি-বিধান দিয়ে প্রেরণ করেছেন। এবং তাঁর উম্মাতকে সর্ব উত্তম উম্মত রূপে এই পৃথিবীতে মানুষের কল্যানের জন্য পাঠানো হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর উম্মাতের জন্য বহু মর্যাদা ও উত্তম বৈশিষ্ট দিয়েছেন। যা তাদের পূর্ববর্তীদের হতে সতন্ত্র। সৃষ্টির দিক দিয়ে তাঁরা সর্ব শেষ উম্মত আর পুনরুত্থানে তাঁরা সর্ব প্রথম উম্মত। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
فضلت على الأنبياء بست
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((আমি ছয়টি বৈশিষ্টে সকল নবীদের উপর প্রাধান্য পেয়েছি।)) [মুসলিম] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ
أنا سيد ولد آدم يوم القيامة وبيدي لواء الحمد ولا فخر. وما من نبي يومئذ آدم فمن سواه إلا تحت لوائي يوم القيامة
[رواه أحمد والترمذي]
অর্থঃ ((আমি কিয়ামত দিবসে আদম সন্তানের সর্দার, আমারই হাতে হামদের পতাকা থাকবে। ইহা কোন গর্ভের বিষয় নয়। কিয়ামত দিবসে আদম 'আলাইহিস্ সালাম ছাড়া সকলেই আমার পতাকার অধিনে থাকবে।)) [তিরমিযী ও আহমাদ] মর্যাদার দিক দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে যিনি তিনি হলেন ইব্রাহীম খালীলুর রহমান 'আলাইহিস্ সালাম সুতরাং (আল্লাহর) দু'বন্ধু-মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইব্রাহীম 'আলাইহিস্ সালাম উলুল আযমদের সর্ব শ্রেষ্ট। অতঃপর তিন জন (নূহ, মূসা ও ঈসা) সর্ব শ্রেষ্ট (অন্য সব নবীদের চেয়ে)।

(৯) নবীদের (আলাইহিমুস্ সালাম) মু'জিযাহঃ আল্লাহ্ তাঁর রাসূলদের সহযোগিতা করেছেন বড় বড় নিদর্শন ও উজ্জ্বল মু'জিযার (অলৌকিক শক্তির) দ্বারা। যাতে হুজ্জাত প্রতিষ্ঠিত হয় অথবা প্রয়োজন সাধন হয়। যেমন- কুরআন কারীম, চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়া, লাঠি ভয়ানক সাঁপে পরিণত হওয়া, ইত্যাদি। অতঃপর মু'জিযাহ্ (স্বাভাবিক নীতি ভঙ্গকারী-অলৌকিক শক্তি) নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণের দালীল,আর কারামাহ্ (অলীদের জন্যও অলৌকিক শক্তি) নবুওয়াতের সত্যতা সাক্ষ্যকারী প্রমান স্বরূপ। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ
[سورة الحديد، الآية:25]
অর্থঃ ((আমি আমার রাসূলদেরকে সুস্পষ্ট নিদর্শণাবলী সহ প্রেরণ করেছি।)) [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত-২৫] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
ما من نيي من الأنبياء إلا وقد أوتي من الآيات ما آمن على مثله البشر وإنما كان الذي أوتيته وحياً أوحاه إلي فأرجو أن أكون أكثرهم تابعاً يوم القيامة
[متفق عليه]
অর্থঃ ((প্রত্যেক নবীই নিদর্শন বা মু'জিযাহ প্রাপ্ত হয়েছেন কিন্তু মু'জিযার তুলনায় মানুষ ঈমান আনে নাই। আর আমি যা প্রাপ্ত হয়েছি তা সেই ওয়াহী যা আমার নিকট (আল্লাহ) অবতীর্ণ করেছেন। ফলে আমি আশাবাদী যে, কিয়ামত দিবসে তাঁদের চেয়ে আমার অনুসারী বেশী হবে।)) [বুখারী ও মুসলিম ]

(১০) আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুওয়াতের প্রতি ঈমানঃ তাঁর (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নবুওয়াতের প্রতি ঈমান আনা-ঈমানের মূলনীতি সমূহের একটি অন্যতম মূলনীতি। এর উপর ঈমান আনা ছাড়া কারোও ঈমান পরিপূর্ণ হবে না। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَمَن لَّمْ يُؤْمِن بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ فَإِنَّا أَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ سَعِيراً
[سورة الفتح، الآية:13]
অর্থঃ ((যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে না, আমি সেসব কাফিরের জন্য জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছি।)) [সূরা আল-ফাত্হ, আয়াত-১৩] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
أمرت أن أقاتل الناس حتى يشهدوا أن لا إلا إله إلا الله وإني رسول الله
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((আমি আদেশ প্রাপ্ত হয়েছি যে,মানুষের সাথে যুদ্ধ করব যতক্ষন না তারা-আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা'বুদ নেই, এবং আমি আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দিবে।)) [মুসলিম] নিম্নে বর্ণিত বিষয়ের উপর ঈমান আনার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনা পরিপূর্ণ হবে-
প্রথমতঃ আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা বা জানা। তিনি হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশিম, হাশিম কুরাইশ বংশ, আর কুরাইশ আরব বংশ আর আরব ইসমাঈল বিন ইব্রাহীম আল-খলীল এর বংশধর, তাঁর ও আমাদের নবীর উপর সর্ব উত্তম দরুদ ও সালাম বর্ষিত হউক। তাঁর তেষট্টি বছর বয়স হয়েছিল। নবুয়াতের পূর্বে চল্লিশ বৎসর, নবী ও রাসূল হওয়ার পরে তেইশ বৎসর।
দ্বিতীয়তঃ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিষয়ে সংবাদ দিয়েছেন সে বিষয়ে তাঁকে বিশ্বাস করা, যে বিষয় তিনি আদেশ করেছেন, তার অনুসরণ করা। যে বিষয় হতে তিনি নিষেধ করেছেন ও সতর্ক করেছেন তা হতে বিরত থাকা। তিনি যে বিধান দান করেছেন সে অনুযায়ী আল্লাহর ইবাদাত করা।
তৃতীয়তঃ তিনি জিন-ইনসান সকলের নিকট প্রেরিত আল্লাহর রাসূল এ কথার বিশ্বাস রাখা। সবাইকে তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعاً
[سورة الأعراف، الآية:158]
অর্থঃ ((আপনি বলুন হে মানব সকল ! আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহর রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।)) [সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত-১৫৮]
চতুর্থতঃ তাঁর রিসালাতের প্রতি ঈমান আনা, তিনি সর্বশ্রেষ্ট ও শেষ নবী। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ
[سورة الأحزاب، الآية:40]
অর্থঃ ((বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও শেষ নবী।)) [সূরা আল-আহযাব, আয়াত-৪১] এবং তিনি আল্লাহর খলীল ও আদম সন্তানের সর্দার বা নেতা। তিনি মহান শাফায়াতের মালিক এবং জান্নাতে সুউচ্চ অয়াসীলা নামক স্থান তাঁরই জন্য। তিনি হউযে কাউসারের মালিক। তাঁর উম্মাত সর্বশ্রেষ্ট বা উত্তম। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ
[سورة آل عمران، الآية:110]
অর্থঃ ((তোমরাই শ্রেষ্ট উম্মত যা মানুষের (কল্যাণের)জন্য সৃজিত হয়েছে।)) [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১১০] অধিকাংশ জান্নাতবাসী হবে তাঁরই উম্মত এবং তাঁর রিসালাত পূর্ববর্তী সকল রিসালাতের রহিত কারী।
পঞ্চমতঃ আল্লাহ তাঁকে মহান মু'জিযাহ্ ও সুস্পষ্ট নিদর্শন দ্বারা সহযোগিতা করেছেন। তা হল মহাগ্রন্থ আল-কুরআন আল্লাহর বাণী যা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হতে সংরক্ষীত। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
قُل لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الإِنسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَن يَأْتُواْ بِمِثْلِ هَـذَا الْقُرْآنِ لاَ يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيراً
[سورة الإسراء، الآية:88]
অর্থঃ ((বলুনঃ যদি মানব ও জিন এই কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্য একত্রিত হয়, এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়,তবুও তারা এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না।)) [সূরা আল-ইসরা, আয়াত-৮৮] তিনি আরো বলেনঃ
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
[سورة الحجر، الآية:9]
অর্থঃ ((আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।)) [সূরা আল-হিজর, আয়াত-৯]
ষষ্টতঃ নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম রিসালাত প্রচার করেছেন, আমানত আদায় করেছেন, উম্মাতদেরকে উপদেশ দিয়েছেন। সকল প্রকার কল্যাণের সন্ধান দিয়েছেন, ও তার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। সকল প্রকার অকল্যাণ হতে তাঁর উম্মাতকে নিষেধ করেছেন ও তা হতে তাদেরকে সাবধান করেছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
[سورة التوبة، الآية:128]
অর্থঃ ((তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তাঁর পক্ষে-দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী,মু'মিনদের প্রতি স্নেহশীল,দয়াময়।)) [সূরা আত্-তাওবাহ, আয়াত-১২৮] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
ما من نبي بعثه الله في أمة قبلي إلا كان حقاً عليه أن يدل أمته على خير ما يعلمه لهم ويحذر أمته من شرما يعلمه لهم
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((আমার উম্মাতের পূর্বে আল্লাহ যত নবী 'আলাইহিস্ সালাম প্রেরণ করেছেন, তাদের উপর দায়িত্ব ছিল নিজ উম্মাতের জন্য যা কল্যানকর তাদেরকে তার সন্ধান দেওয়া। আর যা কল্যাণকর নয় তা হতে তাদেরকে সতর্ক করা।)) [মুসলিম শরীফ]
সপ্তমতঃ তাঁকে (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভাল বাসা, ও তাঁর ভালোবাসাকে নিজের জানের ও সকল সৃষ্টিজীবের ভালবাসার উপর প্রাধান্য দেওয়া। তাঁকে সম্মান করা, মর্যাদা দেয়া, ইহ্তেরাম করা, ও তাঁর আনুগত্য করা। নিশ্চয় ইহা সে হক্ব বা অধিকার যা আল্লাহ তাঁর কিতাবে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য সাবস্ত করেছেন। কারণ তাঁর ভালবাসা প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর ভালবাসা, এবং তাঁর আনুগত্য প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর আনুগত্য। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
[سورة آل عمران، الآية:31]
অর্থঃ ((বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর,যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভাল বাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।)) [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-৩১] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من ولده ووالده والناس أجمعين
[متفق عليه]
অর্থঃ ((তোমাদের কেহই ততক্ষন পর্যন্ত মু'মিন হতে পারেনা যতক্ষন পর্যন্ত আমি তাদের নিকট তাদের ছেলে সন্তান, পিতামাতা, ও সকল মানুষের চেয়ে প্রিয়তম না হবো।)) [বুখারী ও মুসলিম]
অষ্টমতঃ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরুদ ও সালাম বেশী বেশী পাঠ করা। কারণ কৃপণ ঐ ব্যক্তি যার নিকট নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম উল্লেখ্য হওয়ার পরও তাঁর উপর দরুদ পাঠ করেনা। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيماً
[سورة الأحزاب، الآية:56]
অর্থঃ ((আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ নবীর প্রতি রহমত বর্ষণ করেন। হে মু'মিনগণ ! তোমরা নবীর উপর দরুদ ও সালাম পাঠ কর।)) [সূরা আল-আহযাব, আয়াত-৫৬] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
من صلى عليّ واحدة صلى الله عليه بها عشرا
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((যে, ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তার উপর এর বিনিময়ে দশবার রহম করবেন।)) [মুসলিম শরীফ] নিম্নের স্থান গুলোতে তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপর দরুদ পাঠ করা অত্যান্ত গুরুত্ব পূর্ণ। নামাযের তাশাহুদে, বিতির নামাযের দোআয় কুনুতে, জানাযার নামাযে, জুম'আর খুৎবাতে। আযানের পর, মাসজিদে প্রবেশ ও মাসজিদ হতে বের হওয়ার সময়। দোআর সময় এবং যখন (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নাম উল্লেখ্য করা হয়, আরো অন্যান্য স্থানে।
নবমতঃ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সকল নবী (আলাইহিমুস্ সালাম) তাঁদের প্রভুর নিকট জীবিত। শহীদদের কবরের জীবন হতে তাঁদের (আলাইহিমুস্ সালাম) কবরের জীবন আরো বেশী পরিপূর্ণ ও উচ্চ। তবে তাঁদের কবরের জীবন, পৃথিবীর জীবনের মত নয়। তা এমন জীবন যার বিবরণ সম্পর্কে আমরা জানি না, সে জীবন তাঁদের হতে মৃত্যুর নামও দূর করেনা। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
إن الله حرم على الأرض أن تأكل أجساد الأنبياء
[رواه أبو داود والنسائي]
অর্থঃ ((আল্লাহ জমিনের জন্য নবীদের লাশ ভক্ষণ কে হারাম করে দিয়েছেন।)) [আবু দাউদ ও নাসায়ী] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ
ما من مسلم يسلم عليّ إلا رد الله عليّ روحي كي أرد عليه السلام
[رواه أبو داود]
অর্থঃ ((যখনই কোন মুসলমান আমাকে সালাম দেয় তখনই আল্লাহ আমার রুহ্ বা আত্মা আমার নিকট ফিরিয়ে দেন তার সালামের উত্তর দেওয়ার জন্য।)) [আবু দাউদ
দশমতঃ তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর সামনে উচু আওয়াজ না করা, অনুরুপ তাঁর কবরে তাঁর উপর সালাম দেওয়ার সময় উচু আওয়াজ না করা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এহতেরামের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ
[سورة الحجرات، الآية:2]
অর্থঃ ((হে মু'মিনগণ ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর-উঁচু করনা,এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচু স্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচু স্বরে কথা বলোনা। এতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবেনা।)) [সূরা আল-হুজরাত, আয়াত-২] দাফনের পর তাঁকে সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মান করা, তাঁর জীবিত অবস্থায় সম্মান করার ন্যায়। অতঃপর তাঁকে আমরা সম্মান করবো যে ভাবে সাহাবায়ে কেরাম তাঁকে সম্মান করতেন। কারণ তাঁরা (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) সকল মানুষের চেয়ে তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক অনুসরণকারী ছিলেন। তাঁরা (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরুধিতা করা হতে এবং দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন কিছু দ্বীনের মাঝে সংযোজন করা হতে অধিক দূরে থাকতেন।
একাদশতমঃ তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে, পরিবার-পরিজনকে ও স্ত্রীদেরকে ভাল বাসা ও তাঁদের সকলের সাথে বন্ধুত্ব রাখা। তাঁদের মর্যাদাহানী হতে বা তাঁদেরকে গালী দেওয়া হতে ও তাঁদের চরিত্রে কোন প্রকার আঘাত হানা হতে সাবধান থাকা। কারণ আল্লাহ তাঁদের প্রতি রাজি হয়েছেন, ও তাঁদেরকে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহচর হিসাবে নির্বাচন করে নিয়েছেন। এই উম্মাতের উপর তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা ওয়াজিব করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ
[سورة التوبة، الآية:100]
অর্থঃ ((আর যারা সর্ব প্রথম হিজরত কারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে।)) [সূরা আত্-তাওবাহ, আয়াত-১০০] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
لا تسبوا أصحابي فوالذي نفسي بيده لو أنفق أحدكم مثل أحد ذهبا ما بلغ مد أحدهم ولا نصيفه
[رواه البخاري]
অর্থঃ ((তোমরা আমার সাহাবাদেরকে গালী দিওনা, সেই সত্যার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বতের সমপরিমান (আল্লাহর পথে) ব্যায় করে, তবুও তাদের এ বিশাল ব্যায় সাহাবাদের আল্লাহর রাস্তায় এক মুদ্ (প্রায় ৭০০গ্রাম) বা অর্ধ মুদ্ ব্যায় করার সমান হবে না।)) [বুখারী] সুতরাং পরবর্তী লোকদের উচিত সাহাবাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং নিজেদের মনে তাঁদের ব্যাপারে যাতে কোন প্রকার কুটিলতা না থাকে এ জন্য আল্লাহর কাছে দোআ করা। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَالَّذِينَ جَاؤُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلّاً لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
[سورة الحشر، الآية:10]
অর্থঃ ((যারা তাঁদের পরে আগমন করেছে তাঁরা বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখনা। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু পরম করুণাময়।)) [সূরা আল-হাশর, আয়াত-১০]
দ্বাদশতমঃ তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করা হতে বিরত থাকা। কারণ অতিরঞ্জিত করা তাঁকে সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড় কষ্ট দেওয়ার অন্তর্ভুক্ত। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মাতকে তাঁর ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করা হতে ও তাঁর প্রশংসা করার সময় সীমা লংঘন করা হতে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে যে মর্যাদা দিয়েছেন, তাঁকে তার চেয়ে মর্যাদা দেয়া হতে সতর্ক করেছেন। কারণ ইহা একমাত্র আল্লাহর জন্য খাস। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
إنما أنا عبد فقولوا عبد الله ورسوله، لا أحب أن تر فعوني فوق منزلتي
অর্থঃ ((আমি একজন বান্দা বা দাস, সুতরাং তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা ও আল্লাহর রাসূল বল। তোমরা আমাকে আমার মর্যাদার চেয়ে উচু করনা এটা আমি ভাল বাসিনা।)) নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ
لا تطروني كما أطرت النصارى ابن مريم
[رواه البخاري]
অর্থঃ ((তোমরা আমার ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করনা যেমন খৃষ্টানরা ঈসা বিন মারইয়াম 'আলাইহিস্ সালামের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করেছিল।)) [বুখারী] তাঁকে (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আহ্বান করা, ও তাঁর কাছে ফরিয়াদ করা। তাঁর কবরের পাশ দিয়ে ত্বাওয়াফ করা, তাঁর নামে নজর মানা, পশু জবেহ্ করা বৈধ নয়। এ সকল কাজ আল্লাহর সাথে শরীক করার নামান্তর, অথচ আল্লাহ অন্যের ইবাদাত করা হতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপ ভাবে তাঁকে ইহতেরাম না করায় তাঁর প্রতি অনিহা প্রকাশ পায়। তাঁর মান হানি করা,তাঁকে তুচ্ছ জানা তাঁর ব্যাপারে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা, ইসলাম হতে মুর্তাদ বা বের হয়ে যাওয়া ও আল্লাহর সাথে কুফুরী করা। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
لاَ تَعْتَذِرُواْ قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ - قُلْ أَبِاللّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ
[سورة التوبة، الآية: 66 ، 67]
অর্থঃ ((আপনি বলুনঃ তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম-আহকামের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছিলে? ছলনা করোনা, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর।)) [সূরা আত্-তাওবাহ্, আয়াত-৬৫-৬৬] রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সত্যিকার ভালবাসা তাঁর নীতির ও সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ, তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম পথের বিরোধিতা না করার দিকে প্রেরণা যোগায়। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
[سورة آل عمران، الآية:31]
অর্থঃ ((বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভাল বাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভাল বাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।)) [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-৩১]
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানের ব্যাপারে বেশী-কমে সীমালংঘন না করা ওয়াজিব। তাই তাঁকে উলুহীয়াতের (মা'বুদের) গুণে গুনাম্বিত করা যাবে না। তাঁর মর্যাদা সম্মান ও ভালবাসার অধিকার কমানোও যাবেনা, যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল তার শরীয়াতের অনুসরণ করা, তার নীতির উপর চলা ও তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুকরণ করা।
ত্রয়োদশতমঃ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনা পূর্ণাঙ্গ হবে তাঁকে সত্যায়িত ও তিনি যে শরীয়াত নিয়ে এসেছেন তার উপর আমল করার মাধ্যমে, এটা তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনুগত্য করার অর্থ। তাঁর আনুগত্য বস্তুত আল্লাহরই আনুগত্য, আর তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাফারমানী বস্তুত আল্লাহরই নাফারমানী। আর তাঁকে পূর্ণভাবে বিশ্বাস ও অনুসরণের মাধ্যমেই তাঁর প্রতি পরিপূর্ণভাবে ঈমান আনা হয়ে থাকে।


পঞ্চম স্তম্ভ
الركن الخامس:الإيمان باليوم الآخر
পঞ্চম রুকনঃ শেষ দিবসের প্রতি ঈমান

(১) শেষ দিবসের (আখেরাতের) প্রতি ঈমানঃ এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, পার্থিব জীবন শেষ হয়ে মৃত্যু ও কবর জীবনের মাধ্যমে অন্য জগত শুরু হবে। এভাবে কিয়ামত সংঘটিত হবে, তার পর পুনরুত্থান, হাশর, নাশর, ও হিসাব নিকাশের পর ফলাফল প্রাপ্ত হয়ে জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে যাবে। শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনা ঈমানের রুকন সমূহের অন্যতম একটি রুকন। যার প্রতি ঈমান আনা ছাড়া কোন বান্দার ঈমান পরিপূর্ণ হবেনা। আর যে ব্যক্তি শেষ দিবসকে অস্বীকার করবে সে কাফির হয়ে যাবে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَلَـكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ
[سورة البقرة، الآية:177]
অর্থঃ ((বরং সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, ও কিয়ামত দিবসের উপর।)) [সূরা আল-বাক্বারাহ্, আয়াত-১৭৭] জিব্রাঈল (আলাইহিস্ সালাম)এর হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
فأخبرني عن الإيمان؟ قال: أن تؤمن بالله، وملائكته وكتبه، ورسله واليوم الآخر، وتؤمن بالقدر خيره وشره
[رواه مسلم-1/157]
অর্থঃ ((জিব্রাঈল বলেনঃ হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবগত করুণ। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ঈমান হলো- আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতা, তাঁর কিতাব সমূহ, তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিমুস সালাম) এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনা, আরো ঈমান আনা ভাগ্যের ভাল মন্দের প্রতি। [মুসলিম শরীফ] শেষ দিবসের পূর্বে কিয়ামতের যে সকল আলামত সংঘঠিত হবে তার প্রতি ঈমান আনা, যে গুলি সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন।
আলেমগণ এ আলামতকে দু'ভাগে বিভক্ত করেছেন-
(ক) ছোট আলামতঃ যা কিয়ামত নিকটে হওয়া বুঝায়, ইহা অনেক রয়েছে। অধিকাংশ সংঘঠিত না হলেও অনেক সংঘঠিত হয়ে গেছে। যেমন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) প্রেরণ। আমানতের খিয়ানত করা। মসজিদ অধিক মাত্রায় সাজ সজ্জা ও তা নিয়ে গর্ভ করা। বড় বড় অট্রালিকা নিয়ে রাখালদের গর্ভ করা। ইয়াহুদীদের সাথে যুদ্ধ ও তাদের নিহত হওয়া। সময় নিকটবর্তী হওয়া, আমল কমে যাওয়া, ফিৎনা-ফাসাদ প্রকাশ পাওয়া, অধিক হত্যা হওয়া, ব্যভিচার ও অন্যায় কাজ অধিক মাত্রায় হওয়া। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانشَقَّ الْقَمَرُ
[سورة القمر، الآية:1]
অর্থঃ ((কিয়ামত আসন্ন ও চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে।)) [সূরা আল-ক্বামার-আয়াত-১]
(খ) বড় আলামতঃ যা কিয়ামতের পূর্ব মূহুর্তে সংঘঠিত হবে এবং কিয়ামত শুরু হওয়ার সতর্ক করবে। এমন বড় আলামত দশটি। একটিও প্রকাশিত হয়নি।
বড় আলামত সমূহ যেমনঃ ইমাম মাহ্দীর আগমণ, দাজ্জালের আগমণ, ঈসা 'আলাইহিস্ সালামের আকাশ হতে ন্যায় বিচারক হিসাবে অবতরণ, তিনি খৃষ্টানদের ক্রুসেড ভেঙ্গে দিবেন, দাজ্জাল ও শুকুরকে হত্যা করবেন। করের আইন রহিত করবেন। ইসলামী শরীয়াত অনুপাতে বিচার পরিচালনা করবেন। ইয়াজুজ, মা'জুজ বের হবে। তাদের ধ্বংসের দোআ করবেন, অতঃপর তারা মারা যাবে। তিনটি বড় ভূমি কম্প হবে। পূর্বে একটি, পশ্চিমে একটি, জাজিরাতুল আরবে একটি। ধোঁয়া বের হবে, তা হল আকাশ হতে প্রচন্ড ধোঁয়া নেমে এসে সকল মানুষকে ঢেকে নিবে। কুরআন জমিন হতে আকাশে তুলে নেওয়া হবে। পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হবে। এক (অদ্ভুত) চতুস্পদ জন্তু বের হবে। ইয়ামানের আদন (জায়গার নাম) হতে ভয়ানক আগুন বের হয়ে মানুষদের শামের দিকে নিয়ে আসবে। এটাই সর্বশেষ বড় আলামত। হুযাইফা বিন উসাঈদ আল-গিফারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে, ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন। তিনি (হুযাইফা) বলেনঃ
عن حذيفة بن أسيد الغفاري رضي الله عنه قال: اطلع النبي صلى الله عليه وسلم ونحن نتذاكر فقال: ((ما تذكرون؟ قالوا: تذكر الساعة. قال: إنها لن تقوم حتى تروا قبلها عشر آيات.فذكر: الدخان، والدجال، والدابة، وطلوع الشمس من مغربها ،ونزول عيسى بن مريم، ويأجوج، وثلاثة خسوف: خسف بالمشرق، وخسف بالمغرب، وخسف بجزيرة العرب، وآخرذلك نار تخرج من اليمن تطرد الناس إلى محشرهم
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আগমণ করলেন, এমতাবস্থায় আমরা এক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ছিলাম। তিনি বল্লেন তোমরা কি বিষয় আলোচনা করতেছ? তাঁরা বল্লেন আমরা কিয়ামতের ব্যাপারে আলোচনা করতেছি। তিনি বললেনঃ কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষন না তোমরা তার পূর্বে দশটি আলামত সংঘঠিত হতে দেখবে। অতঃপর আলামত সমূহ উল্লেখ করলেনঃ ধোঁয়া, দাজ্জাল, চতুস্পদ জন্তু পশ্চিম দিক হতে সূর্য উঠা, ঈসা বিন মারিইয়াম এর আগমণ, ইয়াজুজ-মা'জুজ আগমণ, তিনটি ভূমি কম্প- একটি পূর্বে আর একটি পশ্চিমে, আর একটি জাজিরাতুল আরবে, শেষ আলামত হল ইয়ামান হতে আগুন বের হয়ে মানুষদেরকে হাশরের মাঠের দিকে নিয়ে যাবে।)) [মুসলিম শরীফ] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ
يخرج في آخر أمتي المهدي يسقيه الله الغيث، وتخرج الأرض نباتها، ويعطي المال صحاحاً،وتكثر الماشية،وتعظم الأمة، يعيش سبعاً،أوثمانياً، يعني حججاً
[رواه الحاكم في المستدرك]
অর্থঃ ((আমার উম্মাতের শেষ ভাগে ইমাম মাহ্দী বের হবেন, তার উপর আল্লাহ্ বৃষ্টি বর্ষন করবেন। জমিন উদ্ভিত জন্ম দিবে। সুস্থ্য ও সচ্ছল লোকদের মাল প্রদাণ করা হবে। চতুস্পদ জানুয়ারের সংখ্যা বেড়ে যাবে। উম্মাতের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তিনি সাত অথবা আট বছর বসবাস করবেন।)) (হাকেম) বর্ণিত আছে যে ঐ নিদর্শন গুলো পর্যায় ক্রমে সংগঠিত হবে, যেমন পুথির মালায় পুথি পর্যায়ক্রমে সাজানো থাকে। এগুলোর একটি সংঘঠিত হওয়ার পর পরই অপরটি সংঘঠিত হবে। এ দশটি নিদর্শন সংঘঠিত হওয়ার পর পরই আল্লাহর আদেশে কিয়ামত সংঘঠিত হবে।
কিয়ামত দ্বারা কি বুঝায়ঃ কিয়ামত দ্বারা উদ্দেশ্য হল ঐ দিন, যে দিন মানুষ আল্লাহর আদেশে তাদের কবর হতে বের হবে, হিসাব নিকাশের জন্য, অতঃপর সৎকর্মশীল সুফল ও শান্তি এবং অসৎ কর্মশীল শাস্তি প্রাপ্ত হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
يَوْمَ يَخْرُجُونَ مِنَ الْأَجْدَاثِ سِرَاعاً كَأَنَّهُمْ إِلَى نُصُبٍ يُوفِضُونَ
[سورة المعارج، الآية:43]
অর্থঃ ((সে দিন তারা কবর থেকে দ্রত বেগে বের হবে-যেন তারা কোন এক লক্ষ্যস্থলের দিকে ছুটে যাচ্ছে।)) [সূরা আল-মাআরিজ,আয়াত-৪৩ ] এ দিনের একাধিক নাম কুরআন কারীমে উল্লেখ্য হয়েছে। যেমন- (يوم القيامة) ইয়াওমুল কিয়ামাহ, (القارعة) আল-ক্বারিয়াহ, (يوم الحساب) ইয়াওমুল হিসাব, ) (يوم الدين ইয়াওমুদ্দিন, (الطامة) আত্ত্বামাহ, (الواقعة) আল-ওয়াকিয়াহ, (الحاقة) আল-হাক্কাহ, (الصاخة) আস্সাখ্খাহ, (الغاشية) আল-গাশিয়াহ, ইত্যাদি।
يوم القيامة - ইয়াওমুল কিয়া-মাহঃ আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
لَا أُقْسِمُ بِيَوْمِ الْقِيَامَةِ
[سورة القيامة، الآية:1]
অর্থঃ ((কিয়ামাত দিবসের শপথ।)) [সূরা আল-কিয়ামাহ, আয়াত-১]
القارعة - আল ক্বা-রিয়াহঃ আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
الْقَارِعَةُ - مَا الْقَارِعَةُ
[سورة القارعة، الآيتان:1-2]
অর্থঃ ((করাঘাতকারী (আল ক্বারিয়াহ্), করাঘাতকারী কি?)) [সূরা আল-ক্বারিয়াহ, আয়াত ১-২]
يوم الحساب - ইয়াওমুল হিসা-বঃ আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ يَضِلُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ بِمَا نَسُوا يَوْمَ الْحِسَابِ
[سورة ص، الآية:26]
অর্থঃ ((নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্য রয়েছে কোঠর শাস্তি, এ কারণে যে, তারা হিসাব দিবসকে ভূলে যায়।)) [সূরা ছোয়াদ, আয়াত-২৬]
يوم الدين - ইয়াওমুদ্ দ্বী-নঃ আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَإِنَّ الْفُجَّارَ لَفِي جَحِيمٍ - يَصْلَوْنَهَا يَوْمَ الدِّينِ
[سورة الانفطار، الآيتان:14-15]
অর্থঃ ((এবং পাপিষ্টরা থাকবে জাহান্নামে, তারা বিচার দিবসে তথায় প্রবেশ করবে।)) [সূরা আল- ইনফিতার, আয়াত ১৪-১৫]
الطّامة - আত্ ত্ব-মাহঃ আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
فَإِذَا جَاءتِ الطَّامَّةُ الْكُبْرَى
[سورة النازعات، الآية:34]
অর্থঃ ((অতঃপর যখন মহাসংকট এসে যাবে।)) [সূরা আন্ নাযিআত, আয়াত-৩৪]
الواقعة - আল ওয়া-কিয়াহঃ আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
إِذَا وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ
[سورة الواقعة، الآية:1]
অর্থঃ ((যখন কিয়ামতের ঘটনা ঘটবে।)) [সূরা আল-ওয়াকিয়াহ্, আয়াত-১]
الحاقة - আল হা-ক্কাহঃ আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
الْحَاقَّةُ - مَا الْحَاقَّةُ
[سورة الحاقة، الآيتان:1-2]
অর্থঃ ((সু-নিশ্চিত বিষয়, সু নিশ্চিত বিষয় কি?)) [সূরা আল-হাক্কাহ, আয়াত-১-২]
الصّاخة - আস্ সা-খখাহঃ আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
فَإِذَا جَاءتِ الصَّاخَّةُ
[سورة عبس، الآية:33]
অর্থঃ ((অতঃপর যে দিন কর্ণ বিদারক আওয়াজ আসবে।)) [সূরা আবাসা, আয়াত-৩৩]
الغاشية - আল গা-শিয়াহঃ আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْغَاشِيَةِ
[سورة الغاشية، الآية:1]
অর্থঃ ((আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী কিয়ামতের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি?)) [সূরা আল-গাশিয়াহ,আয়াত-১]

(২) শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনার নিয়মঃ শেষ দিবসের প্রতি সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত ভাবে ঈমান আনা।
শেষ দিবসের প্রতি সংক্ষিপ্ত ঈমান আনা হলোঃ এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, এমন একটি দিন রয়েছে,যে দিন আল্লাহ তা'আলা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলকে একত্রিত করবেন। প্রত্যেকেই স্ব-স্ব কর্মের প্রতিদান প্রদান করবেন। একদল জান্নাতী হবে,অপর দল জাহান্নামী হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
قُلْ إِنَّ الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ - لَمَجْمُوعُونَ إِلَى مِيقَاتِ يَوْمٍ مَّعْلُومٍ
[سورة الواقعة، الآيتان:49-50]
অর্থঃ ((বলুনঃ নিশ্চয় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলেই একটি নির্ধারিত দিনে একত্রিত হবে।)) [সূরা আল-ওয়াকিয়াহ্, আয়াত ৪৯-৫০]
শেষ দিবসের প্রতি বিস্তারিত ঈমান হলোঃ মৃত্যুর পর যা কিছু সংঘঠিত হবে তার প্রতি বিস্তারিত ঈমান আনা। আর ইহা নিম্নে বর্ণিত বিষয় গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে-
প্রথমতঃ ফিৎনাতুল কবর বা কবরের পরিক্ষা। আর তা হলো- মৃত্যু ব্যক্তিকে দাফনের পর তাকে তার প্রভু দ্বীন ও নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা বা প্রশ্ন করা হবে। অতঃপর যারা ঈমান এনেছিল, তাদেরকে আল্লাহ সত্যের উপর অটল রাখবেন। যেমন হাদীসে এসেছেঃ
ربي الله، وديني الإسلام ونبي محمد صلى الله عليه وسلم
[متفق عليه]
অর্থঃ ((যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হবে, সে বলবেঃ আমার প্রভু আল্লাহ আমার দ্বীন আল-ইসলাম, আমার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম।)) [বুখারী ও মুসলিম] ফিরিশতাদ্বয়ের প্রশ্ন করা ও তাঁর পদ্ধতি, মু'মিনরা ও মুনাফিকরা কি উত্তর দিবেন এ সম্পর্কে বর্ণিত সকল হাদীসের প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব।
দ্বিতীয়তঃ কবরের শাস্তি ও শান্তি। কবরের শাস্তি ও শান্তির প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব। নিশ্চয় ইহা (কবর) জাহান্নামের গর্তের একটি গভীর গর্ত, অথবা জান্নাতের বাগানের একটি বাগান। আর কবর আখিরাতের প্রথম ধাপ বা স্টেশন। যে ব্যক্তি কবর হতে মুক্তি পাবে (তার জন্য) কবরের পরে ধাপ গুলো হতে মুক্তি পাওয়া সহজ হবে। আর যে ব্যক্তি, কবর হতে মুক্তি পাবেনা তার জন্য এর পরের ধাপ গুলো মুক্তি পাওয়া আরো কঠিন হবে। যার মৃত্যু হল তখন হতে তার কিয়ামত শুরু হয়ে গেল। অতঃপর আত্মা ও শরীর, উভয়ে কবরে শাস্তি বা শান্তি ভোগ করবে। আর কখনো কখনো শুধু আত্মা ভোগ করবে। আর কবরের আযাব বা শাস্তি শুধু মাত্র যালেমদের জন্য, আর শান্তি শুধু মাত্র সত্যবাদী মু'মিনদের জন্য। আর মৃত্যু ব্যক্তি কবর জীবনের শাস্তি অথবা শান্তি প্রাপ্ত হবে, চাই ভূ-গর্ভস্ত করা হোক বা নাই হোক। যদি ও মৃত্যু ব্যক্তিকে আগুনে জালিয়ে দেওয়া হয়, অথবা পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়, অথবা হিংস্র পশু পাখি খেয়ে ফেলে তার পরও সে এ শাস্তি অথবা শান্তি ভোগ করবে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوّاً وَعَشِيّاً وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ أَدْخِلُوا آلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ
[سورة غافر، الآية:46]
অর্থঃ ((সকালে ও সন্ধায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয় এবং যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে, সে দিন আদেশ করা হবে, ফেরাউন গোত্রকে কঠিনতর আযাবে দাখিল কর।)) [সূরা গাফির, আয়াত-৪৬] রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
فلو لا أن لا تدافنوا لدعوت الله أن يسمعكم من عذاب القبر
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((হায় !! যদি তোমরা (তাদেরকে) দাফন না করতে তা হলে আমি আল্লাহর কাছে দোআ করতাম তোমাদেরকে কবরের আযাব শুনানোর জন্য। [মুসলিম]
তৃতীয়তঃ শিঙ্গায় ফুৎকার। শিঙ্গা হল বাঁশী স্বরূপ, যাতে ইস্রাফীল 'আলাইহিস্ সালাম ফুৎকার দিবেন। প্রথম ফুৎকার দেওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ যা জীবিত রাখবেন তা ছাড়া সকল সৃষ্টজীব মৃত্যুবরণ করবে। দ্বিতীয় ফুৎকার দেওয়ার সাথে সাথেই পৃথিবী সৃষ্টি হতে কিয়ামত পর্যন্ত যত সৃষ্টিজীবের আর্বিভাব হয়েছিল, তারা সকলেই উঠে যাবে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَاء اللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُم قِيَامٌ يَنظُرُونَ
[سورة الزمر، الآية:68]
অর্থঃ ((শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, ফলে আসমান ও যমিনে যারা আছে সকলে বেহুঁশ হয়ে যাবে, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন সে ব্যতীত। অতঃপর আবার ফুৎকার দেওয়া হবে, তৎক্ষনাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে দেখতে থাকবে।)) [সূরা আয্-যুমার, আয়াত-৬৮] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
ثم ينفخ في الصور فلا يسمعه أحد إلا أصغى ليتا ورفع ليتاً ثم لا يبقى أحد إلا صعق ،ثم ينزل الله مطرا كأنه الطل, فتنبت منه أجساد الناس, ثم ينفخ فيه أخرى فإذا هم قيام ينظرون
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((অতঃপর শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়ার সাথে সাথে সকলেই স্কান্ধ উচু করবে। অতঃপর সকলেই জ্ঞানহারা হয়ে পড়ে যাবে। তার পর আল্লাহ হালকা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। বৃষ্টি হতে মানুষের দেহ তৈরী হবে। তার পর সিঙ্গায় দ্বিতীয় ফুৎকার দেওয়ার সাথে সাথেই সকলে দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে।)) [মুসলিম]
চতুর্থতঃ পুনরুত্থান। তা হলো শিঙ্গায় দ্বিতীয় ফুঁক দেওয়ার সময় আল্লাহ সকল মৃতদের জীবিত করবেন। তারা সকলে সমগ্র বিশ্বের প্রতি পালকের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা শিঙ্গায় ফোঁকা ও প্রত্যেক আত্মাকে স্ব-শরীরে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিলে সকল মানুষ তাদের কবর হতে দাঁড়িয়ে জুতা বিহীন নাঙ্গাপা, বস্ত্র-বিহীন-উলঙ্গ শরীর, খাৎনা বিহীন ও দাঁড়ি-গোঁফ বিহীন অবস্থায় দ্রুত ময়দানের দিকে ছুটে যাবে। ময়দানের অবস্থান দীর্ঘ হবে, সূর্য তাদের নিকটবর্তী হবে, সূর্যের উত্তাপ বেড়ে যাবে। এ উত্তপ্ত ও কঠিন অবস্থান দীর্ঘ হওয়ায় শরীর হতে নির্গত ঘামে হাবু-ডুবু খাবে, কারো ঘাম পায়ের দু'গিঁঠা পর্যন্ত, কারো দু'হাটু পর্যন্ত, কারো মাজা পর্যন্ত, কারো বক্ষ পর্যন্ত, কারো দু'কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছবে। আর কেউ-সম্পূর্ণ ভাবে হাবুডুবু খাবে, এ সব হলো তাদের (ভাল-মন্দ) কর্ম অনুপাতে। পুনরুত্থান সত্য ও নিশ্চিত, যা ইসলামী শরীয়া (কুরআন ও হাদীস) অনুভূতি শক্তি ও বুদ্ধি-বিবেক দ্বারা প্রমাণিত।
ইসলামী শরীয়াঃ এর স্বপক্ষে প্রমাণ কুরআনে অনেক আয়াত ও নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনেক বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
قُلْ بَلَى وَرَبِّي لَتُبْعَثُنَّ
[سورة التغابن، الآية:7]
অর্থঃ ((বলুন, অবশ্যই হবে, আমার পালনকর্তার কসম, তোমরা নিশ্চয় পুনরুত্থিত হবে।)) [সূরা আত্-তাগাবুন, আয়াত-৭] তিনি আরো বলেনঃ
كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيدُهُ
[سورة الأنبياء، الآية:104]
অর্থঃ ((যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব।)) [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত-১০৪] রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
ثم ينفخ في الصور فلا يسمعه أحد إلا أصغى ليتاً ورفع ليتاُ، ثم لا يبقى أحد إلا صقع، ثم ينزل الله مطراً كأنه الطل أو الظل- شك الراوي - فتنبت أجساد الناسن ثم ينفخ فيه أخرى فإذا هم قيام ينظرون
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((অতঃপর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার সাথে সাথে সকলেই স্কান্ধ উচু করবে অতঃপর সকলেই জ্ঞান হারা হয়ে পড়ে যাবে। তার পর আল্লাহ হালকা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। বৃষ্টি হতে মানুষের দেহ তৈরী হবে। তার পর শিঙ্গায় দ্বিতীয় ফুঁক দেওয়ার সাথে সাথেই সকলে দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে।)) [মুসলিম] আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
قَالَ مَنْ يُحْيِي الْعِظَامَ وَهِيَ رَمِيمٌ - قُلْ يُحْيِيهَا الَّذِي أَنشَأَهَا أَوَّلَ مَرَّةٍ وَهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيمٌ
[سورة يس، الآيتان:78-79]
অর্থঃ ((বলে, কে জীবিত করবে অস্থি সমূহকে যখন সে গুলো গলে পচে যাবে? বলুন, যিনি প্রথমবার সে গুলোকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জীবিত করবেন। তিনি সর্ব প্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে অবগত।)) [সূরা ইয়াসীন, আয়াত ৭৮-৭৯]
الحس - (আল হিস্স) বা অনুভূতি হতে দলীল হলোঃ আল্লাহ এই পৃথিবীতে অনেক মৃত্যুকে জীবিত করে তাঁর বান্দাদেরকে দেখিয়েছেন। আর এ বিষয়ে সূরা বাক্বারায় পাঁচটি উপমা রয়েছে, মূসা 'আলাইহিস্ সালামের সম্প্রদায় যাদেরকে আল্লাহ তাদের মৃত্যুর পর জীবিত করেছিলেন। বনী ইস্রাঈলের এক নিহিত ব্যক্তিকে জীবিত করেছিলেন। ঐ সমপ্রদায়কে জীবিত করেছিলেন-যারা মৃত্যুর ভয়ে, নিজেদের গ্রাম ত্যাগ করেছিল। ঐ ব্যক্তিকে যে, জনপদ দিয়ে অতিক্রম করেছিল, ইব্রাহীম 'আলাইহিস্ সালামের পাখি সমূহকে।
العقل - (আল আক্বল) বা বিবেক হতে দলীল হলোঃ ইহা দু'ভাবে হতে পারেঃ
(ক) আল্লাহ আসমান ও যমিন এবং এতদ্বয়ের মধ্যে যা রয়েছে সকলকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ আসমান যমিন প্রথমে সৃষ্টি করেছেন। যিনি প্রথম সৃষ্টির উপর ক্ষমতাবান তিনি (তাকে) পূনরায় সৃষ্টি করার ব্যাপারে অপারগ নন।
(খ) যমিন শুষ্ক ও নিজীর্ব হয়ে যায়, অতঃপর বৃষ্টি অবতীর্ণ করে যমিনকে সতেজ ও সজীব করে তুলেন, সর্ব প্রকার সবুজ-শ্যামল গাছ পালা উৎপন্ন হয়, সুতরাং যিনি এ মৃত যমিনকে জীবিত করতে সক্ষম তিনিই মৃতদের পূনরায় জীবিত করাতেও সক্ষম।
পঞ্চমতঃ হাশর, হিসাব-নিকাশ এবং প্রতিদান ও প্রতিফল। আমরা ঈমান আনবো যে, সকল দেহের হাশর নাশর হবে, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তাদের মাঝে বিচারে ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে, এবং সকল সৃষ্টিজীবকে স্বীয় কৃত কর্মের প্রতিদান ও প্রতিফল প্রদান করা হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
َحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَداً
[سورة الكهف، الآية:47]
অর্থঃ ((এবং আমি তাদেরকে একত্রিত করব, অতঃপর তাদের কাউকে ছাড়বনা।)) [সূরা আল-ক্বাহাফ, আয়াত-৭৪] তিনি আরো বলেনঃ
فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَّاضِيَةٍ - إِنِّي ظَنَنتُ أَنِّي مُلَاقٍ حِسَابِيهْ - فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَيَقُولُ هَاؤُمُ اقْرَؤُوا كِتَابِيهْ
[سورة الحاقة، الآيات:19-21]
অর্থঃ ((অতঃপর যার আমল নামা ডান হাতে দেয়া হবে, সে বলবেঃ নাও, তোমরা ও আমলনামা পড়ে দেখ। আমি জানতাম যে, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। অতঃপর সে সুখী জীবন-যাপন করবে।)) [সূরা আল-হাক্কাহ, আয়াত ১৯-২১] তিনি আরো বলেনঃ
وَلَمْ أَدْرِ مَا حِسَابِيهْ - وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِشِمَالِهِ فَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي لَمْ أُوتَ كِتَابِيهْ
[سورة الحاقة، الآيتان:25-26]
অর্থঃ ((অতঃপর যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবেঃ হায় আমায় যদি আমার আমলনামা না দেয়া হতো। আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব।)) [সূরা আল-হাক্কাহ, আয়াত ২৫-২৬]
অতঃপর হাশর হলোঃ মানুষদেরকে তাদের হিসাব-নিকাশের জন্য ময়দানে একত্রিত করা।
হাশর ও পুনরুত্থানের মধ্যে পার্থক্য-
হাশর হলোঃ পুনরুত্থিত ব্যক্তিদেরকে অবস্থান ময়দানে একত্রিত করা।
পুনরুত্থান হলোঃ দেহ সমূহকে পুনরুজ্জীবিত করা।
হিসাব, নিকাশ ও প্রতিফলঃ আল্লাহু তা'বারাকা ও তা'আলা তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর সামনে দাঁড় করাবেন, ও তাদেরকে তাদের সম্পাদিত কর্ম সম্পর্কে অবগত করবেন। অতঃপর মু'মিন মুত্তাকীনদের হিসাব নিকাশ হল, শুধু মাত্র তাদের নিকট তাদের কর্ম পেশ করা হবে। যাতে তারা তাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ বুঝতে পারে, যা (অনুগ্রহ) আল্লাহ তাদের নিকট হতে দুনিয়াতে গোপন রেখেছিলেন। আর আল্লাহ আখিরাতে তাদেরকে মাফ করে দিয়েছেন। আর তাদের হাশর হবে তাদের ঈমান অনুপাতে। ফিরিশতারা তাদেরকে স্বাগত জানাবে ও জান্নাতে প্রবেশের সুসংবাদ প্রদান করবে, আর তাদেরকে অস্থিরতা ও সকল প্রকার ভয়-ভীতি এবং এ কঠিন দিনের ভয়াবহতা হতে নিরাপত্তা দিবে,অতঃপর তাদের মূখমন্ডল উজ্জল হবে। আর মুখমন্ডল সে দিন হাসি-খুশী, আনন্দ-উৎফুল্ল সুসংবাদ প্রাপ্ত হবে। অতঃপর বিমুখ মিথ্যাবাদীদের (কাফেরদের) হিসাব নিকাশ অত্যান্ত কঠিনভাবে হবে। শুক্ষ্ন প্রত্যেকটি ছোট বড় কর্মের। কিয়ামত দিবসে তাদেরকে তাদের মুখের উপর টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামে ফেলা হবে, তাদেরকে লাঞ্চিত করার জন্য ও তাদের কৃত কর্মের ফল হিসাবে এবং তাদের মিথ্যা বলার কারণে।
কিয়ামত দিবসে সর্ব প্রথম হিসাব নেওয়া হবে আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মাতের, তাদের সাথে সত্তর হাজার লোক তাদের পূর্ণ তাওহীদের বদৌলাতে বিনা হিসাবে ও বিনা শাস্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা ঐ সকল লোক নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের ভাষায় যাদের গুণ বর্ণনা করেছেন, তারা কারো নিকট ঝাড় ফুঁক অনুসন্ধান করেননি লৌহ্ জাতীয় কোন কিছুর ছেঁক দিয়ে চিকিৎসা নেননি। কোন দিন বদ ও নেক ফল গ্রহণ করেননি। আর তারা তাদের প্রভুর উপরেই ভরসা করতেন। আর তাঁদের মধ্যে হলেন প্রসিদ্ধ সাহাবী উক্কাশা বিন মিহসান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)। আর বান্দার সর্ব প্রথম হিসাব নেওয়া হবে আল্লাহর হক্ব-সালাতের (নামাযের)। এবং মানুষের মাঝে সর্ব প্রথম ফায়সালা করা হবে রক্তপাতের।
ষষ্ঠতঃ হাউজ। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাউজের প্রতি ঈমান আনবো। আর ইহা বিশাল হাউজ ও সম্মানিত অবতরণ স্থান। কিয়ামতের মাঠে জান্নাতের আল-কাউসার নামক নদী হতে শরাব প্রবাহিত হবে। এতে অবতরণ করবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মু'মিন উম্মাতেরা।
হাউজের কিছু বৈশিষ্ট্যঃ ইহার শারাব দুধের চাইতে সাদা, বরফের চাইতে ঠান্ডা, মধুর চাইতে অধিক মিষ্টি। মিশকের চাইতে সুগন্ধি, ইহা সুপ্রসস্ত যার দৈর্ঘ ও প্রস্থ সমান, এর প্রতিটি প্রান্তের আয়তন এক মাসের পথের সমান। এতে জান্নাত হতে প্রবাহিত দু'টি নালা রয়েছে। আর এর পানি পাত্র আকাশের তারকা রাজির চাইতে অধিক । যে ব্যক্তি ইহা হতে একবার পানি পান করবে, সে আর কখনও পিপাসিত হবে না। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
حوضي مسيرة شهر، ماؤه أبيض من اللبن وريحه أطيب من المسك، وكيزانه كنجوم السماء، من شرب منه فلا يظمأ أبداً
[رواه البخاري]
অর্থঃ ((আমার হাউজের আয়তন এক মাসের পথ সমতুল্য, তার পানি দুধের চাইতে সাদা ও তার ঘ্রাণ মিশকের চাইতে সুগন্ধি, তার পানি পাত্র আকাশের তারকা রাজির সংখ্যার ন্যায়। যে ব্যক্তি ইহা হতে একবার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবেনা।)) [বুখারী]
সপ্তমতঃ শাফায়াহ্। যখন সেই মহান প্রান্তরে মানুষের বিপদ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে এবং সেথায় তাদের অবস্থান দীর্ঘ হবে। তখন তারা এ প্রান্তরের ভয়াবহ বিপদ হতে মুক্তি পাওয়ার জন্যে তাদের প্রভুর নিকট সুপারিশ করা হোক এর প্রচেষ্টা করবে। রাসূলদের মধ্য হতে যারা উলুল আজম (নূহ, ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসা) (আলাইহিমুস সালাম) তাঁরা অপারগতা স্বীকার করবেন। পরে ইহা সর্ব শেষ রাসূল আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকটে পৌঁছাবে যার আগের ও পরের গুনাহ্ আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন স্থানে দাঁড়াবেন যে স্থানে আগের ও পরের সকলেই তাঁর প্রশংসা করবে। এবং এর দ্বারা তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহা সম্মান ও উঁচু মর্যাদা প্রকাশিত হবে। তার পর আরশের নিচে সিজদা করবেন, আল্লাহ তাঁর নিকট অনেক প্রশংসা, উপযুক্ত আদেশ ইলহাম করবেন। তিনি সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বারা তাঁর (আল্লাহর) প্রশংসা করবেন ও তাঁর মর্যাদা বর্ণনা করবেন। তার পর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রভুর নিকট (তাদের জন্য) সুপারিশ করার অনুমতি চাইবেন। আল্লাহ তা'আলা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সৃষ্টিজীবের সুপারিশ করার জন্য ঐ অনুমতি দিবেন। যাতে বান্দাদের মাঝে অসহনীয় দুঃখ-কষ্ট ও চিন্তা ভোগের পর সুষ্ট ফায়সালা করা হয়। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
إن الشمس تدنو يوم القيامة حتى يبلغ العرق نصف الأذن فبينما هم كذلك، استغاثوا بآدم، ثم بإبراهيم، ثم بموسى، ثم بعسيى، ثم بمحمد صلى الله عليه وسلم. فيشفع ليقضي بين الخلق، فيمشى حتى يأخذ بحلقة الباب، فيؤمئذ يبعثه الله مقاماً محموداً يحمده أهل الجمع كلهم
[رواه البخاري]
অর্থঃ ((কিয়ামত দিবসে সূর্য নিকটে হবে। এমনকি ঘাম অর্ধ কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। তারা এই অবস্থাতেই থাকবে। ফলে তারা আদম 'আলাইহিস্ সালাম অতঃপর ইব্রাহীম 'আলাইহিস্ সালাম অতঃপর মূসা 'আলাইহিস্ সালাম অতঃপর ঈসা 'আলাইহিস্ সালাম অতঃপর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে প্রার্থনা করবে। অতঃপর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুপারিশ করবেন। যাতে সৃষ্টিজীবের মাঝে ফায়সালা সুসম্পূর্ণ করা হয়। অতঃপর তিনি জান্নাতের দিকে অগ্রসর হবেন, ও জান্নাতের দরজার কড়া (খোলার জন্য) ধরবেন। আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশংসিত স্থানে অবতরণ করাবেন। সে স্থানের সকলে প্রশংসা করবে। [বুখারী]
এ মহান শাফায়াত আল্লাহ একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য নির্দিষ্ট করেছেন। এ ছাড়া তিনি আরো অনেক শাফায়াতের অধিকারী হবেন-
(১) জান্নাতীদের জান্নাতে প্রবেশের অনুমুতির জন্যে তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শাফায়াত। তার প্রমাণ- নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
آتي باب الجنة يوم القيامة فاستفتح،فيقول الخازن من أنت؟ قال فأقول محمد فيقول بك أمرت لا أفتح لأحد قبلك
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((আমি কিয়ামত দিবসে জান্নাতের দরজার নিকটে আসবো, দরজা খোলার অনুমতি চাবো। অতঃপর জান্নাতের প্রহরী বলবেন, আপনি কে? আমি উত্তরে বলবঃ আমি মুহাম্মাদ, অতঃপর প্রহরী বলবেঃ আপনার জন্যই শুধু দরজা খোলার আদেশ প্রাপ্ত হয়েছি, আপনার পূর্বে কারো জন্য (দরজা) খুলিনি।)) [মুসলিম]
(২) তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শাফায়াত ঐ সকল ব্যক্তির জন্য যাদের নেকী ও বদী বা সৎ কাজ ও অসৎ কাজ সমান হয়েগেছে। তাদের জান্নাতে প্রবেশের ব্যাপারে শাফায়াত করবেন। ইহা কিছু বিদ্যানদের অভিমত। কিন্তু এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম হতে কোন সহীহ্ হাদীস বর্ণিত হয়নি।
(৩) তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফায়াত, ঐ সমপ্রদায়ের জন্যে যারা জাহান্নামের অধিকারী হয়ে গেছে, তাদেরকে জাহান্নামে না দেওয়ার ব্যাপারে। এর প্রমাণ হলো- নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীসঃ
شفا عتي لأهل الكبائر من أمتي
[أبوا داود]
অর্থঃ ((আমার উম্মাতের মধ্যে যারা কাবীরাহ্ গোনাহ্ করেছে তাদের জন্য আমার শাফায়াত। [আবু দাউদ]
(৪) তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফায়াত, জান্নাতে জান্নাতীদের মর্যাদা বৃদ্ধির ব্যাপারে। তার প্রমাণ- নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীসঃ
اللهم اغفر لأبي سلمة وأرفع درجته في المهديين
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((হে আল্লাহ আবূ সালমাকে মাফ কর এবং সঠিক পথ প্রাপ্তদের সাথে তাঁর মর্যাদা বাড়িয়ে দাও।)) [মুসলিম]
(৫) তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফায়াত, ঐ সকল সমপ্রদায়ের জন্য যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে বিনা হিসাবে ও বিনা শাস্তিতে। এর প্রমাণ- উক্কাশাহ্ বিন মিহ্সান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর হাদীসঃ

সত্তর হাজার লোকের ব্যাপারে, যারা বিনা হিসাবে ও বিনা শাস্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার (উক্কাশাহ্) জন্য দোআ করলেনঃ
اللهم اجعله منهم
[متفق عليه]
অর্থঃ ((হে আল্লাহ্ তাকে (উক্কাশাকে) তাদের অন্তর্ভুক্ত করে দাও।)) [বুখারী ও মুসলিম]
(৬) নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামএর উম্মাতের মধ্যে হতে যারা কাবীরাহ্ গোনাহ করায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তাদেরকে জাহান্নাম হতে বের করার ব্যাপারে তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফায়াত। এর প্রমাণ হলো- নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীসঃ
شفاعتي لأهل الكبائر من أمتي
[رواه أبو دواد]
অর্থঃ ((আমার উম্মাতের কাবীরাহ্ গোনাহ্ কারীদের জন্য আমার শাফায়াত।)) [আবু দাউদ] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আরো একটি হাদীস হলোঃ
يخرج قوم من النار بشفاعة محمد صلى الله عليه وسلم فيدخلون الجنة يسمون الجهنميين
[رواه البخاري]
অর্থঃ ((এক দল লোক নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শাফায়াতে জাহান্নাম হতে বের করা হবে, অতঃপর তারা জান্নাতে যাবে। তাদেরকে জাহান্নামী বলে নাম করণ করা হবে।)) [বুখারী]
(৭) যারা শাস্তির হক্বদার হবে তাদের শাস্তি হালকা করার ব্যাপারে তাঁর শাফায়াত, যেমন-তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাচা আবু তালেবের জন্য শাফায়াত। এর প্রমাণ- নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস হলোঃ
لعله تنفعه شفاعتي يوم القيامة فيجعل في ضحضاح من النار يبلغ كعبيه يغلي منه دماغه
[متفق عليه]
অর্থঃ ((সম্ভবত কিয়ামতের দিবসে আমার শাফায়াত তার শাস্তি লাঘবে উপকারে আসবে, তাই শাস্তি হিসাবে শুধু পায়ের গিঠা পর্যন্ত দু'টি জুতা পরিয়ে দেয়া হবে,ফলে মাথার মগজ ফুটতে থাকবে।)) [বুখারী ও মুসলিম]
আল্লাহর নিকট শাফায়াত গ্রহণ হওয়ার জন্য দু'টি শর্ত রয়েছে-
(ক) শাফায়াত কারীর ও শাফায়াত কৃত ব্যক্তির প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকতে হবে।
(খ) শাফায়াত কারীর শাফায়াত করার ব্যাপারে আল্লাহর অনুমতি থাকতে হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَى
[سورة الأنبياء، الآية:28]
অর্থঃ ((তারা শুধু তাদের জন্যে সুপারিশ করে, যাদের প্রতি, আল্লাহ সন্তুষ্ট।)) [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত-২৮] তিনি আরো বলেনঃ
مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ
[سورة البقرة، الآية:255]
অর্থঃ ((তাঁর (আল্লাহর) অনুমতি ব্যতীত সুপারিশ করার কে অধিকার রাখে?)) [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত-২৫৫]
অষ্টমতঃ মিযান বা মানদন্ড। মীযান বা মানদন্ড সত্য এর প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব। আর ইহা (মীযান বা মানদন্ড) আল্লাহ্ কিয়ামত দিবসে স্থাপন করবেন, বান্দাদের আমল মাপার ও তাদের কর্মের প্রতিদান প্রদানের জন্য। ইহা বাস্তব মিযান বা মানদন্ড কাল্পনিক নয়, এর দু'টি পাল্লা ও রশি রয়েছে, এর দ্বারা কর্ম অথবা আমলনামা অথবা স্বয়ং কর্ম সম্পাদন কারীকে মাপা হবে। সবই মাপা হবে, তবে ওজন ভারি-হালকার বিষয়বস্তু হবে শুধু কর্ম। কর্ম সম্পাদনকারী ও আমল নামা নয়। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَنَضَعُ الْمَوَازِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئاً وَإِن كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا وَكَفَى بِنَا حَاسِبِينَ
[سورة الأنبياء، الآية:47]
অর্থঃ ((আমি কিয়ামত দিবসে ন্যায় বিচারের মিযান বা মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি জুলুম হবে না। যদি কোন আমল সরিষার দানা পরিমানও হয় আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহনের জন্য আমিই যথেষ্ট।)) [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত-৪৮] তিনি আরো বলেনঃ
وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُوْلَـئِكَ الَّذِينَ خَسِرُواْ أَنفُسَهُم بِمَا كَانُواْ بِآيَاتِنَا يِظْلِمُونَ - وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ فَمَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
[سورة الأعراف، الآيتان:8-9]
অর্থঃ ((আর সে দিন যথার্থই ওজন হবে। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারি হবে, তারাই সফলকাম হবে। এবং যাদের পাল্লা হাল্কা হবে, তারাই এমন হবে, যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে। কেননা,তারা আমার আয়াত সমূহ অস্বীকার করতো।)) [সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত ৮-৯] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
الطهور شطر الإيمان، والحمد لله تملأ الميزان
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((পবিত্রতা অর্জন করা ঈমানের অর্ধেক। আল-হামদুলিল্লাহ্ (সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য) বাক্যটি ওজনের পাল্লাকে পরিপূর্ণ করে দেয়।)) [মুসলিম] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ
يوضع الميزان يوم القيامة فلو وزن فيه السماوات والأرض لوسعت
[رواه الحاكم]
অর্থঃ ((কিয়ামত দিবসে এমন মিযান বা মানদন্ড স্থাপন করা হবে, তাতে যদি সাত আসমান ও সাত জমিনও মাপা হয় সম্ভব হবে।))
নবমতঃ আস্ সিরাত বা পুল সিরাত। আর আমরা পুল সিরাতের প্রতি ঈমান আনবো। আর তা হলো জাহান্নামের পিঠের উপর স্থাপিত পুল, যা ভয়-ভীতি সন্ত্রস্ত অতিক্রম স্থল বা পথ। এর উপর দিয়ে মানুষ জান্নাতের দিকে অতিক্রম করবে। কেউ অতিক্রম করবে চক্ষের পলকের ন্যায়। কেউ অতিক্রম করবে বিজলীর ন্যায়। কেউ বাতাসের ন্যায়। কেউ পাখির ন্যায়। কেউ ঘোড়ার ন্যায় চলবে। কেউ মুসাফিরের ন্যায় চলবে। কেউ ঘন ঘন পা রেখে চলবে। সর্ব শেষ যারা অতিক্রম করবে তাদেরকে টেনে ফেলা হবে। সকলেই অতিক্রম করবে তাদের কর্মের ফলাফল অনুপাতে। এমন কি যার আলো তার পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুলের পরিমাণ হবে সেও অতিক্রম করবে। কাউকে থাবা মেরে জাহান্নামে ফেলে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি পুল সিরাত অতিক্রম করতে পারবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সর্ব প্রথম আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতঃপর তাঁর উম্মাত পুল সিরাত পাড়ি দিবেন। আর সে দিন একমাত্র রাসূলগণ কথা বলবেন। রাসূল (আলাইহিমুস সালাম) দের কথা হবে।
اللهم سلم سلم
অর্থঃ ((হে আল্লাহ্ মুক্তি দাও, মুক্তি দাও।))
জাহান্নামে পুল সিরাতের দু'ধারে হুকের ন্যায় কন্টক থাকবে, এর সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেহ্ জানেনা। সৃষ্টি-জীব হতে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করবেন তাকে থাবা মেরে (জাহান্নামে) ফেলে দেয়া হবে।
পুল সিরাতের কিছু বর্ণনাঃ ইহা তরবারীর চাইতে ধারালো ,আর চুলের চাইতে সূক্ষ্ন ও পিচ্ছিল জাতীয়। ইহাতে আল্লাহ্ যাদের পা স্থীর রাখবেন, শুধু মাত্র তাদেরই পা স্থীর থাকবে, আর ইহা অন্ধকারে স্থাপিত হবে। আমানত ও আত্নীয়তা বন্ধনকে পুল সিরাতের দু'পার্শে দন্ডায়মান অবস্থায় রাখা হবে, যারা ইহা সংরক্ষন করেছেন তাদের স্বপক্ষে, আর যারা সংরক্ষন করেনি তাদের বিপক্ষে সাক্ষী দেওয়ার জন্য। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوا وَّنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيّاً - وَإِن مِّنكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْماً مَّقْضِيّا
[سورة مريم، الآيتان:71-72]
অর্থঃ ((তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তথায় (পুল সিরাতে) পৌঁছুবেনা এটা আপনার পালনকর্তার অনিবার্য ফায়সালা। অতঃপর আমি পরহেযগারদেরকে উদ্ধার করব এবং জালেমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দিব।)) [সূরা মারইয়াম, আয়াত ৭১-৭২] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেনঃ
ويضرب الصراط بين ظهراني جنهم فأكون أنا وأمتي أول من يجيزه
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((জাহান্নামের পিঠের উপর পুল সিরাত স্থাপন করা হবে, আর সর্ব প্রথম আমি ও আমার উম্মাত তা অতিক্রম করবো।)) [মুসলিম] নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ
ويضرب جسر جهنم..فأكون أول من يجيز ودعاء الرسل يومئذ اللهم سلم سلم
[متفق عليه]
অর্থঃ ((জাহান্নামের পুল স্থাপন করা হবে, অতঃপর আমিই সর্ব প্রথম অতিক্রম করবো। আর সে দিন রাসূলদের দোআ হবে, আল্লাহুম্মা সাল্লিম, সাল্লিম, (হে আল্লাহ! মুক্তি দাও, মুক্তি দাও)।)) [বুখারী, মুসলিম] আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ
بلغني أن الجسر أدق من الشعر وأحد من السيف
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((আমি সংবাদ প্রাপ্ত হয়েছি যে, পুল-সিরাত চুলের চাইতে সূক্ষ্ন আর তরবারীর চাইতে ধারালো হবে।)) [মুসলিম] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
وترسل الأمانة والرحم فتقوم على جنبي الصراط يميناً وشمالاً، فيمر أولكم كالبرق... ثم كمر الريح، ثم كمر الطير وشد الرحال، تجزي بهم أعمالهم، ونبيكم قائم على الصراط يقول: رب سلم سلم، حتى تعجز أعمال العباد ،حتى يجئ الرجل فلا يستطيع السير إلا زحفاً قال وعلى حافتي الصراط كلاليب معلقة مأمورة بأخذ من أمرت به فمخدوش ناج ومكدوس في النار
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((আমানত ও আত্নীয়তার বন্ধনকে প্রেরণ করা হবে, অতঃপর পুল সিরাতের ডানে ও বামে দাঁড়াবে, তোমাদের মধ্যে সর্ব প্রথম যারা অতিক্রম করবে, তারা বিজলীর ন্যায় অতিক্রম করবে, তার পর যারা অতিক্রম করবে তারা বাতাসের ন্যায়। তার পর পাখির ন্যায় অতিক্রম করবে, তার পর মুসাফিরের ন্যায় অতিক্রম করবে, তাদের কর্ম তাদেরকে অতিক্রম করাবে। আর তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুল সিরাতের পার্শ্বে দন্ডায়মান থাকবেন, এবং বলবেনঃ হে প্রভু মুক্তি দাও, মুক্তি দাও। এভাবে বান্দাদের কর্ম অপারগ হয়ে যাবে, এমন কি কিছু লোক হামাগুড়ি দিয়ে অতিক্রম করবে। পুল সিরাতের দু'ধারে ঝুলন্ত হুকের ন্যায় কন্টক থাকবে, যাদেরকে গ্রেফতার করার আদেশ প্রাপ্ত হয়েছে তাদেরকে গ্রেফতার করবে। অতঃপর কিছু আহত হয়ে মুক্তি পাবে, আর কিছু চাপাচাপি করে জাহান্নামে পড়ে যাবে। [মুসলিম ]
দশমতঃ আল কানত্বারাহ্। আমরা ঈমান আনবো এ কথার প্রতি যে, মু'মিনেরা পুল সিরাত অতিক্রম করে ক্বানতারাতে অবস্থান করবে বা দাঁড়াবে। আর ইহা (কানত্বারাহ্) হল জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থান, এখানে ঐ সকল মু'মিনদেরকে দাঁড় করানো হবে, যারা পুল সিরাত অতিক্রম করে এসেছে এবং জাহান্নাম হতে মুক্তি পেয়েছে, জান্নাতে যাওয়ার পূর্বে একে অপরের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্যে (এখানে দাঁড় করানো হবে)। অতঃপর তাদের পরি-শুদ্ধির পর জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
يخلص المؤمنون من النار فيحبسون على قنطرة بين الجنة والنار، فيقتص لبعضهم من بعض مظالم كانت بينهم في الدنيا حتى إذا هذبوا ونقوا أذن لهم في دخول الجنة، فوالذي نفس محمد بيده لأحدهم أهدي بمنزله في الجنة منه بمزله كان في الدنيا
[رواه البخاري]
অর্থঃ ((মু'মিনেরা জাহান্নাম হতে মূক্তি পাবে, তার পর তাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী কানত্বারাহ্ নামক স্থানে একত্রিত করা হবে। তার পর দুনিয়াতে তাদের মাঝে যে জুলুম নির্যাতন ঘটেছিল একে অপরের পক্ষ হতে তার প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে। যখন তারা এসব হতে মূক্ত হবে তখন তাদেরকে জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। অতঃপর শপথ সেই সত্তার যার হাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রাণ, নিশ্চয় তাদের প্রত্যেকের দুনিয়ার বাসস্থান হতে জান্নাতের বাসস্থান উত্তম। [বুখারী]
একাদশতমঃ জান্নাত ও জাহান্নাম। আমরা ঈমান আনবো যে, জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য, এ দু'টি (জান্নাত ও জাহান্নাম) বর্তমান বিদ্যমান রয়েছে, আর ইহা কখনো ধ্বংস হবে না এবং চিরস্থায়ীও নয়, বরং সর্বদায় রয়েছে। আর জান্নাতবাসীদের নি'আমত শেষ ও ঘাটতি হবে না, অনুরূপ জাহান্নামীদের মধ্যে যার ব্যাপারে আল্লাহ চিরস্থায়ী শাস্তির ফায়সালা করেছেন তার শাস্তি কখনও বিরত ও শেষ হবে না।
তবে তাওহীদ পন্থীরাঃ আল্লাহর রহমতে ও শাফায়াত কারীদের শাফায়াতে জাহান্নাম হতে মুক্তি পাবেন।
আর জান্নাত হলোঃ অতিথীশালা, যা আল্লাহ্ কিয়ামতে মুত্তাকীনদের জন্য তৈরী করে রেখেছেন। তথায় রয়েছে প্রবাহিত নদী উন্নত ও সুউচ্চ কক্ষ, মনোলোভা রমণী, সমূহ। তথায় আরো রয়েছে মনঃপূত-মনোহর সামগ্রী যা কোন দিন কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কর্ন শ্রবণ করেনি, আর কোন মানুষের অন্তরেও কোন দিন কল্পনায় আসেনি। জান্নাতের নি'আমত চিরস্থায়ী কোন দিন শেষ হবেনা। জান্নাতে কোড়া সমতুল্য জায়গাহ্ দুনিয়া ও দুনিয়ার সব কিছুর চাইতে উত্তম। আর জান্নাতের সুগন্ধী চল্লিশ বৎসর দূরত্বের রাস্তা হতে পাওয়া যায়। জান্নাতে মু'মিনদের জন্য সব চাইতে বড় নি'আমত হলো আল্লাহকে সরাসরি স্বচক্ষে দর্শনলাভ করা। কিন্তু কাফেররা আল্লাহর দর্শনলাভ হতে বঞ্চিত হবেঃ আর যারা মু'মীনদের জন্য তাদের প্রভুর দর্শনকে অস্বীকার করলো সে বস্তুত এই বঞ্চিত হওয়াতে মু'মিনদেরকে কাফেরদের সমকক্ষ করলো। আর জান্নাতে একশতটি ধাপ রয়েছে, এক ধাপ হতে অপর ধাপের দূরুত্ব আসমান হতে জমিনের দূরত্ব অনুরূপ। আর সবচেয়ে উন্নত ও উত্তম জান্নাত হল, জান্নাতুল ফিরদাউস আল-আলা। এর ছাদ হল আল্লাহর আরশ। আর জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে, প্রত্যেক দরজার পার্শ্বের দৈর্ঘ "মক্কা "হতে "হাজার" এর দূরত্বের সমান। আর এমন দিন আসবে যে দিনে ইহা ভিড়ে পরিপূর্ণ হবে, আর জান্নাতে নূন্যতম মর্যাদার অধিকারী যে হবে তার দুনিয়া ও আরো দশ দুনিয়ার পরিমান জায়গা হবে। আল্লাহ তা'আলা জান্নাত সম্পর্কে বলেনঃ
أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ
[سورة آل عمران، الآية:133]
অর্থঃ (পরহেজগার মু'মিনদের জন্য তৈরী করা হয়েছে।)) [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১৩৩] জান্নাত বাসীদের চিরস্থায়ী ও জান্নাত ধ্বংস হবে না। এই সম্পর্কে তিনি বলেনঃ
جَزَاؤُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَداً رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ذَلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهُ
[سورة البينة، الآية:8]
অর্থঃ ((তাদের পালন কর্তার কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাত, যার তলদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত। তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা তার জন্যে, যে তার পালনকর্তাকে ভয় করে।)) [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ, আয়াত-৮]
আর জাহান্নামঃ ইহা শাস্তির ঘর যা আল্লাহ্ কাফের ও অবাদ্ধদের জন্য তৈরী করে রেখেছেন। তথায় বিভিন্ন প্রকার কঠিন শাস্তি রয়েছে। তার পাহারাদার হবে নিষ্ঠুর ও নির্দয় ফিরিশতারা। আর কাফেররা তথায় চিরস্থায়ী থাকবে। তাদের খাদ্য হবে যাক্কূম (কাঁটাযুক্ত) আর পানিয় হবে পুঁজ, দুনিয়ার আগুনের তাপ জাহান্নামের আগুনের তাপ মাত্রার সত্তর ভাগের এক ভাগ মাত্র। জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের চাইতে ৬৯ (ঊনসত্তর) গুণ বেশী, এর প্রত্যেকটি অংশ দুনিয়ার আগুনের ন্যায় বা তার চাইতে আরো উত্তাপ, আর এই জাহান্নাম তার অধিবাসী নিয়ে পরিতুষ্ট হবেনা বরং বলবে যে, আরো আছে কি ? তার সাতটি দরজা হবে। প্রত্যেকটি দরজার জন্য নির্ধারিত জাহান্নামীমের অংশ থাকবে। আল্লাহ তা'আলা জাহান্নাম সম্পর্কে বলেনঃ
أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ
[سورة آل عمران، الآية:131]
অর্থঃ ((কাফিরদের জন্য তৈরী করা হয়েছে।)) [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১৩১] জাহান্নামীরা চিরস্থায়ী এবং তা ধ্বংস হবেনা। এ সম্পর্কে তিনি আরো বলেনঃ
خَالِدِينَ فِيهَا أَبَداً - ِنَّ اللَّهَ لَعَنَ الْكَافِرِينَ وَأَعَدَّ لَهُمْ سَعِيراً
[سورة الأحزاب، الآيتان:64-65]
অর্থঃ ((নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে অভিসম্পাত করেছেন, এবং তাদের জন্যে জ্বলন্ত অগি্ন প্রস্তুত রেখেছেন। তথায় তারা অনন্তকাল থাকবে।)) [সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৬৪-৬৫]

(৩) শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনার ফলাফলঃ শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনার অনেক সূফল রয়েছে-
(ক) ছাওয়াবের আশায় আনুগত্য ও কর্ম সম্পাদনে আগ্রহী ও উৎসাহী হওয়া।
(খ) এ দিবসের শাস্তির ভয়ে অবাদ্ধতায় লিপ্ত ও ততপ্রতি সন্তষ্ট থাকা হতে ভয় করা।
(গ) আখেরাতে মু'মিনরা যে নি'আমত ও ছাওয়াব পাবে এ আশা- আকাঙ্খায় দুনিয়ার ছুটে যাওয়া জিনিস হতে নিজের শান্তনা লাভ করা।
(ঘ) ব্যক্তি ও সমাজিক জীবনে সৌভাগ্যের মূল উৎস হল শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনা। কারণ মানুষ যখন এ কথার প্রতি ঈমান আনবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টজীবকে তাদের মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করবেন ও তাদের হিসাব নিকাশ নিবেন, এবং তাদের কর্মের প্রতিদান প্রদান করবেন। মায্লুমের (অত্যাচারিত) পক্ষে যালিম (অত্যাচার কারী) ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতিশোধ নিবেন। তখন সে আল্লাহর আনুগত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে, সকল অকল্যাণের জড় নিঃশেষ হয়ে যাবে। সমাজে কল্যাণ বিস্তার লাভ করবে, এবং সর্বত্র সম্মান-মর্যাদা,শাস্তি ও নিরাপত্তা ছড়িয়ে পড়বে। প্রশান্তি ও নিরাপত্তা বেড়ে যাবে।

ষষ্ট স্তম্ভ
الركن السادس: الإيمان بالقدر
ষষ্ঠ রুকনঃ ভাগ্যের প্রতি ঈমান

(১) কদরের (ভাগ্যের) সংজ্ঞা ও তার প্রতি ঈমান আনার গুরুত্বঃ
কদর বা (ভাগ্য) হলোঃ আল্লাহর অনন্ত জ্ঞান ও হিকমাত অনুযায়ী সৃষ্টি কূলের জন্য ভাগ্য নির্ধারণ। আর ইহা আল্লাহর কুদরতের উপর নির্ভলশীল,আর তিনি সর্ব বিষয় ক্ষমতাশীল তিনি যা ইচ্ছা তাহাই করেন। আর ভাগ্যের প্রতি ঈমান আনা আল্লাহ্ তা'আলার রুবুবীয়াতের (প্রভুত্তের) প্রতি ঈমান আনার অন্তভুর্ক্ত। আর ইহা ঈমানের ছয়টি রুকনের অন্যতম একটি রুকন, এর প্রতি ঈমান আনা ছাড়া এই ছয়টি রুকনের প্রতি ঈমান আনা পরিপূর্ণ হবে না। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ
[سورة القمر، الآية:49]
অর্থঃ ((নিশ্চয় আমি প্রত্যেক বসত্তকে পরিমিত রুপে সৃষ্টি করেছি।)) [সূরা আল-ক্বামার, আয়াত-৪৯] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
كل شيء بقدر حتى العجز والكيس، أوالكيس والعجز
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((প্রত্যেক জিনিসই পরিমিত, এমনকি অপারগতা ও অলসতা অথবা অলসতা ও অপারগতাও।)) [মুসলিম]

(২) ভাগ্যের স্তরঃ চারটি স্তর বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভাগ্যের প্রতি ঈমান আনা পরিপূর্ণ হবে-
প্রথমতঃ আল্লাহর অনন্ত জ্ঞানের প্রতি ঈমান আনা, যা সকল বস্তুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاء وَالْأَرْضِ إِنَّ ذَلِكَ فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ
[سورة الحج، الآية:70]
অর্থঃ ((তুমি কি জাননা যে,নিশ্চয় আল্লাহ্ অবগত যা কিছু আসমান ও জমিনে রয়েছে,নিশ্চয় ইহা কিতাবে লিখিত আছে আর নিশ্চয় ইহা আল্লাহর নিকট সহজ।)) [সূরা আল-হাজ্ব, আয়াত-৭০]
দ্বিতীয়তঃ লওহে মাহ্ফুজে আল্লাহর জানা মোতাবেক ভাগ্য সমূহ লিখে রাখার প্রতি ঈমান আনা। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
مَّا فَرَّطْنَا فِي الكِتَابِ مِن شَيْءٍ
[سورة الأنعام، الآية:38]
অর্থঃ ((আমি কোন কিছু লিখতে ছাড়িনি।)) [সূরা আন'আম, আয়াত-৩৮] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
كتب الله مقادير الخلائق قبل أن يخلق السموات والأرض بخمسين ألف سنة
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((আসমান-জমিন সৃষ্টির ৫০(পঞ্চাশ) হাজার বৎসর পূর্বে আল্লাহ্ তা'আলা সৃষ্টজীবের ভাগ্য সমূহ লিখে রেখেছেন।)) [মুসলিম]
তৃতীয়তঃ আল্লাহর কার্যকরী ইচ্ছা ও তাঁর ব্যাপক শক্তির প্রতি ঈমান আনা। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَمَا تَشَاؤُونَ إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
[سورة التكوير، الآية:29]
অর্থঃ ((জগত সমূহের প্রভু আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না।)) [সূরা আত্-তাকভীর, আয়াত-২৯] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিকে বলেনঃ যে ব্যক্তি তাঁকে (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লক্ষ্য করে বলেছিল-
ما شاء الله وشئت
((আল্লাহ এবং আপনি যাহা চেয়েছেন (ওয়াও দ্বারা আত্বফ করে)।))
(তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ)
أجعلتني لله نداً بل ما شاء الله وحده
[رواه أحمد]
অর্থঃ ((তুমি কি আমাকে আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে দিলে ? বরং তিনি একাই চেয়েছেন।)) [আহমাদ]
চতুর্থতঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ সকল বস্তুর সৃষ্টি কর্তা ইহার প্রতি ঈমান আনা। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ
[سورة الزمر، الآية:62]
অর্থঃ ((আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সব কিছুর অভিবাবক।)) [সূরা-আয্-যুমার, আয়াত-৬২] তিনি আরো বলেনঃ
وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُونَ
[سورة الصافات، الآية:96]
অর্থঃ ((আল্লাহ তোমাদের ও তোমাদের কর্মকে সৃষ্টি করেছেন।)) [সুরা আস্-সাফফাত, আয়াত-৯৬] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
إن الله يصنع كل صانع وصنعته
[رواه البخاري]
অর্থঃ ((নিশ্চয় আল্লাহ্ সকল আবিস্কারক ও তার আবিস্কারকে সৃষ্টি করেন।)) [বুখারী]

(৩) ভাগ্যের প্রকারঃ
(ক) সকল সৃষ্টজীবের সাধারণ ভাগ্য লিপিবদ্ধ করণ। আর ইহাই আসমান জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বৎসর আগে লাউহে মাহ্ফুজে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
(খ) সারা জীবনের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করণ। আর তা হল বান্দার মাঝে রুহ্ বা আত্মা ফুঁকে দেওয়ার সময় হতে তার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে নির্ধারণ করা।
(গ) বাৎসরিক ভাগ্য নির্ধারণ করা। ইহা হল, প্রত্যেক বৎসর যা কিছু সংঘটিত হবে তা নির্ধারণ করা। আর ইহা প্রত্যেক বৎসরের মহিমান্বিত রজনীতে হতে থাকে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ
[سورة الدخان، الآية:4]
অর্থঃ ((এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।)) [সূরা আদ্-দুখান, আয়াত-৪]
(ঘ) দৈনন্দিন ভাগ্য নির্ধারণ করণ, আর তা হল সম্মান, অপমান, (কিছু) দেয়া না দেওয়া জীবিত করা, মৃত্যু দান ইত্যাদি যা দৈনন্দিন সংঘটিত হবে, তা নির্ধারণ করা। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
يَسْأَلُهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ
[سورة الرحمن، الآية:29]
অর্থঃ ((আসমান ও যমিনে বিচরণশীল সকলেই তাঁর কাছে প্রার্থী, প্রত্যেকদিন (সময়) কোন না কোন কর্মেরত রয়েছেন।)) [সূরা আর-রাহমান, আয়াত-২৯]

(৪) ভাগ্যের ব্যাপারে সালাফদের আকিদাহ বা বিশ্বাস হলঃ নিশ্চয় আল্লাহ সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তা প্রভু তার মালিক বা অধিকারী। নিশ্চয় আল্লাহ সকল সৃষ্টিজীবকে সৃষ্টির পূর্বে তাদের ভাগ্য সমূহ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তাদের বয়স, রুযী, কর্ম সমূহ নির্ধারণ করে রেখেছেন। আরো লিখে রেখেছেন যে, সুখ অথবা দুঃখের দিকে তারা ধাবিত হবে। প্রত্যেক জিনিসই স্পষ্ট কিতাবে হিসাব করে রেখেছেন। অতঃপর আল্লাহ্ যা চান তা হয়, আর যা চান না তা হয় না। আর যা হয়েছে ও হবে তা সবই জানেন। আর যা হয় নাই যদি তা হতো কি ভাবে হতো তাও জানেন। আর তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাশীল। যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দান করেন,আর যাকে ইচ্ছা তাকে পথভ্রষ্ট করেন। আর নিশ্চয় বান্দার ইচ্ছা ও শক্তি রয়েছে, যা দ্বারা তাদেরকে যে সকল কাজের সমর্থবান করেছেন তা সম্পাদন করে এই বিশ্বাস রেখে যে আল্লাহ্ যা চান শুধু মাত্র তাই হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا
[سورة العنكبوت، الآية:69]
অর্থঃ ((যারা আমার পথে সংগ্রাম করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করবো।)) [সূরা আল-আনকাবুত, আয়াত-৬৯] আর নিশ্চয় আল্লাহ্ বান্দার ও তার কর্মের সৃষ্টি কর্তা আর তারাই এই কর্ম গুলো প্রকৃত পক্ষে সম্পাদন কারী। ওয়াজেব ছাড়াতে ও হারাম কাজ করাতে আল্লাহর বিরুদ্ধে কারো কোন হুজ্জাত বা দলীল দাঁড় করানোর সুযোগ নেই, বরং বান্দাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর পূর্ণ দলীল রয়েছে। বিপদ-আপদে ভাগ্যকে কারণ হিসেবে গ্রহণ করা বৈধ হলেও নিন্দনীয় ও পাপের কাজে ভাগ্যের অজুহাত দেয়া বৈধ নয়। যেমন-নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদম ও মূসা (আলাইহিমাস সালাম) এর পরস্পর বিতর্কের ব্যাপারে বলেনঃ
تحاج آدم وموسى، فقال موسى: أنت آدم الذي أخرجتك خطيئتك من الجنة، فقال له آدم: أنت موسى الذي اصتفاك الله برسالاته وبكلامه ثم تلومني على أمر قد قدّر عليّ قبل أن أخلق فحج آدم موسى.
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((আদম ও মূসা (আলাইহিমাস সালাম) বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন, অতঃপর মূসা 'আলাইহিস্ সালাম বললেনঃ হে আদম 'আলাইহিস্ সালাম তোমাকেই তো তোমার পাপ জান্নাত হতে বহিস্কার করেছিল। তার পর আদম 'আলাইহিস্ সালাম তাঁকে বললেনঃ হে মূসা ! 'আলাইহিস্ সালাম তোমাকেই তো আল্লাহ্ তাঁর রিসালাত ও কথোপকথনের জন্য নির্বাচন করে নিয়েছিলেন? তারপরও তুমি আমাকে এমন বিষয়ের উপর দোষারোপ করছ যা আল্লাহ্ আমার সৃষ্টির পূর্বেই আমার উপর নির্বাচন করে রেখেছেন। অতঃপর আদম 'আলাইহিস্ সালাম মূসা 'আলাইহিস্ সালামের উপর জয়ী হলেন। [মুসলিম শরীফ]

(৫) বান্দাদের কর্ম সমূহঃ যে সকল কাজ আল্লাহ তা'আলা এই নিখিল বিশ্ব্যে সৃষ্টি করেছেন তা দু' ভাগে বিভক্ত-
প্রথমঃ আল্লাহ্ তা'আলার কর্ম সমূহের মধ্যে যে সকল কর্ম তাঁর সৃষ্টজীবের মাঝে পরিচালনা করেন, তাতে কাহারো কোন প্রকার ইচ্ছা ও ইখ্তিয়ার নেই। বস্তুর সকল ইচ্ছা আল্লাহর জন্য। যেমন জীবিত করা মৃত্যু দান করা সুস্থ্য ও অসুস্থ্য করা। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُونَ
[سورة الصافات، الآية:96]
অর্থঃ ((আর আল্লাহই তোমাদের ও তোমাদের কর্মকে সৃষ্টি করেছেন।)) [সূরা আস্-সাফফাত, আয়াত-৯৬] তিনি আরো বলেনঃ
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلاً
[سورة الملك، الآية:2]
অর্থঃ ((যিনি মরণ ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমাদেরকে পরিক্ষা করেন- কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ট?)) [সুরা আল-মুলক্, আয়াত-২]
দ্বিতীয়ঃ আর যে সকল কর্ম সৃষ্টিজীব সম্পাদন করে থাকে, তা সবই ইচ্ছার সাথে সম্পর্কিত। আর ইহা সম্পাদন কারীর ইখতিয়ার ও ইচ্ছায় সংঘঠিত হয়, কারণ ইহা আল্লাহ্ তাদের উপর অর্পণ করেছেন। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
لِمَن شَاء مِنكُمْ أَن يَسْتَقِيمَ
[سورة التكوير، الآية:28]
অর্থঃ ((যে তোমাদের মধ্যে সোজা পথে চলতে চায়।)) [সূরা আত্-তাকভীর, আয়াত-২৫] তিনি আরো বলেনঃ
فَمَن شَاء فَلْيُؤْمِن وَمَن شَاء فَلْيَكْفُرْ
[سورة الكهف، الآية:29]
অর্থঃ ((অতএব যার ইচ্ছা হয় ঈমান আনুক এবং যার ইচ্ছা কুফুরী করুক।)) [সূরা আল-ক্বাহাফ, আয়াত-২৯] ভাল কাজ সম্পাদনের জন্য তারা প্রশংসার হক্বদার ,আর খারাপ কাজ করার জন্য তারা অপমানের হক্বদার। আল্লাহ্ শুধু মাত্র ঐ কাজ করার জন্য শাস্তি দিবেন, যাতে বান্দার পূর্ণ ইখতিয়ার রয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
وَمَا أَنَا بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ
[سورة ق، الآية:29]
অর্থঃ ((আর আমি বান্দাদের উপর জুলুমকারী নই।)) [সূরা ক্বাফ, আয়াত-২৯] আর মানুষ ইচ্ছা ও নিরুপায়ের পার্থক্য জানে। যেরূপ কেহ ছাদ হতে সিঁড়ি বেয়ে নিজ ইচ্ছায় অবতরণ করেন, আর কখনো কেহ্ তাকে ছাদ হতে ফেলে দিতে পারে। প্রথম উদাহরণ হল ইচ্ছার, আর দ্বিতীয় উদাহরণ হল নিরুপায়ের।

(৬) আল্লাহর সৃষ্টি ও বান্দার কর্মের মাঝে সমঝতাঃ আল্লাহ্ বান্দাকে সৃষ্টি করেছেন ও তার (বান্দার) কর্ম সমূহকে সৃষ্টি করেছেন। ও তাকে ইচ্ছা ও শক্তি দিয়েছেন। তাই বান্দাই প্রকৃত পক্ষে তার কর্মের সম্পাদন কারী। সারাসরি তা আদায় কারী,কারণ তার ইচ্ছা ও শক্তি রয়েছে। অতঃপর সে যদি ঈমান আনে তবে সে তার ইচ্ছায় ও ইরাদায় ঈমান আনলো। আর সে যদি কুফুরী করে তবে সে তার ইচ্ছায় ও পূর্ণ ইরাদায় কাফের হল। যেমন আমরা বলে থাকি যে, এই ফল এই গাছের আর এই ফসল এই ক্ষেতের। অর্থ হলঃ নিশ্চয় ইহা হতে উৎপন্ন হয়েছে। আর আল্লাহর দিক হতে, এর অর্থ হবেঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ ইহাকে ইহা হতে সৃষ্টি করেছেন। এই দুইয়ের মাঝে কোন প্রকারের বিরোধ নেই। আর এর দ্বারা (শারউল্লাহ) আল্লাহর প্রনয়ণ ও তাঁর নির্ধারণ এক বলে বিবেচিত হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُونَ
[سورة الصافات، الآية:96]
অর্থঃ ((অথচ আল্লাহ্ তোমাদেরকে এবং তোমাদের কর্ম সমূহকে সৃষ্টি করেছেন।)) [সূরা আস্-সফফাত, আয়াত-৯৬] তিনি আরো বলেনঃ
فَأَمَّا مَن أَعْطَى وَاتَّقَى - وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى - َسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى - وَأَمَّا مَن بَخِلَ وَاسْتَغْنَى - وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى - فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى
[سورة الليل، الآيات:5-10]
অর্থঃ ((অতএব যে দান করে এবং আল্লাহ্ ভীরু হয়, এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে,আমি তাকে সুখের বিষয়ের জন্যে সহজ পথ দান করব,আর যে কৃপণতা করে ও বেপরওয়া হয়, এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে,আমি তাকে কষ্টের জন্যে সহজ পথ দান করব।)) [সূরা আল-লাইল, আয়াত ৫-১০]

(৭) ভাগ্যের ব্যাপারে বান্দার করণীয়ঃ ভাগ্যের ব্যাপারে বান্দার করণীয় কাজ হল দু'টি-
প্রথমঃ সম্ভাব্য কাজ সম্পাদনের ও সতর্কিত কাজ থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। তাঁর কাছে (আল্লাহর কাছে) আরো চাইবে যেন তাকে সহজ সাধ্য কাজ সহজ করেদেন, আর কঠিন সাধ্য কাজ হতে তাকে বিরত রাখেন।আর তাঁর উপর ভরসা করবে ও তাঁর কাছে আশ্রয় চাইবে। অতঃপর কল্যাণ অর্জনের জন্য ও অকল্যাণ বর্জনের জন্য তাঁর নিকটেই মুখাপেক্ষী হবে। আর তাই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
احرص على ما ينفك واستعن بالله ولا تعجز وإن أصابك شيء فلا تقل لو أني فعلت كذا لكان كذا ولكن قل قدر الله وما شاء فعل، فإن لو تفتح عمل الشيطان
অর্থঃ ((তোমার কল্যাণকর কাজের প্রতি আগ্রহবান হও, আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর, আর অপারগতা প্রকাশ করিওনা। আর তুমি যদি কোন কষ্টের সম্মখীন হও তবে এই রুপ বলিওনা যে আমি যদি এই কাজ করতাম তাহলে এই হত। বরং বল যে, আল্লাহ্ যা নির্ধারণ করেছেন ও চেয়েছেন তাই করেছেন, কারণ যদি কথাটি শায়তানের কর্ম খুলে দেয়।))
দ্বিতীয়ঃ বান্দা তার জন্য নির্ধারিত বিষয়ের উপর ধৈর্য ধারণ করবে, ঘাবড়াবেনা। অতঃপর জানবে যে, নিশ্চয় ইহা আল্লাহর পক্ষ হতে, সুতরাং সন্তোষ্ট চিত্তে মেনে নিবে। আরো জ্ঞাত হবে-যে বিপদ তাকে আক্রমন করেছে তা ভূল করে আসেনি। আর যে বিপদ তোমাকে আক্রমন করেনি তা তার জন্য আসার ছিলনা। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
وأعلم أن ما أصابك لم يكن ليخطئك وأن ما أخطأك لم يكن ليصيبك
অর্থঃ ((আরো জ্ঞাত হবে-যে বিপদ তোমাকে আক্রমন করেছে তা তোমাকে ভুল করে আসেনি। আর যে বিপদ তোমাকে আক্রমন করেনি তা তোমার জন্য আসার ছিলনা।))

(৮) ভাগ্য ও ফায়সালার প্রতি সন্তুষ্ট থাকাঃ ভাগ্যের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা অপরিহার্য। কেননা ইহা আল্লাহর প্রভুত্ত্বের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা অন্তর্ভুক্ত। তাই সকল মু'মিনের পক্ষে আল্লাহর ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা অপরিহার্য। কারণ আল্লাহর কর্ম ও ফায়সালা সকলই ভাল (ন্যায় পরায়ণ) ইনসাফ ভিক্তিক হিকমত পূর্ণ। সুতরাং যার আস্থা থাকবে যে, নিশ্চয় যা (সুখ-দুঃখ) তাকে পৌঁছিয়াছে তা তাকে ভূল করার ছিলনা আর যা তাকে ভূল করেছে তা তাকে পৌঁছার ছিলনা সে প্রেশানী ও সন্দেহ্ হতে বেঁচে থাকবে। আর তার জীবন হতে ব্যাকুলতা ও দোদুল্যমানতা দূর হবে। চলে বা হারিয়ে যাওয়া বস্তুর উপর চিন্তিত হবে না। আর তার ভবিষ্যৎ কে ভয় পাবেনা। আর এর মাধ্যমে সে সব চাইতে সৌভাগ্য পূর্ণ হবে, আত্মার দিক দিয়ে সব চাইতে পবিত্র হবে, আর সব চাইতে শান্ত হবে। আর যে জানতে পারবে যে, তার বয়স সীমিত, রুযী পরিমিত, সে নিশ্চিত ভাবে বুঝতে পারবে যে, কাপুরুষত্বা বয়স বাড়াতে পারে না। কার্পন্নতা রুয বাড়াতে পারে না। তাহলে সবই লিখিত রয়েছে। বিপদের উপর ধৈর্য ধারণ করবে, পাপ ও ক্রটি পূর্ণ কর্ম সম্পাদন করার কারনে ক্ষমা চাইবে। আর আল্লাহ্ যা (তার জন্য) নির্ধারণ করেছেন তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে। তবেই আদেশের আনুগত্য আর বিপদের উপর ধৈর্য ধারণের মাঝে সম্বন্নয় গড়তে সক্ষম হবে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَمَن يُؤْمِن بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
[سورة التغابن، الآية:11]
অর্থঃ ((আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে কোন প্রকার বিপদ আসে না,এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, আল্লাহ্ তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করবেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।)) [সূরা আত্-তাগাবুন, আয়াত-১১] তিনি আরো বলেনঃ
فَاصْبِرْ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنبِكَ
[سورة غافر، الآية:55]
অর্থঃ ((অতএব আপনি ধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয় আল্লাহর প্রতিশ্রতি সত্য। আপনি আপনার পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।)) [সূরা গাফের, আয়াত-৫৫]

(৯) হেদায়াত দু'প্রকারঃ (হেদায়াতের দু'টি অর্থ)
প্রথমঃ হেদায়াত অর্থ- সত্যের সন্ধান দেওয়া,সৎপথ প্রর্দশন করা। আর সকল সৃষ্টজীবই এর মালিক। আর সকল রাসূল ও তাঁদের অনুসারীগণ এরই মালিক। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
[سورة الشورى، الآية:52]
অর্থঃ ((নিশ্চয় আপনি সরল পথ প্রদর্শন করেন।)) [সূরা আশ্শুরা, আয়াত-৫২]
দ্বিতীয়ঃ হেদায়াত এর অর্থ আল্লাহ কর্তৃক বান্দাদেরকে (ভাল কাজের) তাওফীক প্রদান করা ও সঠিক পথে প্রতিষ্ঠা বা অটল রাখা, (আর ইহা) তাঁর মুত্তাকীন বান্দাদের জন্য দয়া ও অনুগ্রহ স্বরূপ। আর এই হেদায়াতের একমাত্র মালিক হলেন আল্লাহ। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَن يَشَاءُ
[سورة القصص، الآية:56]
অর্থঃ ((আপনি যাকে ভালবাসেন,তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না, তবে আল্লাহ্ তা'আলাই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন।)) [সূরা আল-ক্বসাস, আয়াত-৫৬]

(১০) (আল্লাহর) কুরআনে বর্ণিত ইরাদা দু' প্রকারঃ
প্রথমঃ ইরাদা কাউনিয়া ক্বাদারিয়া, তা হল সকল সৃষ্টিকূলের তরে নির্ধারিত ঘটনীয় ইচ্ছা, সুতরাং আল্লাহ্ যা চান তা হয়, আর যা চান না তা হয় না। আর ইহা (ইরাদা কাউনিয়া ক্বাদারিয়া) অবশ্যই পতিত হবে। কিন্তু ইরাদা শারয়ীয়া এর সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত (ইহাকে) ভালবাসা ও এর প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া জরুরী নয়। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
فَمَن يُرِدِ اللّهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلإِسْلاَمِ
[سورة الأنعام، الآية:125]
অর্থঃ ((আল্লাহ্ যাকে হেদায়াত করার ইচ্ছা করেন,তার বক্ষকে ইসলামের জন্য খুলে দেন।)) [সূরা আনআম, আয়াত-১২৫]
দ্বিতীয়ঃ ইরাদা দ্বীনিয়া শারয়ীয়া, তা হল দ্বীনী নির্দেশ বা উদ্দেশ্য ও তার আহল অনুসারী কে ভালবাসা ও তাদের প্রতি সন্তষ্ট থাকা। ইরাদা দ্বীনিয়া শারয়ীয়া বাস্তবায়িত হবে না,যতক্ষণ পর্যন্ত এর সাথে ইরাদা কাউনিয়া সংযুক্ত না হবে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ
[سورة البقرة، الآية:185]
অর্থঃ ((আল্লাহ্ তোমাদের জন্য সহজ চান, তোমাদের জন্য কঠিনতা চান না।)) [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত-১৮৫] আর ইরাদা কাউনিয়া অধিক ব্যাপক, কারণ সকল শারয়ী উদ্দেশ্য যা বাস্তবায়িত হয় তা সৃষ্টিগত দিক হতেও বাস্তবায়িত হওয়ার জন্য উদ্দেশ্যিত। আর পতিত সকল কাওনী উদ্দেশ্য বা ঘটমান ইচ্ছা শরীয়াতে তা উদ্দেশ্যিত নয়। যেমন আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর ঈমানের মাঝে উভয় প্রকার ইরাদা বা ইচ্ছা বাস্তবায়িত হয়েছিল। আর আবু জাহল এর কুফুরীতে শুধুমাত্র ইরাদা কাওনিয়া বা ঘটমান ইচ্ছা ছিল। আর যাতে ইরাদা কাউনিয়া পাওয়া যাবে না, যদিও তা শারীয়াতের দিক থেকে প্রত্যাশিত, যেমন আবু জাহেলের ঈমান। সুতরাং যদি ও আল্লাহ্ নাফারমানী পূর্ণ ইচ্ছা করেন ঘটবার দিক থেকে, এবং সৃষ্টিগত দিক থেকে তা চান কিন্তু তা দ্বীন হিসাবে পছন্দ করেন না, ভাল বাসেন না, ও তার প্রতি নির্দেশ ও দেন না। বরং তার প্রতি বিদ্বেষ রাখেন, অপছন্দ করেন, তা হতে নিষেধ (বান্দাদেরকে) করেন ও তা সম্পাদন কারীকে সাবধান করেন। আর এসব তাঁরই নির্ধারণ তবে আনুগত্য পূর্ণ কর্ম ও ঈমান আনা নিশ্চয় আল্লাহ্ তা'আলা ইহাকে ভাল বাসেন,এবং এর নির্দেশ দেন, এবং এর সম্পাদন কারীকে নেকী ও সুন্দর প্রতি দানের ওয়াদা (প্রতিশ্রতি) দিয়েছেন, তাঁর ইরাদা ছাড়া তাঁর নাফারমানী করা যায় না। আর আল্লাহ্ তা'আলা যা চান শুধু তাই পতিত হয়। আল্লাহ্ তা'আল বলেনঃ
وَلَا يَرْضَى لِعِبَادِهِ الْكُفْرَ
[سورة الزمر، الآية:7]
অর্থঃ (( (আল্লাহ্) তাঁর বান্দাদের জন্য কুফুরী পছন্দ করেন না।)) [সূরা আয্-যুমার, আয়াত-৬] তিনি আরো বলেনঃ
وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ الفَسَادَ
[سورة البقرة، الآية:205]
অর্থঃ ((আল্লাহ্ ফাসাদ (অশান্তি) পছন্দ করেন না।)) [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত-২০৫]

(১১) ঐ সকল আস্বাব বা কারণ সমূহ যা ভাগ্য পরিবর্তন করেঃ আল্লাহ্ এই ভাগ্যের জন্য কিছু কারণ তৈরী করে রেখেছেন যা ইহাকে পরিবর্তন ও প্রতিরোধ করে। যেমন-দোআ, সাদাকাহ্ ঔষধ, সতর্কতা অবলম্বন, (নিজের) কর্ম দক্ষতা ব্যাবহার করা,কারণ সবই আল্লাহর ফায়সালা ও তাঁর ভাগ্য নির্ধারণ, এমনকি অপারগতা- অক্ষমতা ও বিজ্ঞতা-বুদ্ধিমত্তা।

(১২) ভাগ্যের মাস্আলা বা বিষয়টি আল্লাহর সৃষ্টজীবের মাঝে তাঁর একটি রহস্যময় বিষয়ঃ ভাগ্য নির্ধারণ আল্লাহর গোপন রহস্য, তাঁর সৃষ্টজীবের মাঝে এ কথাটি শুধু মাত্র ভাগ্যের গোপন দিকের জন্য প্রয়োজয্য। কারণ সকল জিনিসের হাকীকাত শুধুমাত্র আল্লাহ্ জানেন। মানুষ তা অবগত হতে পারে না। যেমন আল্লাহ্ পথ ভ্রষ্ট করেন,হেদায়াত করেন, মৃত্যু দান করেন, জীবিত করেন, নিষেধ করেন,ও কিছু প্রদান করেন। যেমন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إذا ذكر القدر فأمسكوا [رواه مسلم].
অর্থঃ ((যখন ভাগ্যের কথা স্বরণ হবে তখন তোমরা তা নিয়ে তর্ক বির্তকে লিপ্ত না হয়ে চুপ থাকবে।)) [মুসলিম] তবে ভাগ্যের অন্যান্য দিক ও তাঁর মহা হিকমত স্তর, মর্যাদা ও তাঁর প্রভাব মানুষের নিকট বর্নণা করাও তা তাদেরকে জানানো বৈধ রয়েছে। কারণ ভাগ্যের প্রতি ঈমান আনা ঈমানের রুকন সমূহের একটি অন্যতম রুকন,যা শিক্ষা করাও জানা একান্ত কর্তব্য। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জিব্রীল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট ঈমানের রুকন সমূহ উল্লেখ করেন তখন বলেনঃ
هذا جبريل أتاكم يعلمكم دينكم [رواه مسلم].
অর্থঃ ((উনি হলেন জিব্রীল তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার জন্য আগমণ করেছেন।))

(১৩) ভাগ্যের দ্বারা দলীল দেওয়াঃ ভবিষ্যতে কি হবে বা না হবে এই সম্পর্কে আল্লাহর পূর্ব জ্ঞান, (ইহা) অদৃশ্য ইহা তিনি ব্যতীত কেহ জানেনা। (ইহা) মানুষ ও জি্বনদের অজানা। এতে কোন ব্যক্তিরই স্বীয় পক্ষ গ্রহণের দলীল নেই। আর যে বিষয় ফায়সালা হয়েগেছে তার উপর ভরসা করে কর্ম ত্যাগ করা ঠিক নয়। সুতরাং ভাগ্য আল্লাহর বিরুদ্ধে ও তাঁর সৃষ্টির কাহারো জন্য দলীল বা হুজ্জাত নয়। যদি খারাপ কাজ করার উপর ভাগ্যের দ্বারা দলীল দেওয়া বৈধ হতো,তাহলে অত্যাচারী শাস্তি প্রাপ্ত হতনা, মুশরিক ব্যক্তি হত্যা হতো না, হদ্ বা বিধান প্রতিষ্ঠিত হতনা, আর কেহ্ অত্যাচার করা হতে বিরত থাকতো না। আর ইহা দ্বীন ও দুনিয়াতে অশান্তি সৃষ্টি করার মাধ্যম হত, যার ভয়াবহতা সকলের জানা। আর যারা ভাগ্য দ্বারা দলীল দেয়, তাদেরকে আমরা বলবো তুমি জান্নাতী না জাহান্নামী এ ব্যাপারে তোমার নিকট নিশ্চিত জ্ঞান নেই। আর যদি তোমার নিকট এই ব্যাপারে নিশ্চিত জ্ঞান থাকত অবশ্যই আমরা তোমাকে সৎকাজের আদেশ দিতাম না ও অন্যায় থেকে নিষেধও করতাম না। বরং তুমি কর্ম সম্পাদন কর নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাকে তাওফীক প্রদান করবেন, আর তুমি জান্নাত বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। কিছু কিছু সাহাবা যখন ভাগ্যের হাদীস সমূহ শুনতেন তখন বলতেনঃ এখন তুমি আমার চাইতে বেশী প্রচেষ্টাকারী নও। (অর্থাৎ, আমি বেশী প্রচেষ্টাকারী)। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আত্ম পক্ষ সমর্থনে ভাগ্যের দ্বারা দলীল দেওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ
اعملوا فكل ميسر لما خلق له فمن كان من أهل السعادة فسييسر لعمل أهل السعادة، ومن كان من أهل الشقاوة فسييسر لعمل أهل الشقاوة،
অর্থঃ ((তোমরা কর্ম সম্পাদন করতে থাকো যাকে যার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা তার জন্য সহজ সাধ্য হবে, সুতরাং যারা সৌভাগ্যবান হবে তাদেরকে সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের যে কাজ সেই কাজ তার জন্য সহজ করে দেওয়া হবে। আর যারা দুর্ভাগা হবে, তাদেরকে তাদের দুর্ভাগা ব্যক্তিদের যে কাজ সেই কাজ সহজ করে দেওয়া হবে। অতঃপর নিম্নের আয়াত পাঠ করলেনঃ
فَأَمَّا مَن أَعْطَى وَاتَّقَى - وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى - َسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى - وَأَمَّا مَن بَخِلَ وَاسْتَغْنَى - وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى - فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى
[سورة الليل، الآيات:5-10]
অর্থঃ ((অতএব, যে দান করে এবং আল্লাহভীরু হয়, এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে, আমি তাকে সুখের বিষয়ের জন্য সহজ পথ দান করব। আর যে কৃপণতা করে ও বেপরওয়া হয়, এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে, আমি তাকে কষ্টের বিষয়ের জন্য সহজ পথ দান করব।)) [সূরা আল্-লাইল, আয়াত ৫-১০]))

(১৪) আসবাব বা (মাধ্যম সমূহ) গ্রহণ করাঃ বান্দার নিকট দু' প্রকার কাজ উপস্থিত হয়-
(এক) এমন কর্ম যাতে বাহানা বা অজুহাত রয়েছে তা সম্পাদনে সে অপারগ নয়।
(দুই) এমন কর্ম যাতে বাহানা ও অজুহাতের অবকাশ নেই, তা পালনে সে ধৈর্য ধারণ করে না। আল্লাহ্ তা'আলা বিপদ পতিত হওয়ার পূর্বেই বিপদ সম্পর্কে জানেন।
তাঁর (আল্লাহর) বিপদ সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে এর অর্থ এই নয় যে, তিনিই বিপদ গ্রস্ত ব্যক্তিকে বিপদে পতিত করেছেন, বরং এই বিপদ পতিত হয়েছে এর নির্ধারিত কারণ সমূহের দ্বারাই। যদি বিপদ হতে রক্ষাকারী মাধ্যম যা ব্যবহার ও গ্রহণ করার জন্য ইসলামী শরীয়াত অনুমতি দিয়েছেন পরিত্যাগ করার কারণে পতিত হয়, তবে সে নিজেকে হেফাযত না করার কারণে ও তাঁকে বিপদ হতে রক্ষাকারী মাধ্যম গ্রহণ না করার কারণে দোষী হবে। আর যদি এই বিপদ প্রতিরোধ করার তার ক্ষমতা না থাকে তবে সে মা'জুর হবে। সুতরাং মাধ্যম গ্রহণ করা ভাগ্য ও ভরসার পরিপন্থী নয় বরং ইহা (মাধ্যম গ্রহণ করা) এরই (ভাগ্য ও ভরসারই) অন্তভর্ুক্ত। আর যখন ভাগ্য পতিত হয়ে যায় তখন তার প্রতি সন্তষ্ট থাকা ও তা মেনে নেয়া ওয়াজিব হয়ে যায় ও নিম্নের কথার দ্বারা আশ্রয় গ্রহণ করবে।
قدّر الله وما شاء فعل
অর্থঃ আল্লাহ্ যা নির্ধারণ করেছেন ও চেয়েছেন তাই করেছেন। তবে ভাগ্য পতিত হওয়ার পূর্বে মানুষের দায়িত্ব হল বৈধ মাধ্যম গ্রহণ করা ও ভাগ্যের দ্বারা ভাগ্যের প্রতিরোধ করা। নবীগণ নিজেদেরকে নিজেদের শত্রু থেকে হেফাযতকারী পদ্ধতি ও মাধ্যম গ্রহণ করেছিলেন, অথচ তাঁরা আল্লাহর ওয়াহীও নিরাপত্তা দ্বারা সাহায্য প্রাপ্ত ছিলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল ভরসা কারীদের নেতা ছিলেন, তা সত্বে ও তিনি মাধ্যম গ্রহণ করতেন আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা থাকার পরও। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَأَعِدُّواْ لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدْوَّ اللّهِ وَعَدُوَّكُمْ
[سورة الأنفال، الآية:60]
অর্থঃ ((আর প্রসত্তত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থের মধ্য থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর।)) [সূরা আল-আনফাল, আয়াত-৬০] তিনি আরো বলেনঃ
هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ ذَلُولاً فَامْشُوا فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُوا مِن رِّزْقِهِ وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
[سورة الملك، الآية:15]
অর্থঃ ((তিনি তোমার জন্য যমিনকে সুগম করেছেন, অতএব তোমরা তার কাঁধে বিচরণ কর এবং তাঁর দেয়া রিযিক আহার কর। তাঁরই কাছে পুনরুজ্জীবন হবে।)) [সূরা আল-মূলক, আয়াত-১৫] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
المؤمن القوي خير وأحب إلى الله من المؤمن الضعيف وفي كل خير، احرص على ما ينفعك واستعن بالله ولا تعجز وإن أصابك شيء فلا تقل لو أني فعلت كذا لكان كذا وكذا، ولكن قل قدر الله ما شاء فعل فإن لو تفتح عمل الشيطان. [رواه مسلم].
অর্থঃ ((দুর্বল মু'মিন অপেক্ষা, সবল মু'মিন আল্লাহর কাছে অধিক উত্তম ও প্রিয়, তবে উভয়ের মাঝে কল্যাণ নিহত রয়েছে। যা তোমাকে উপকার করবে তা আদায়ে তুমি অগ্রশীল হও। আর আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর অপারগতা প্রকাশ করিওনা। তোমাকে কোন বিপদ স্পর্শ করলে তুমি বলিওনা যে নিশ্চয় আমি এই কাজ করলে এই এই হতো বরং তুমি বলঃ আল্লাহ্ যা নির্ধারণ করেছেন ও চেয়েছেন তাই করেছেন। কারণ (لو) লাও বর্ণটি শয়তানের কর্মকে খুলে দেয়।)) [মুসলিম]

(১৫) ভাগ্যকে অস্বীকার কারীর বিধানঃ যে ব্যক্তি ভাগ্যকে অস্বীকার করল সে ইসলামী শরীয়াতের মূলনীতি সমূহের একটি অন্যতম মূলনীতিকে অস্বীকার করলো। আর এর মাধ্যমে সে কুফুরী করলো। কিছু কিছু সালাফ সালেহ্ বলেনঃ
ناظروا القدرية بالعلم، فإن جحدوه كفروا، وإن أقروابه خصموا.
অর্থঃ ((তোমরা কাদরীয়াহ সমপ্রদায়ের সাথে জ্ঞান দ্বারা মুনাযারা কর তারা যদি অস্বীকার করে তাহলে তারা কুফুরী করলো আর যদি তারা স্বীকার করে তাহলে তারা (তোমাদের সাথে) ঝগড়া করলো।))

(১৬) ভাগ্যের প্রতি ঈমান আনার ফলাফলঃ ফায়সালা ও ভাগ্যের প্রতি ঈমান আনার অনেক শুভ-পরিনাম সুন্দর প্রতিক্রিয়া বা প্রভাব রয়েছে যা জাতীয় ও ব্যক্তি জীবনে কল্যাণ নিয়ে আসে।
(ক) নিশ্চয় ইহা (ভাগ্যের প্রতি ঈমান) বিভিন্ন প্রকার নেক আমল ও ভাল গুণ অর্জন করার সুযোগ জন্ম দেয়। যেমন আল্লাহর ইখলাস বা এক নিষ্ঠতা, তাঁর উপর ভরসা করা, তাঁকে ভয় করা, তাঁর কাছে কিছু পাওয়ার আশা করা, তাঁর প্রতি ভাল ধারণা রাখা ধৈর্য ধারণ করা, প্রখর সহনশীলতা, নৈরাশ্যতা দূর করা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা, একমাত্র আল্লাহর শুকরিয়া করা, তাঁর অনুগ্রহ দয়া পেয়ে খুশী হওয়া। একমাত্র আল্লাহর জন্য বিনয় নম্রতা প্রকাশ করা, উদাসিনতা ও অহংকার ত্যাগ করা। আল্লাহর প্রতি ভরসা করতঃ ভাল পথে ব্যায় করার মন মানুষিকতা ও সৃষ্টি করে। বীরত্ব সৃষ্টি করে, ভাল কাজ করার দিকে অগ্রসর করে, অল্পে তুষ্ট থাকার গুন তৈরী করে, আত্ম সম্মানী করে, উচ্চাভিলাশী করে, কর্ম দক্ষতা সৃষ্টি করে, কর্ম সম্পাদনের প্রচেষ্টা তৈরী করে সুখে-দুখে মধ্য পথ অবলম্বন কারী তৈরী করে, হিংসা ও প্রতিবাদ করা থেকে নিরাপদে রাখে। বাজে গাল- গল্প বাতিল কাজ হতে বিবেককে মূক্ত রাখে। আত্মার প্রশান্তি ও তৃপ্তির ব্যবস্থা করে।
(খ) ভাগ্যের প্রতি ঈমান ওয়ালা ব্যক্তি তার জীবনে সঠিক ও সরল পথে পরিচালিত হয়। অধিক নি'য়ামত তাকে পথ ভ্রষ্ট করতে পারে না,আর বিপদে নৈরাশ হয় না। আর সে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে যে,তাকে যে বিপদ স্পর্শ করেছে তা (তার জন্য) আল্লাহর নির্ধারণ মাত্র, তার পরিক্ষা স্বরুপ। ঘাবড়ায় না বিচলিত হয় না। বরং ধৈর্য ধারণ করে ও নেকীর আশা রাখে।
(গ) নিশ্চয় ইহা পথ ভ্রষ্টের কারণ সমূহ ও জীবনের অশুভ সমাপনী হতে হেফাজত করে। ইহা তার জন্য (মু'মিনের জন্য) সঠিক পথে প্রতিষ্ঠা থাকার স্থায়ী প্রচেষ্টা, নেক কাজ বেশী বেশী করার সুযোগ, নাফারমানী পূর্ণ ও ধ্বংসাক্ত কাজ থেকে বিরত থাকার সুযোগ করে দেয়।
(ঘ) নিশ্চয় ইহা মু'মিনদের জন্য সুদৃঢ় অন্তর ও পূর্ণ বিশ্বাসের দ্বারা ভয়ানক ও কঠিন কর্মকে প্রতিহত করার মনভাব তৈরী করে দেয়, মাধ্যম বা উপকরণ গ্রহণ করার সাথে। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
عجبا لأمر المؤمن إن أمره كله له خير وليس ذلك إلا للمؤمن، إن أصابته سراء شكر فكان خيرا له، وإن أصابته ضراء صبر فكان خيرا له.
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((কি আর্শ্চয্য ! নিশ্চয় মু'মিনের সকল কর্মই ভাল, আর ইহা শুধু মু'মিনদের জন্য খাস, যদি তাকে কোন আনন্দ স্পর্শ করে সে প্রশংসা করে, ফলে তা তাঁর জন্য কল্যাণ হয়। আর যদি তাকে কোন বিপদ স্পর্শ করে সে ধৈর্য ধারণ করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণ হয়।)) [মুসলিম]
সমাপ্ত।

Source: www.islamhouse.com/library
((সম্পূর্ণ অবানিজ্যিক ভিত্তিতে শুধুমাত্র দ্বীন প্রচারের লক্ষ্যে কেউ এই বইয়ের লিংক ব্যবহার ও ছাপাতে পারেন নিম্নোক্ত শর্ত সাপেক্ষে-
১. লেখক ও অনুবাদকের নাম পরিবর্তন না করে এবং উল্লেখ করে।
২. বইয়ের মূল বিষয় ও লেখালেখিতে কোনরূপ পরিবর্তন না এনে।
৩. উত্তম হয় যদি সোর্স-এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
আল্লাহ আপনাদের সকলকে সর্বোত্তম প্রতিদান দিন।))

No comments: