Sunday, January 28, 2007

@=ঈমানের স্তম্ভসমূহ (১)

بسم الله الرحمن الرحيم

أركان الإيمان

আরকানুল ঈমান বা ঈমানের স্তম্ভসমূহ

গ্রন্থনাঃ দ্বীনী গবেষণা অধিদপ্তর, ইসলামী বিশ্ববিদ্বালয় মদীনা মুনওয়ারা, সৌদি আরব

অনুবাদঃ মুহাম্মাদ ইব্রাহীম আব্দুল হালীম

আর্কানুল ঈমান, বা ঈমানের স্তম্ভসমূহঃ

তা হলো আল্লাহ্ তা'আলা, তাঁর ফিরিশতাদের, কিতাব সমূহের, রাসূলগণের, ও শেষ দিবসের, এবং ভাগ্যের ভাল মন্দের প্রতি ঈমান আনা

এ প্রসংগে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آَمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ.

[سورة البقرة: الآية 177]

অর্থঃ ((বরং প্রকৃতপক্ষে সত্কাজ হলো- ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, কেয়ামত দিবসের উপর, ফিরিশতাদের উপর, এবং সমস্ত নবী-রাসূলগণের উপর))। [সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-১৭৭ ]

তিনি আরো বলেনঃ

كُلٌّ آَمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ......

[سورة البقرة: الآية 285]

অর্থঃ ‍((সবাই বিশ্বাস রাখে, আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবের প্রতি এবং তাঁর নবীদের প্রতি, তারা বলে আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোন তারতম্য করি না))। [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত-২৮৫] তিনি আরো বলেনঃ

إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ.

[سورة القمر: الآية 49]

অর্থঃ ((আমি প্রত্যেক বস্তুকে পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি))। [সূরা আল-ক্বামার, আয়াত-৪৯]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

الإيمان أن تؤمن بالله، وملائكته، وكتبه، ورسله، واليوم الآخر. وتؤمن بالقدر خيره .وشره

[رواه مسلم]

অর্থঃ ((ঈমান হলো- তুমি আল্লাহ তা'আলা, তাঁর ফিরিশতাগণ, কিতাব সমূহ, রাসূলগণ ও শেষ দিবসের (আখেরাতের) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবেআরো বিশ্বাস রাখবে ভাগ্যের ভাল মন্দের প্রতি))। [মুসলিম শরীফ]

ঈমানের সংজ্ঞাঃ তা হলো মুখে বলা এবং অন্তরে বিশ্বাস করা ও বাস্তবে অঙ্গ-প্রতঙ্গের মাধ্যমে সম্পাদন করাঈমান আনুগত্যে বৃদ্ধি হয়, নাফারমানী ও অবাদ্ধতায় হ্রাস পায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آَيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ - الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ - أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ

[سورة الأنفال: الآية 2-4]

অর্থঃ ((প্রকৃত মু'মিন তারাই যখন তাদের নিকটে আল্লাহর নাম স্বরণীত হয় তখন তাদের অন্তর কেঁপে উঠেআর যখন তাদের নিকট তাঁর আয়াত পঠিত হয় তখন তাদের ঈমান বর্ধিত হয়তারা তাদের প্রভুর উপরেই ভরসা করেআর যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, এবং আমার প্রদত্ত রুযী হতে (আল্লাহর পথে ) ব্যয় করেতারাই হল সত্যিকার ঈমানদার।)) [সূরা আল-আনফাল,আয়াত-২-৪]

তিনি আরো বলেনঃ

وَمَنْ يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا

[سورة النساء: الآية 136]

অর্থঃ ((...এবং যে আল্লাহর প্রতি,ও তাঁর ফিরিশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাব সমূহের প্রতি, এবং রাসূলগণের প্রতি ও কেয়ামত দিবসের প্রতি, বিশ্বাস স্থাপন করেনা তারা চরম পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৩৬] আর ঈমান যা মুখের দ্বারা সম্পাদিত হয়, যেমন- যিকির, দো', ন্যায়ের আদেশ, অন্যায়ের নিষেধ ও কুরআন তিলাওয়াত করা ইত্যাদি

অনুরূপভাবে, অন্তরের সাথেও ঈমান সংশ্লিষ্টযেমন- স্রষ্টা, প্রতিপালক, পরিচালক, ইবাদাতের অধিকারী এবং সুন্দরতম নাম ও মহান গুণাবলীর ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার তাওহীদ বা একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করাএক ও অদিত্বীয় আল্লাহ তা'আলার দাসত্বের আবশ্যকতায় বিশ্বাস স্থাপন করাইচ্ছা-সংকল্প ইত্যাদি ও এর মধ্যে শামিল

আর অন্তরের কাজ হলোঃ আল্লাহর ভালবাসা, ভয়-ভীতি, আশা-আগ্রহ ও ভরসা ইত্যাদি (সব কিছু অন্তরের ঈমান) অঙ্গ-প্রতঙ্গের কর্ম সমূহ ঈমানের অন্তর্ভুক্তযেমন- সালাত, সওম, হজ্জ, আল্লাহর পথে জিহাদ, দ্বীনী শিক্ষার্জন ইত্যাদি আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آَيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا

[سورة الأنفال: الآية 2]

অর্থঃ ((আর যখন তাদের কাছে তাঁর (আল্লাহর ) আয়াত পঠিত হয়, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়।)) [সূরা আল-আনফাল, আয়াত-২] তিনি আরো বলেনঃ

هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ السَّكِينَةَ فِي قُلُوبِ الْمُؤْمِنِينَ لِيَزْدَادُوا إِيمَانًا مَعَ إِيمَانِهِمْ

[سورة الفتح: الآية 4]

অর্থঃ ((তিনি মু'মিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেন, যাতে তাদের ঈমানের সাথে আরো ঈমান বেড়ে যায়।)) [সূরা আল-ফাতহ্, আয়াত-৪]

সুতরাং আনুগত্য ও নৈকট্যশীলতা যত বৃদ্ধি পায়, ঈমানও তত বৃদ্ধি পায়আর আনুগত্য ও নৈকট্যশীলতা যত হ্রাস পায়, ঈমানও তত হ্রাস পায়যেমন- অবাধ্যতা ও নাফরমানী ঈমানে কু-প্রভাব ফেলে, যদি তা (নাফরমানী) বড় ধরনের শির্ক বা কোন কুফুরী কাজ হয় তাহলে আসল ঈমানকে ধ্বংস করে দিবেআর যদি ছোট ধরণের কোন নাফরমানী হয় তাহলে ঈমানের পরিপূর্ণতায় ঘাটতি আসে এবং তা কলুষিত ও দুর্বল হয়ে যায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ

[سورة النساء: الآية 48]

অর্থঃ ((নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করার অপরাধ ক্ষমা করেন নাএতদ্ব্যতীত সব কিছু যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন।)) [সূরা আন্- নিসা, আয়াত-৪৮] তিনি আরো বলেনঃ

يَحْلِفُونَ بِاللَّهِ مَا قَالُوا وَلَقَدْ قَالُوا كَلِمَةَ الْكُفْرِ وَكَفَرُوا بَعْدَ إِسْلَامِهِمْ

[سورة التوبة: الآية 74]

অর্থঃ ((তারা কসম খেয়ে বলে যে আমরা বলি নাইঅথচ তারা কুফরী বাক্য বলেছে এবং ইসলাম গ্রহণ করার পর কুফরী করেছে।)) [সুরা আত্-তাওবাহ্, আয়াত-৭৪] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

لا يزني الزاني حين يزني وهو مؤمن، ولا يسرق السارق حين يسرق وهو مؤمن، ولا يشرب الخمر حين شربها وهو مؤمن.

[متفق عليه]

অর্থঃ ((ব্যভিচারী পরিপূর্ণ ঈমানদার অবস্থায় ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না, চোর পরিপূর্ণ ঈমানদার অবস্থায় চুরি করেনা এবং মদ্যপায়ী পরিপূর্ণ ঈমানদার অবস্থায় মদ পান করেনা (অর্থাৎ, উক্ত সময়ে তাদের ঈমান অপূর্ণ ও দুর্বল হয়ে যায়)।)) [বুখারী ও মুসলিম]

প্রথম স্তম্ভ

الركن الأول: الإيمان بالله عزوجل

প্রথম স্তম্ভঃ মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান

(১) ঈমানের বাস্তবায়নঃ

নিম্নে বর্ণিত বিষয় সমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ঈমান আনা হয়

প্রথমতঃ এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, এ বিশ্ব জগতের একজন প্রভু প্রতিপালক রয়েছেনযিনি স্বীয় সৃষ্টি রাজত্ব, পরিচালনা ও কর্ম ব্যাবস্থাপনায় রিযিকদাতা, জীবন দাতা, মৃত্যুদাতা, ক্ষমতাশীল এবং কল্যাণ ও অকল্যাণ সাধনকারী হিসেবে এক ও অদ্বিতীতিনি ব্যতীত কোন প্রভু প্রতিপালক নেই তিনি একাই যা ইচ্ছা তা করেন, এবং যা চান তার হুকুম করেনযাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন, আবার যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেনতাঁরই হাতে আসমান জমিনের রাজত্বতিনি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল ও জ্ঞাত রয়েছেনতিনি কারো মুখাপেক্ষী নন সকল আদেশ তাঁরই এবং সর্ব প্রকার কল্যাণ তাঁরই হাতে, তাঁর কর্মসমূহে কোন শরীক নেইতাঁর কর্মে তাঁকে কেহ পরাজয়কারী নেইবরং মানব জাতি, জিন জাতি ও ফিরিশতা মণ্ডলী সহ সকল সৃষ্টজীব তাঁরই দাস বা বান্দা তারা তাঁর রাজত্ব, শক্তি ও ইচ্ছা হতে বের হতে পারেন নাতাঁর কর্মসমূহ অগণিত কোন সংখ্যাই তা সীমাবদ্ধ করতে পারে নাএ সকল বৈশিষ্ট্যের তিনিই একমাত্র অধিকারী, তাঁর কোন শরীক নেইতিনি ব্যতীত কেউ এর (বৈশিষ্ট্যসমূহের) অধিকার রাখে নাএসব আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সহিত সম্পর্কিত ও সাব্যস্ত করা হারাম আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ * الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا وَالسَّمَاءَ بِنَاءً وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَكُمْ .....

[سورة البقرة: الآيتان ২১-২২]

অর্থঃ ((হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদাত কর, যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে সৃষ্টি করেছেনতাতে আশা করা যায় যে, তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারবেযে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য যমীনকে বিছানা আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে।)) [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত-২১,২২] তিনি আরো বলেনঃ

قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَاءُ بِيَدِكَ الْخَيْرُ إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

[سورة آل عمران، الآية 26]

অর্থঃ ((বলুন, হে আল্লাহ! আপনিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারীআপনি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নেন এবং যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন আর যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেনআপনারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণনিশ্চয়ই আপনি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান।)) [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-২৬] তিনি আরো বলেনঃ

وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُبِينٍ

[سورة هود، الآية: 6]

অর্থঃ ((আর পৃথিবীতে বিচরণশীল মাত্রই সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ তা'আলা নিয়েছেন, তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়সব কিছুই এক সুস্পষ্ট গ্রন্থে রয়েছে।)) [সূরা হুদ, আয়াত-৬] তিনি আরো বলেনঃ

أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

[سورة الأعراف، الآية: 54]

অর্থঃ ((জেনে রেখ, তাঁরই সৃষ্টি ও তাঁরই বিধান, আল্লাহ বরকতময় যিনি বিশ্ব জগতের প্রভু-প্রতিপালক।)) [সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত-৫৪ ]

দ্বিতীয়তঃ এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর সুন্দর নামসমূহ ও পবিত্র পূর্ণ গুণাবলীর ক্ষেত্রে এক ও অদ্বিতীয়যার কিছু বান্দাদের জন্য তাঁর পবিত্র গ্রন্থ ও শেষ নবী ও নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছেআল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

[سورة الأعراف، الآية: 180]

অর্থঃ ((আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সর্বোত্তম নামতাই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাকআর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলেতারা নিজেদের কৃত কর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।)) [সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত-১৮০] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

(( إن لله تسعة وتسعين اسماً من أحصاها دخل الجنة، وهو وتر يحب الوتر))[متفق عليه]

অর্থঃ ((আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম রয়েছেযে ব্যক্তি ইহা সংরক্ষন করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবেআল্লাহ্ বেজোড়, তিনি বেজোড়কে ভালবাসেন।)) [বুখারী ও মুসলিম]

আর এই আকীদাহ-বিশ্বাস দু'টি বড় মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত

প্রথমঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ সুন্দর নাম ও মহান গুণ রয়েছে, যা পরিপূর্ণ গুণাবলীর প্রমাণ করে, তাতে কোন প্রকারের অপরিপূর্ণতা ও ক্রটি নেইসৃষ্টিজীবের কোন কিছুই তার মত ও তার অংশীদার হতে পারে নাالحيّ (আল-হাইয়ু) তাঁর (আল্লাহর) নামসমূহের একটি নামالحياة (আল-হায়াত) তাঁর সিফাত বা গুণ যা মহান আল্লাহর জন্য সমুচিত সঠিক পন্থায় সাব্যস্ত করা ওয়াজিবআর এ জীবন এক চিরস্থায়ী পরিপূর্ণ জীবনতাতে জ্ঞান, শক্তি ইত্যাদি সর্ব প্রকার পূর্ণতার সমাবেশ রয়েছেআল্লাহ চিরঞ্জীব তাঁর লয় ও ক্ষয় নাই আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ...

[سورة البقرة، الآية: 255]

অর্থঃ ((আল্লাহ্ ছাড়া কোন সঠিক উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও সব কিছুর ধারকতাঁকে তন্দ্রা স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়।)) [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত-২৫৫]

দ্বিতীয়ঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা সকল দোষ ও ক্রটিযুক্ত গুণ হতে সম্পূর্ণভাবে পবিত্রযেমন- নিদ্রা, অপারগতা, মূর্খতা ও যুলুম-অত্যাচার ইত্যাদি

তিনি আরো পবিত্র সৃষ্টিজীবের সাথে সাদৃশ্য রাখা হতেআল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর (আল্লাহর) জন্য যে সকল গুণ অস্বীকার করেছেন, তা অস্বীকার করা অতীব জরুরী আল্লাহ্ তা'আলা যে সকল গুণকে নিজের জন্য অস্বীকার করেছেন সেসব গুণের বিপরীত গুণে পরিপূর্ণ ভাবে গুণাম্বিত; এই বিশ্বাস রাখাসুতরাং যখন আল্লাহকে তন্দ্রা ও নিদ্রার দোষারোপ থেকে মুক্ত করব, তখন তন্দ্রার বিপরীত চির জাগ্রত এবং নিদ্রার বিপরীত চিরঞ্জীব পরিপূর্ণ দু'টি গুণকে সাব্যস্ত করা হবেঅনুরূপভাবে আল্লাহকে প্রতিটি অপরিপূর্ণ গুণ থেকে মুক্ত করলে সাথে সাথে তার বিপরীত পরিপূর্ণ গুণ সাব্যস্ত হয়ে যায়তিনিই একমাত্র পরিপূর্ণ আর তিনি ব্যতীত সবই অপরিপূর্ণ আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

......لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

[سورة الشورى، الآية: 11]

অর্থঃ (( (সৃষ্টজীবের) কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়আর তিনি সব শুনেন এবং সব দেখেন।)) [সূরা আশ্-শূরা, আয়াত-১১] তিনি আরো বলেনঃ

....وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِلْعَبِيدِ

[سورة فصلت، الآية: 46]

অর্থঃ ((আর আপনার প্রতিপালক বান্দাদের প্রতি যুলুম করেন না।)) [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত-৪৬] তিনি আরো বলেনঃ

.....وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعْجِزَهُ مِنْ شَيْءٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ.....

[سورة فاطر، الآية: 44]

অর্থঃ ((আকাশ ও পৃথিবীতে কোন কিছুই আল্লাহকে অপারগ করতে পারে না।)) [সূরা ফাতের, আয়াত-৪৪] তিনি আরো বলেনঃ

وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا.

[سورة مريم، الآية: 64]

অর্থঃ ((আর আপনার প্রতিপালক বিস্মৃত হওয়ার নন।)) [সূরা মারইয়াম, আয়াত-৬৪]

আল্লাহর নাম, তাঁর গুণ ও কর্ম সমূহের প্রতি ঈমান আনা, আল্লাহ্ ও তাঁর ইবাদাতকে জানার একমাত্র পথ

কারণ আল্লাহ্ তা'আলা এই পার্থিব জগতে তাঁর সরাসরি দর্শনকে সৃষ্টিজীব হতে গোপন রেখেছেন, এবং তাদের জন্য এমন জ্ঞানের পথ খুলে দিয়েছেন, যার দ্বারা তারা তাদের প্রভু ইলাহ্-মা'বুদকে জানবে এবং সঠিক জ্ঞান অনুযায়ী তাঁর ইবাদাত করবেসুতরাং বান্দা তার গুময় মা'বুদের ইবাদাত করে, মুআত্তিল (আল্লাহর নাম ও গুণাবলী অধিকারকারী) অনস্তিত্বের ইবাদাত করে, মুমাচ্ছিল (মুশরিক সাদৃশ্যবাদী) প্রতিমার ইবাদাত করেআর মুসলিম ব্যক্তি এক ও অমুখাপেক্ষী আল্লাহর ইবাদাত করে, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি, এবং তাঁর সমকক্ষ ও কেউ নয়

আল্লাহর সুন্দর নাম সমূহ সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে নিম্নে বর্ণিত বিষয় গুলোর লক্ষ্য রাখা উচিতঃ

(১) সংযোজন ও বিয়োজন ব্যাতীত কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত সকল সুন্দর নাম সমূহ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত রয়েছে তার উপর ঈমান আনাআল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ

[سورةالحشر : 26]

অর্থঃ ((তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতীত সত্যিকার কোন উপাস্য নেইতিনি এক মাত্র সব কিছুর মালিক, যাবতীয় দোষ-ক্রটি হতে পবিত্র,শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, পর্যবেক্ষক,পরাক্রান্ত, প্রতাপাম্বিত, মাহাত্মশীলতারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা'আলা তা থেকে পবিত্র।)) [সূরা আল-হাশর, আয়াত-২৩ ] হাদীসে এসেছেঃ

((وثبت في السنة أن النبي- -سمع رجلاً يقول: اللهم إني أسألك بأن لك الحمد لا إله إلا أنت المنان بديع السموات، والأرض يا ذا الجلال ،والإكرام يا الحي يا القيوم. فقال النبي -  -: تدرون بما دعا الله؟ قالوا: الله، ورسوله أعلم، قال:والذي نفسي بيده لقد دعا الله باسمه الأعظم الذي إذا دعي به أجاب، وإذا سئل به أعطى))

[رواه أبو داود، وأحمد]

অর্থঃ ((নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেনহে আল্লাহ্ ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, কারণ সকল প্রশংসা তোমারই জন্যতুমি ছাড়া কোন সত্যিকার মা'বুদ নেইতুমি (মান্নান ) অনুগ্রহকারী, আসমান জমিনের সৃষ্টি কারীহে সম্মানিত ও মর্যাদাবান! হে চিরঞ্জীব ও সব কিছুর ধারক বাহক ! অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমরা কি জান ? সে কিসের (অসিলায়) আল্লাহকে আহ্বান করেছে? তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানেনতারপর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ শপথ সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয় সে আল্লাহকে তাঁর এমন ইসমে আজমের (মহান নামের)অসিলায় আহ্বান করেছে,যার দ্বারা আল্লাহকে আহ্বান করলে আল্লাহ্ আহ্বানে সাড়া দেন, এবং আবেদন করলে তিনি দান করেন।)) [ ইমাম আবু দাউদ ও আহ্মাদ হাদীসটি বর্ণনা করেন]

(২) আল্লাহ্ নিজেই নিজের নাম রেখেছেনসৃষ্টি জীবের কেউ তার নাম রাখে নাইএবং তিনি নিজেই এই সকল নাম দ্বারা স্বীয় প্রশংসা করেছেনইহা সৃজিত নতুন নয়ইহার উপর ঈমান আনা

(৩) আল্লাহর সুন্দর নাম সমূহ এমন পরিপূর্ণ অর্থবোধক যাতে কোন প্রকারের কোন ক্রটি নেইতাই এ নাম সমূহের প্রতি ঈমান আনা যেমন ওয়াজিব,তেমনি এর অর্থের উপর ঈমান আনাও ওয়াজিব

(৪) এ সমস্ত নামের অর্থ অস্বীকার ও অপব্যাক্ষা না করে সম্মানের সাথে গ্রহণ করা ওয়াজিব

(৫) প্রতিটি নাম হতে সাব্যস্ত বিধি-বিধান ও ফলাফল এবং এর প্রভাবের প্রতি ঈমান আনা

এ পাঁচটি বিষয়কে আরো স্পষ্ট করার জন্য আমরা আল্লাহর নাম السميع আসসামী'(শ্রবণ কারী) দ্বারা উদাহরণ পেশ করবো

السميع এতে নিম্নে বর্ণিত বিষয় গুলো লক্ষ্য রাখা প্রত্যেকেরই কর্তব্য

(ক) السميع (আস্সামী') আল্লাহর নাম সমূহের একটি নামএ কথার প্রতি ঈমান আনাকারণ এর বর্ণনা কুরআন ও হাদীসে এসেছে

(খ) আরো ঈমান আনা যে,আল্লাহ্ তা'আলা নিজেই নিজেকে এ নামে নাম করণ করেছেন,এ নামে কথা বলেন এবং তা কুরআনে অবতীর্ণ করেছেন

(গ) السميع (আস্সামী') আস্সামউ বা (শোনা) অর্থকে শামিল করেযা আল্লাহর গুণ সমূহের একটি গুণ

(ঘ) السميع (আস্সামীয়) নাম হতে উদ্ভূত "শ্রবণ করা বা শোনা" গুনটি অস্বীকার ও অপব্যাখা না করে সম্মানের সাথে গ্রহণ করা ওয়াজিব

(ঙ) নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু শুনেন এবং তাঁর শুনা সকল ধনিকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে, এই বিশ্বাস রাখাএ ঈমানের ফলাফল ও প্রভাব হলো আল্লাহর পর্যবেক্ষণ ও তাঁর ভয়-ভীতি আবশ্যক হয়ে যায়,এবং এ দৃঢ় বিশ্বাস সৃষ্টি হয় যে,আল্লাহর কাছে কোন কিছু গোপন থাকেনা

এমনি ভাবে আল্লাহর গুণ العَِلي(আল-আলী) সাব্যস্ত করার সময় নিম্নের বিষয় গুলো লক্ষ্য রাখা উচিতঃ

(১) কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত সকল সিফাত বা গুণ কোন প্রকার অপব্যাখা ও সঠিক অর্থ ত্যাগ না করে প্রকৃতার্থে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা

(২) দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যে, আল্লাহ্ তা'আলা যাবতীয় দোষ অসম্পূর্ণ গুণ হতে মূক্ত, বরং তিনি সূ-পরিপূর্ণ গুণে গুনাম্বিত

(৩) আল্লাহর গুণাবলীর সাথে সৃষ্টিজীবের গুণ সমূহের সাদৃশ্য না করাকারণ আল্লাহর অনুরুপ কোন কিছু নেইনা তাঁর গুণে এবং না তাঁর কর্মেআল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

فَاطِرُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجاً وَمِنَ الْأَنْعَامِ أَزْوَاجاً يَذْرَؤُكُمْ فِيهِ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ

[سورة الشورى، الآية: 11]

অর্থঃ (((সৃষ্টিজীবের) কোন কিছুই তাঁর অনুরুপ নয়আর তিনি সব শুনেন,এবং সব দেখেন।)) [সূরা আশ্শুরা,আয়াত-১১ ]

(৪) এসব গুণের রুপ ও ধরণ-গঠন জানার কোন প্রকার আশা আকাঙ্খা না করাকেননা আল্লাহ গুণের রুপ ও ধরণ-গঠন তিনি ব্যতীত অন্য কেউ জানেনাফলে সৃষ্টিজীবের তা জানার কোন পথ নেই

(৫) এ সব গুণাবলী হতে সাব্যস্ত বিধি-বিধান এবং এর প্রভাব ও দাবীর প্রতি ঈমান আনাসুতরাং প্রতিটি গুণের সাথে ইবাদাত সম্পৃক্ত

এখন পাঁচটি বিষয় আরো স্পষ্ট হওয়ার জন্য সিফাতুল ইস্তিওয়া الاستواء এর উদাহরণ পেশ করব

আল-ইস্তিওয়া الاستواء গুণটি সাব্যস্ত করতে নিম্নে বর্ণিত বিষয় গুলো লক্ষ্য রাখা অপরিহার্য

(১)আল-ইস্তিওয়া (আল্লাহ্ তা'আলা স্ব-সত্তায় আরশের উপরে রয়েছেন) এ গুণটি আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা এবং এর প্রতি ঈমান আনা, কেননা ইহা কুরআন ও হাদীসে একাধিকবার প্রমানিত হয়েছেআল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى

[سورة طه، الآية: 5]

অর্থঃ ((পরম দয়াময় (আল্লাহ্ তা'আলা স্ব-সত্তায়) আরশের উপর রয়েছেন।)) [সূরা ত্বহা,আয়াত-৫]

(২) আল-ইস্তিওয়া الاستواء গুণটিকে যথাযোগ্য ও পরিপূর্ণ রূপে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করাআর এর প্রকৃত অর্থ হলোঃ আল্লাহ তা'আলা স্বীয় আরশের উপরে বিরাজমান রয়েছেন, যেমন তাঁর মহত্বের ও শ্রেষ্টত্বের শোভা পায়এর অর্থ আল্লাহ তাঁর আরশের উপরে সমাসীন প্রকৃত পক্ষেতাঁর মর্যাদার জন্য যে ভাবে শোভা পায়

(৩) আল্লাহ তা'আলার আরশের উপর বিরাজমান থাকাকে সৃষ্টি জীবের আসন গ্রহণের সাথে উপমা না দেওয়াকেননা আল্লাহ আরশের মুখাপেক্ষী ননতিনি আরশের মুহ্তাজ ননকিন্তু সৃষ্টি জীবের সমাসীনতা সম্পূর্ণ সতন্ত্র, সৃষ্টিজীব এর মুহ্তাজ বা মুখাপেক্ষীআল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ

[سورة الشورى، الآية: 11]

অর্থঃ(( (সৃষ্টি জীবের) কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়আর তিনি সব শুনেন,এবং সব দেখেন।)) [সূরা আশ্শুরা, আয়াত-১১ ]

(৪) আল্লাহ তা'আলার আরশের উপর বিরাজমানের ধরণ ও পদ্ধতি নিয়ে তর্কে লিপ্ত না হওয়াকেননা এটা গাইবী (অদৃশ্যের) বিষয়, যা একমাত্র আল্লাহ তা'আলা ছাড়া কেউ জানেনা

(৫) এ গুণটি হতে সাব্যস্ত বিধি-বিধান ও ফলাফল এবং এর প্রভাবের প্রতি ঈমান আনা, আর তা হলো আল্লাহ্ তা'আলার যথাযোগ্য মহত্ত ও শ্রেষ্টত্ব সাব্যস্ত করা, যা সমগ্র সৃষ্টি হতে তাঁর উর্দ্ধে ও সু-উচ্চে (আরশের উপর) অবস্থানই প্রমাণ করে

আরো প্রমাণ করে সকল আত্মার তাঁরই দিকে ঊর্ধমূখী হওয়া, যেমন সিজ্দাকারী সিজ্দায় বলেঃ سبحان ربي الأعلى আমি আমার প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করি যিনি সু-উচ্চ ও ঊর্ধে

তৃতীয়তঃ এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ্ তা'আলাই একমাত্র সত্যিকার মা'বুদ বা উপাস্য এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যাবতীয় ইবাদাত পাওয়ার অধিকার রাখেনতিনি এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শরীক নেইআল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ

[سورة النحل، الآية: 36]

অর্থঃ ((আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং তাগূত (আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদাত করা মানে, শির্ক করা) থেকে নিরাপদ ও বিরত থাকবে।)) [সূরা আন-নহল, আয়াত-৩৬] আর প্রত্যেক রাসূলই স্বীয় উম্মাতকে বলতেনঃ

اعْبُدُواْ اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ

[سورة الأعراف، الآية: 59]

অর্থঃ ((তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করতিনি ব্যতীত তোমাদের কোন সত্য উপাস্য নেই।)) [সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত-৫৯] তিনি আরো বলেনঃ

وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاء

[سورة البينة، الآية: 5 ]

অর্থঃ ((আর তাদেরকে এ ছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠ ভাবে (শির্কমুক্ত থেকে) একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করবে।)) [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ-আয়াত-৫] সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে,

أتدري ما حق الله على العباد وما حق العباد على الله؟.قلت:الله ورسوله أعلم.قال:حق الله على العباد أن يعبدوه ولا يشركوا به شيئاً،وحق العباد على الله ألا يعذب من لا يشرك به شيئاً

অর্থঃ ((তুমি কি জান? বান্দার উপর আল্লাহর হক্ব বা অধিকার কি? আর আল্লাহর উপর বান্দার অধিকার কি? আমি (মু'য়াজ রাদিয়াল্লাহু 'আনহু) বললামঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাতরাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ বান্দার উপর আল্লাহর হক্ব হলো- তাঁর (আল্লাহর) ইবাদাত করা, এবং তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার না করাআল্লাহর উপর বান্দার হক্ব হলো- যারা তাওহীদের উপর থেকে শির্ক মুক্ত থাকে তাদেরকে শাস্তি না দেওয়া।))

সত্য মা'বুদঃ তিনিই সত্য মা'বুদ, অন্তর যার ইবাদাত করে, যার ভালবাসায় অন্তর ভরে যায়, অন্যের ভালবাসার প্রয়োজন পড়েনাযার আশা আকাংখাই অন্তরের জন্য যথেষ্ট অন্যের কাছে আশা ও আকাংখার প্রয়োজন হয়নাযার নিকট চাওয়া পাওয়া, সাহায্য প্রার্থনা ও তাঁকে ভয়-ভীতি করাই অন্তরের জন্য যথেষ্টঅন্য কারো কাছে চাওয়া পাওয়ার প্রার্থনা করা, কাউকে ভয়-ভীতি করার প্রয়োজন নেইআল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِن دُونِهِ هُوَ الْبَاطِلُ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ

[سورة الحج، الآية: 62]

অর্থঃ ((এটা একারণেও যে, আল্লাহই সত্যঃ আর তাঁর পরিবর্তে তারা যাকে ডাকে,তা অসত্য এবং আল্লাহই সবার উচ্চে, মহান।)) [সূরা আল-হাজ্জ,আয়াত-৬২ ]

আর ইহাই বান্দার কর্মের দ্বারা আল্লাহর একত্ববাদ ঘোষনা করাইহাই তাওহীদে উলুহীয়্যাহ্

তাওহীদের গুরুত্বঃ নিম্নের বিষয় গুলোর মাধ্যমে তাওহীদের গুরুত্ব ফুটে উঠে

(১) তাওহীদই ইসলাম ধর্মের শুরু ও শেষ, জাহেরী-বাতেনী-এবং মুখ্য উদ্দেশ্যআর ইহাই সকল রাসূল 'আলাইহিস্ সালামের দাওয়াত ছিল

(২) এ তাওহীদ (কায়েম) এর লক্ষ্যে-আল্লাহ্ তা'আলা মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন, সকল নবী রাসূলদের প্রেরণ করেছেন এবং সব আসমানী কিতাব অবতীর্ণ করেছেনআর এ তাওহীদের কারণেই মানুষ মু'মিন-কাফির, সৌভাগ্য দূর্ভাগ্যে বিভক্ত হয়েছে

(৩) আর তাওহীদই বান্দাদের উপর সর্ব প্রথম ওয়াজিবসর্ব প্রথম এর মাধ্যমেই ইসলামে প্রবেশ করেএবং এ তাওহীদ নিয়েই দুনিয়া ত্যাগ করে

তাওহীদ বাস্তবায়ন বা তাওহীদ প্রতিষ্ঠাঃ তাওহীদের বাস্তবায়ন হলঃ তাওহীদকে শির্ক, বিদ্আত ও পাপাচার মুক্ত করা

তাওহীদকে কলুষ মুক্ত করা দু'রকমঃ

(১) ওয়াজিব ও

(২) মান্দুব বা মুস্তাহাব

ওয়াজিব তাওহীদ তিন বিষয়ের মাধ্যমে হয়ঃ

(১) তাওহীদকে এমন শির্ক, হতে মুক্ত করা, যা মূল তাওহীদের পরিপন্থী

(২) তাওহীদকে এমন বিদ্আত হতে মুক্ত করা যা তাওহীদের পরিপূর্ণতার পরিপন্থী,অথবা মূল তাওহীদের পরিপন্থী সে বিদ্আত যদি কুফুরী পর্যায়ের হয়ে থাকে

(৩) তাওহীদকে এমন পাপকর্ম হতে মুক্ত করা যা তাওহীদের (অর্জিত) পূণ্য হ্রাস করে এবং তাওহীদে কু-প্রভাব ফেলে

আর মান্দুব (তাওহীদ)- তা হলো মুস্তাহাব কাজযেমন নিম্নরুপঃ

(ক) ইহ্সানের (ইখলাসের) পূর্ণ বাস্তবায়ন

(খ) ইয়াকীনের পূর্ণ বাস্তবায়ন করা

(গ) আল্লাহ ছাড়া কারো নিকট অভিযোগ না করে পূর্ণ ধৈর্য ধারণ করা

(ঘ) সৃষ্টি জীব হতে মুক্ত হয়ে শুধু মাত্র আল্লাহর কাছে চাওয়াই যথেষ্ঠ মনে করা

(চ) কিছু বৈধ উপকরণ ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুলের প্রকাশযেমন-ঝাড় ফুঁক ও দাগা (রোগ নিরাময়ের জন্য) ছেড়ে দেওয়া

(ছ) নফল ইবাদাত করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যমে পূর্ণ ভালবাসা লাভ করা

অতঃপর যারা তাওহীদকে বাস্তবায়ন করবে উপরে বর্ণনানুপাতে এবং বড় শির্ক হতে বেঁচে থাকবে, তারা জাহান্নামে চিরস্থায়ী বসবাস করা হতে পরিত্রান লাভ করবেআর যারা বড় ও ছোট শির্ক করা হতে বেঁচে থাকবে এবং বড় ও ছোট পাপ হতে দূরে থাকবে, তাদের জন্য দুনিয়াতে ও আখিরাতে পূর্ণ নিরাপত্তা রয়েছেআল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

إِنَّ اللّهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاءُ

[سورة النساء، الآية: 48]

অর্থঃ ((নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা তাঁর সাথে শির্কের অপরাধ ক্ষমা করবেন নাআর ইহা ব্যতীত যাকে ইচ্ছা করেন (তার অন্যান্য অপরাধ) ক্ষমা করে দেন।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত,৪৮ ] তিনি আরো বলেনঃ

الَّذِينَ آمَنُواْ وَلَمْ يَلْبِسُواْ إِيمَانَهُم بِظُلْمٍ أُوْلَـئِكَ لَهُمُ الأَمْنُ وَهُم مُّهْتَدُونَ

[سورة الأنعام، الآية: 82]

অর্থঃ ((যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শির্কের সাথে মিশ্রিত করেনা,তাদের জন্যই শান্তি এবং তারাই সুপথগামী।)) [সূরা-আল- আনআম,আয়াত-৮২]

তাওহীদের বিপরীত শির্ক, ইহা তিন প্রকারঃ

(১) বড় শির্কঃ যা মূল তাওহীদের পরিপন্থী, আল্লাহ্ শির্কের গোনাহ্ তাওবাহ্ ছাড়া মাফ করেননাযে ব্যক্তি শির্কের উপর মারা যাবে, সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে

শির্ক হলোঃ আল্লাহর ইবাদাতে কাউকে তাঁর সমকক্ষ নিধর্ারণ করে নেয়াযেমন ভাবে আল্লাহকে ডাকে অনুরূপ ভাবে তাকে (সমকক্ষকে) ডাকাতাকে উদ্দেশ্য করা, তার উপর ভরসা করাতার কাছে কোন কিছুর আশা করাতাকে ভালবাসা তাকে ভয় করা, যেরুপ আল্লাহকে ভালবাসে ও ভয় করেআল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللّهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ

[سورة المائدة، الآية: 72]

অর্থঃ ((নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে আংশিদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করেছেন এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নামঅত্যাচারীদের (মুশরীকদের) কোন সাহায্যকারী নেই।)) [সূরা আল-মায়িদাহ-আয়াত-৭২ ]

(২) ছোট শির্কঃ তাওহীদের পূর্ণতার পরিপন্থীইহা প্রত্যেক ঐ মাধ্যম যা বড় শির্কের দিকে নিয়ে যায়যেমন আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করারিয়া বা লোক দেখানো কাজ

(৩) গোপন শির্কঃ যা নিয়্যাত ও উদ্দেশ্যের সাথে সম্পৃক্ত রাখেইহা কখনো ছোট, আবার কখনো বড় শির্কে পরিনত হয় সাহাবী মাহমুদ বিন লবীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

إن أخوف ما أخاف عليكم الشرك الأصغر،قالوا وماالشرك الأصغر يارسول الله ؟ قال:الرياء

[رواه الإمام أحمد]

অর্থঃ ((আমি তোমাদের উপর সব চেয়ে বেশী ভয় পাই ছোট শির্কেরসাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! ছোট শির্ক কি? তিনি বল্লেনঃ তা হল রিয়া বা লোক দেখানো কাজ।)) [হমাদ]

(২) ইবাদাতের সংজ্ঞাঃ ইহা ঐ সব আকীদা-বিশ্বাস, অন্তর ও অঙ্গ-প্রতঙ্গের কর্ম যা আল্লাহ্ তা'আলা ভাল বাসেন ও পছন্দ করেনইহা ছাড়া কোন কিছু সম্পাদন করা বা বর্জন করা যা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করায় তাও ইবাদাতঅনুরূপভাবে কুরআন ও হাদীসে বিধিবদ্ধ্য প্রতিটি কর্ম ইবাদাতের অন্তর্ভুক্তইবাদাত বিভিন্ন প্রকারের রয়েছে

আন্তরিক ইবাদাতঃ যেমন- ঈমানের ছয়টি রুকন, ভয়, আশা, ভরসা, আগ্রহ, ও ভিতী, ইত্যাদি

প্রকাশ্য ইবাদাতঃ যেমন- সালাত, যাকাত, সওম ও হজ্জ

ইবাদাত ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ যোগ্য হবে না যতক্ষ না তা দু'টি মূল নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়

প্রথমঃ সকল ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্য খালেস করা এবং তার সাথে শির্ক না করাআর ইহাই شهادة أن لا إله إلا الله "আল্লাহ্ ছাড়া কোন সত্য মা'বুদ নেই" এ শাক্ষ্য প্রদানের অর্থআল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ

[سورة الزمر، الآية: 3]

অর্থঃ ((জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদাত আল্লাহরই নিমিত্তেযারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্য রূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের ইবাদাত এজন্যই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফায়সালা করে দেবেনআল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফিরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।)) [সূরা আয্-যুমার,আয়াত-৩] তিনি আরো বলেনঃ

وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاء

[سورة البينة، الآية: 5]

অর্থঃ ((আর তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশকরা হয়নি যে,তারা খাঁটি মনে একনিষ্টভাবে (শির্কমুক্ত থেকে) একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করবে।)) [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ-আয়াত-৫]

দ্বিতীয়ঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে, শরীয়াত নিয়ে এসেছেন তার অনুসরণ করাএর অর্থ, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে কাজ যে ভাবে করেছেন সে কাজ সেই নিয়মে করা, কোন প্রকার কম বেশী না করাআর ইহাই شهادة أن محمدًا رسول الله "মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত রাসূল" এ সাক্ষ্য প্রদানের অর্থ আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ

[سورة آل عمران، الآية: 31]

অর্থঃ ((বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভাল বাস,তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভাল বাসেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন,আর আল্লাহ্ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।)) [সূরা আলি-ইমরান,আয়াত-৩১ ] তিনি আরো বলেনঃ

وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا

[سورة الحشر، الآية: 7]

অর্থঃ ((আর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা গ্রহণ কর, এবং যা থেকে বারণ করেছেন তা হতে বিরত থাক।)) [সূরা আল-হাশর,আয়াত-৭] তিনি আরো বলেনঃ

فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّىَ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُواْ فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجاً مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسْلِيماً

[سورة النساء، الآية: 65]

অর্থঃ ((অতএব তোমার পালন কতর্ার কসম, তারা ঈমানদার হবে না, যতক্ষন পযনর্্ত তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায় বিচারক বলে মনে না করেঅতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নিবে।)) [সূরা আন্-নিসা,আয়াত-৬৫]

দু'টি বিষয় ছাড়া ইবাদাত (দাসত্ব) পরিপূর্ণতা লাভ করেনাঃ

প্রথমঃ আল্লাহকে পূর্ণ ভালবাসা, অর্থাৎ, আল্লাহর ভালবাসা ও আল্লাহ যা ভাল বাসেন তাঁর ভালবাসাকে অন্য সকল বস্তুর ভালবাসার উপর প্রাধান্য দেওয়া

দ্বিতীয়ঃ আল্লাহর নিকট পূর্ণ বিনয়-নম্রতা ও আনুগত্য প্রকাশ করাঅর্থাৎ, বান্দা আল্লাহ তা'আলার আদেশ সমূহ পালনের ও নিষেধাগ্যা হতে বেঁচে থাকার মাধ্যমে বিনয়-নম্রতা প্রকাশ করবে

সুতরাং পূর্ণ বশ্যতা, বিনয়-নম্রতা, আশা-আকাঙ্খা ও ভয়-ভীতির সাথে পূর্ণ ভালবাসাকে ইবাদাত বলা হয়এর মাধ্যমেই বান্দার ইবাদাত স্বীয় প্রভু সৃষ্টি কর্তার জন্য বাস্তবায়িত হয়আল্লাহর জন্য ইবাদাত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর ভালবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হয়অতএব বান্দার ফরজ বিধান পালন করার মাধ্যমে তাঁর (আল্লাহর ) নৈকট্য অর্জন করাকে আল্লাহ্ ভালবাসেনবান্দার নফল ইবাদাত যতই বৃদ্ধি পাবে ততই তাঁর নৈকট্য ও মর্যাদা আল্লাহর নিকট বৃদ্ধি পাবেআর আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুনায় ইহা জান্নাতে প্রবেশ করার উপায় হবে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

ادْعُواْ رَبَّكُمْ تَضَرُّعاً وَخُفْيَةً إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ

[سورة الأعراف، الآية: 55]

অর্থঃ ((তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি-মিনতি করে এবং সংগোপনেতিনি সীমা- অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না।)) [সূরা আল-আ'রাফ,আয়াত-৫৫]

(৩) আল্লাহর তাওহীদ (একতাত্ববাদ) এর দলীল ও প্রমাণ পঞ্জীঃ

আল্লাহ্ তা'আলার একত্ববাদের স্বপক্ষে অজশ্র সাক্ষ্য ও প্রমাণ পঞ্জী রয়েছেযারা এ প্রমাণ পঞ্জীকে নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করবে, তাদের জ্ঞান ও বিশ্বাস আল্লাহ তা'আলার কর্ম, নাম ও গুনাবলী এবং ইবাদাতের ক্ষেত্রে একত্ববাদকে আরো বৃদ্ধি ও দৃঢ় করবে

নিম্নে সে সকল সাক্ষ্য ও প্রমাণ-পঞ্জীর কিছু নমুনা পেশ করা হলোঃ

(ক) এ পৃথিবী সৃষ্টির বিশালতা, সূক্ষ্ন কারীগরী,রকমারী সৃষ্টি এবং এসব পরিচালনার সুদক্ষ নিয়ম-নীতিযে ব্যক্তি এ সমস্ত বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করবে আল্লাহ তা'আলার একত্ববাদ সম্পর্কে তার একিন-বিশ্বাস আরো দৃঢ় হবেতেমনি যে নভোমন্ডল-ভূমন্ডল,সূর্য-চন্দ্র, মানুষ-পশু, উদ্ভিদ-লতাপাতা ও জড় পদার্থ সম্পর্কে চিন্তা করবে, সে নিশ্চিত ভাবে জানতে পারবে যে, এসবের এক জন স্রষ্টা রয়েছেন, যিনি স্বীয় নামসমূহ, গুনাবলী ও উপাস্য পরিপূর্ণ আর ইহাই প্রমাণ করে যে, তিনিই একমাত্র যাবতীয় ইবাদাত পাওয়ার প্রকৃত অধিকার রাখেন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَجَعَلْنَا فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَن تَمِيدَ بِهِمْ وَجَعَلْنَا فِيهَا فِجَاجاً سُبُلاً لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ - وَجَعَلْنَا السَّمَاء سَقْفاً مَّحْفُوظاً وَهُمْ عَنْ آيَاتِهَا مُعْرِضُونَ - وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

[سورة الأنبياء، الآيات: 31-33]

অর্থঃ ((আমি পৃথিবীতে ভারী বোঝা রেখে দিয়েছি যাতে তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে এবং তাতে প্রশস্ত পথ রেখেছি, যাতে তারা পথ প্রাপ্ত হয়আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি, অথচ তারা আমার আকাশস্ত নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখেতিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্রসবাই আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।))[সূরা আল-আম্বিয়া,আয়াত-৩১-৩৩] তিনি আরো বলেনঃ

وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْعَالِمِينَ

[سورة الروم، الآية: 22]

অর্থঃ ((তাঁর (আল্লাহর) আরও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র! নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।)) [সূরা আর-রূম,আয়াত-২২]

(খ) আল্লাহ তা'আলা রাসূলদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহিমুস সালাম) যে শরীয়াত দিয়ে প্রেরণ করেছেন এবং তাদেরকে বিভিন্ন নিদর্শন ও অকাট্য প্রমাণাদি দিয়ে সহযোগিতা করেছেনএসব প্রমাণ করে যে, আল্লাহ্ তা'আলা এক ও অদ্বিতীয়তিনি একমাত্র যাবতীয় ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য আর আল্লাহ্ তা'আলা সৃষ্টিজীবের জন্য যে সব নিয়ম-বিধান প্রনয়ণ করেছে,তা প্রমাণ করে যে, এসব সেই বিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময় হতে এসেছে সৃষ্টিজীবের যাবতীয় কল্যাণ সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ

[سورة الحديد، الآية: 25]

অর্থঃ ((আমি আমার রাসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শসহ প্রেরণ করেছি এবং তাদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও মিযান বা মানদন্ড যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে।)) [সূরা আল-হাদীদ,আয়াত-২৫] তিনি আরো বলেনঃ

قُل لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الإِنسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَن يَأْتُواْ بِمِثْلِ هَـذَا الْقُرْآنِ لاَ يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيراً

[سورة الإسراء، الآية: 88]

অর্থঃ ((বলুনঃ যদি মানব ও জ্বীন এই কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্য এক হয় এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়, তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না।)) [সূরা আল-ইসরা,আয়াত-৮৮]

(গ) ফিৎরাত (সৃষ্টিগত স্বভাব বা প্রকৃতি) যার উপর আল্লাহ্ তা'আলা বান্দাদের আত্মাসমূহকে সৃষ্টি করেছেন, তা আল্লাহর একত্ববাদকে স্বীকার করেফিত্রাত অন্তরের স্থায়ী জিনিস, তাই যখন কোন মানুষ কষ্ট পায় তখন তা অনুভব করতে পারে, এবং আল্লাহর দিকে ফিরে যায়মানুষ যদি সন্দেহ ও প্রবৃত্তির অনুসরণ মুক্ত হয় যা ফিৎরাতকে পরির্বতন করে দেয় তবে সে অন্তরস্থল থেকে নাম, গুণ, ও ইবাদাত প্রাপ্য, একমাত্র আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি দিবে এবং আল্লাহ তা'আলা রাসূলদেরকে যে শরীয়াত দিয়ে প্রেরণ করেছে তাতে আত্মসমর্পন করবেআল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفاً فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ - مُنِيبِينَ إِلَيْهِ وَاتَّقُوهُ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ

[سورة الروم، الآيتان: 30-31]

অর্থঃ ((তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখএটাই আল্লাহর প্রকৃতি,যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন,আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেইএটাই সঠিক ধর্মকিন্ত অধিকাংশ মানুষ জানেনাসকলেই তাঁর অভিমুখী হও এবং ভয় কর, সালাত কায়েম কর এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়োনা।)) [সূরা আর-রূম, আয়াত ৩০-৩১] নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

كل مو لد يولد على الفطرة ،فأبواه يهودانه، أو ينصرانه، أو يمجسانه، كما تنتج البهيمة بهيمة جمعاء هل تحسنون فيها من جدعاء

অর্থঃ ((প্রত্যেক শিশুই ফিৎরাতের উপর জন্ম গ্রহণ করেঅতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী, খৃষ্টান, অথবা অগ্নী পূজক বানায়যেমন নিখুঁত জানোয়ার নিখুঁত বাঁচ্চা জন্ম দেয়তাতে কোন প্রকার ক্রটি থাকেনা।)) অতঃপর এই আয়াত পাঠ করলেনঃ

فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا

[سورة الروم الآية : ৩০]

অর্থঃ ((এটাই আল্লাহর প্রকৃতি,যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন।)) [সূরা আর-রূম,আয়াত-৩০]

দ্বিতীয় স্তম্ভ

الركن الثاني: الإيمان بالملائكة

দ্বিতীয় রুকনঃ ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান

(১) ফিরিশতাদের পরিচয়ঃ

ফিরিশতাদের প্রতি ঈমানঃ দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ্ তা'আলার অনেক ফিরিশতা রয়েছেনতিনি তাদেরকে নূর (জ্যোতি) হতে সৃষ্টি করেছেনসৃষ্টিগতভাবে তারা আল্লাহর অনুগততারা কখনও আল্লাহর আদেশের অবাধ্য হননা, বরং যা আদিষ্ট হন তা পালন করেনতারা দিবা রাত্রি আল্লাহর তাসবীহ্ (পবিত্রতা) বর্ণনায় রত, কখনও ক্লান্ত হননাতাদের সংখ্যা আল্লাহ্ তা'আলা ব্যতীত কেউ জানেনাআর আল্লাহ তাদেরকে বিভিন্ন প্রকার (কর্মের) দায়িত্ব অর্পণ করেছেনআল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَلَـكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَالْمَلآئِكَةِ

[سورة البقرة، الآية: 177]

অর্থঃ ((বরং বড় সত্কাজ হলো এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, এবং ফিরিশতাদের উপর।)) [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত-১৭৭] তিনি আরো বলেনঃ

كُلٌّ آمَنَ بِاللّهِ وَمَلآئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لاَ نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ

[سورة البقرة، الآية: 285]

অর্থঃ ((সকলেই বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থ সমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি।)) [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত-২৮৫] জিব্রাঈল 'আলাইহিস্ সালামের প্রসিদ্ধ হাদীসে এসেছেঃ যখন তিনি (জিব্রাঈল) আল্লাহর রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন-ঈমান, ইসলাম,ও ইহসান,সম্পর্কেতিনি (জিব্রাঈল) বলেনঃ আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবগত করুণতিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

أن تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله واليوم الآخر وأن تؤمن بالقدر خيره وشره

অর্থঃ ((ঈমান হলোঃ আল্লাহ তাঁর ফিরিশতাদের, তাঁর কিতাব সমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনা, এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনা।))

ইসলাম ধর্মে ফিরিশতাদের প্রতি ঈমানের স্থান ও তার বিধানঃ ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান আনা, ঈমানের ছয়টি রুকনের দ্বিতীয় রুকন বা স্তম্ভফিরিশতাদের প্রতি ঈমান আনা ছাড়া কোন ব্যক্তির ঈমান সঠিক ও গ্রহণ যোগ্য হবেনাসম্মানিত ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব হওয়ার উপর সকল মুসলমান একমত যারা সকল ফিরিশতাদের অথবা তাঁদের আংশিকের অস্তিত্বকে যাদের কথা আল্লাহ্ উল্লেখ করেছেন, অস্বীকার করবে তারা কুফুরী করলো, এবং কুরআন, হাদীস ও ইজমার বিরোধিতা করলো আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

وَمَن يَكْفُرْ بِاللّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيداً

[سورة النساء، الآية: 136]

অর্থঃ ((যে আল্লাহ্ তা'আলাকে, তাঁর ফিরিশতাদেরকে, তাঁর কিতাব সমূহকে এবং তাঁর রাসূলগণকে ও কিয়ামত দিবসকে অস্বীকার করবে, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহুদূরে গিয়ে পড়বে।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৩৬]

(২) ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান আনার পদ্ধতিঃ ফিরিশতাদের প্রতি সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত ভাবে ঈমান আনাসংক্ষিপ্ত ঈমান নিম্নের বিষয় গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে

প্রথমঃ -তাদের অস্তিত্বের স্বীকার করা, তারা আল্লাহর সৃষ্টি জীব, আল্লাহ্ তাদেরকে তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেনতাদের অস্তিত্ব প্রকৃত, তাদেরকে আমাদের না দেখা, তাদের অনুস্তিত্বের অর্থ নয়, কারণ পৃথিবীতে অনেক সূক্ষ্ম সৃষ্টিজীব রয়েছে, তাদেরকে আমরা দেখতে পাইনা, অথচ তারা প্রকৃত পক্ষ্যে রয়েছে

-নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিব্রাঈল আলাইহিস সালামকে তাঁর প্রকৃত আকৃতীতে দু'বার দেখেছেন

-কতিপয় সাহাবী কিছু ফিরিশতাদেরকে মানুষের আকৃতীতে দেখেছেন

-ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল তার মুসনাদে আব্দুল্লাহ্ বিন মাসউদ হতে বর্ণনা করেছেনতিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম কে তাঁর নিজস্ব আকৃতীতে ছয় শত পাখা বিশিষ্ট অবস্থায় দেখেছেনপ্রত্যেক পাখা একেক প্রান্ত ঢেকে রেখেছে

-জিব্রাঈলের 'আলাইহিস্ সালাম প্রসিদ্ধ হাদীস যা ইমাম মুসলিম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন, তাতে প্রমাণিত হয় যে, জিব্রাঈল 'আলাইহিস্ সালাম মানুষের আকৃতীতে ধপধপে সাদা পোষাকে, মিশ মিশ কালো চুলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসেছিলেনতাঁর উপর ভ্রমণের কোন নিদর্শন ছিলনাসাহাবাদের কেহ তাঁকে চিনতে পারে নাই

দ্বিতীয়ঃ আল্লাহ্ তাদেরকে যে সম্মান দিয়েছেন, তাদেরকে সেই সম্মান দেওয়াতারা আল্লাহর বান্দা বা দাসআল্লাহ্ তাদেরকে সম্মানিত করেছেন, তাদের মর্যাদাকে উঁচু করেছেন এবং তাদেরকে নৈকট্য দান করেছেনতাদের কেহ্ কেহ্ আল্লাহর ওয়াহী ইত্যাদির রাসূল বা দূতআল্লাহ্ তাদেরকে যতটুকু ক্ষমতার মালিক করেছেন,তারা ততটুকু ক্ষমতারই মালিকতার পরও তারা তাদের নিজেদের ও অন্যদের লাভ-ক্ষতির মালিক নয়এই জন্য আল্লাহ্ ছাড়া তাদেরকে এ রুবুবীয়াতের বা প্রভুত্তের গুনে গুনাম্বিত করা তো দূরের কথা, যেমন-নাসারারা রূহুল কুদ্দুস (জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম) সম্পর্কে ধারণা করেছে বরং তাদের জন্যে ইবাদাতের কোন অংশ পালন করা বৈধ নয়আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَداً سُبْحَانَهُ بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ - لَا يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُم بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ

[سورة الأنبياء، الآيتان: 26-27]

অর্থঃ ((তারা বললঃ দয়াময় আল্লাহ্ সন্তান গ্রহণ করেছেতাঁর জন্য কখনও ইহা যোগ্য নয়বরং তাঁরা (ফিরিশতারা) তো তাঁর সম্মানিত বান্দাতারা আগে বেড়ে কথা বলতে পারেনা এবং তারা তাঁর আদেশেই কাজ করে।)) [সূরা আল-আম্বিয়া,আয়াত-২৬-২৭] তিনি আরো বলেনঃ

لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ

[سورة التحريم، الآية: 6]

অর্থঃ ((তারা আল্লাহ্ তা'আলা যা আদেশ করেন,তা অমান্য করেনা এবং যা করতে আদেশ করা হয় তাই করে।)) [সূরা আত-তাহরীম,আয়াত-৬] প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর উপর এতটুকু ঈমান আনা ওয়াজেবতাদের উপর অপরিহার্য যে, ইহা জানবে ও বিশ্বাস করবেকেননা এ বিষয়ে অজ্ঞতা কোন গ্রহণ যোগ্য ওযর বা কারণ নয়

ফিরিশতাদের প্রতি বিস্তারিত ঈমান আনা নিম্নে বর্ণিত বিষয় গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে-

প্রথমতঃ ফিরিশতাদের সৃষ্টির মূল উত্সঃ আল্লাহ তা'আলা ফিরিশতাদের কে নূর হতে সৃষ্টি করেছেন, যেমন-জি্বন জাতিকে আগুন হতে সৃষ্টি করেছেন, এবং আদম সন্তানদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন, আর তাদের সৃষ্টি হলো আদম আলাইহিস্ সালাম এর সৃষ্টির পূর্বে হাদীসে এসেছেঃ

خلقت الملائكة من نور، وخلق الجان من مارج من نار، وخلق آدم مما وصف لكم

[رواه مسلم]

অর্থঃ ((ফিরিশতারা নূর হতে, জিনেরা অগি্ন স্ফুলিঙ্গ হতে, আর আদম আলাইহিস্ সালাম মাটি হতে সৃষ্ট।)) [মুসলিম শরীফ]

দ্বিতীয়তঃ ফিরিশতাদের সংখ্যাঃ ফিরিশতারা সৃষ্ট জীব, তাদের আধিক্যের জন্যে আল্লাহ্ আয্যা ও জাল্লা ছাড়া তাদের সংখ্যা কেহ জানেনাআকাশে প্রতি চার আংগুল পরিমাণ জায়গায় একেক জন ফিরিশতা সিজ্দারত অথবা দন্ডায়মান অবস্থায় রয়েছেনসপ্তম আকাশে আল- বায়তুল মা'মুরে সত্তর হাজার ফিরিশতা প্রত্যহ প্রবেশ করছেনতাদের আধিক্যতার জন্যে দ্বিতীয় বার ফিরে আসার সুযোগ পাবেননাকিয়ামত দিবসে জাহান্মাম উপস্থিত করা হবে, তার সত্তর হাজার লাগাম হবেপ্রত্যেক লাগামে সত্তর হাজার ফিরিশতা হবে, তারা জাহান্মকে টেনে নিয়ে আসবেআল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

وَمَا يَعْلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلَّا هُوَ

[سورة المدثر، الآية: 31]

অর্থঃ ((আর আপনার পালন কর্তার বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন।)) [সূরা আল-মুদ্দাছির,আয়াত-৩১] হাদীসে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

أطَّت السماء وحق أن تئطَّ، ما فيها موضع قدم إلا وفيه ملك ساجد وراكع

অর্থঃ ((আকাশ গর্জন করছে,আর গর্জন করারই কথাকারণ প্রত্যেক জায়গায় সিজ্দা কারী ও রুকুকারী ফিরিশতা রয়েছে।)) তিনি সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল-বাইতুল মা'মুর সম্পর্কে বলেনঃ

يدخله في كل يوم سبعون ألف ملك لا يعودون إليه

[رواه البخاري ومسلم]

অর্থঃ ((বাইতুল মামুরে প্রত্যহ সত্তর হাজার ফিরিশতা প্রবেশ করেন, তারা দ্বিতীয় বার ফিরে আসার সুযোগ পাবেননা।)) [বুখারী ও মুসলিম ] তিনি সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ

يؤتي بجهنم يومئذٍ لها سبعون ألف زمام، مع كل زمام سبعون ألف ملك

[رواه مسلم]

অর্থঃ ((জাহান্মাম কে নিয়ে আসা হবে, সে দিন তার সত্তর হাজার লাগাম হবেআর প্রত্যেক লাগামে সত্তর হাজার ফিরিশতা হবে।)) [মুসলিম] এখানে ফিরিশতাদের এক বিরাট সংখ্যা প্রকাশিত হলযারা প্রায় (৭০০০০ ৭০০০০=) ৪৯০কোটি জন ফিরিশতা তবে বাকী ফিরিশতাদের সংখ্যা কত হতে পারে? পবিত্রতা সেই সত্তার যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেনতাদেরকে পরিচালনা করেনতাদের সংখ্যা পরিসংখ্যান করে রেখেছেন

তৃতীয়তঃ ফিরিশতাদের নামঃ কুরআন ও হাদীসে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্যে যে, সকল ফিরিশতাদের নাম উল্লেখ্য করেছেন, তাদের প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিবতাদের মধ্যে অন্যতম হলেন তিনজন

(১) জিবরীলঃ তাকে জিবরাঈল ও বলা হয়তিনিই রুহুল কুদ্দস, যিনি ওয়াহী-যা অন্ত-রের সুধা-নিয়ে রাসূলগণের নিকট অবতরণ হন

(২) মিকাঈলঃ তাকে প্রশান্তি বলা হয়বৃষ্টি বর্ষণের দায়িত্বে নিয়োযিত, যা জমির জীবিকা স্বরূপআল্লাহ যেখানে বর্ষণের আদেশ দেন সেখানে বর্ষণ পরিচালনা করেন

(৩) ইসরাফীলঃ তিনি শিংগায় ফুতকার দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেনপার্থিব্য জীবন শেষে পারলৌকিক জীবন শুরু হওয়ার ঘোষনা স্বরূপ এবং এর দ্বারাই, (মৃত) দেহ সমূহের পুনরুজীবন ঘটবে

চতুর্থতঃ ফিরিশতাদের সিফাত বা বৈশিষ্ট্যঃ ফিরিশতারা প্রকৃত সৃষ্টি জীবতাদের প্রকৃত শরীর রয়েছে যা সৃষ্টিগত ও চরিত্র গত গুনে গুনাম্বিত, নিম্নে তাদের কিছু গুন বর্ণনা করা হলোঃ

(ক) তাদের সৃষ্টি মহান এবং তাদের শরীর হলো বিশাল আকৃতিরঃ আল্লাহ তায়ালা ফিরিশতাদেরকে শক্তি শালী ও বড় আকৃতীতে সৃষ্টি করেছেনফলে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে আসমান ও যমিনে যে বড় বড় কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা তার উপযোগী

(খ) তাদের ডানা রয়েছেঃ আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাদের জন্যে দুই, তিন ও চার বা ততোধিক পাখা দিয়ে সৃষ্টি করেছেনযেমন- রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল 'আলাইহিস্ সালাম কে দেখেছিলেন, তার নিজ আকৃতি ছয়শত পাখা বিশিষ্ট অবস্থায়যা আকাশের প্রান্তভাগ ঢেকে রেখেছিলআল্লাহ তাআলা বলেনঃ

الْحَمْدُ لِلَّهِ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ جَاعِلِ الْمَلَائِكَةِ رُسُلاً أُولِي أَجْنِحَةٍ مَّثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ يَزِيدُ فِي الْخَلْقِ مَا يَشَاءُ

[سورة فاطر، الآية: 1]

অর্থঃ ((সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা এবং ফিরিশতাদেরকে করেছেন বার্তাবাহক- তারা দুই দুই, তিন তিন ও চার চার পাখা বিশিষ্টতিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন।)) [সূরা ফাত্বির,আয়াত-১]

(গ) তাদের পানাহার প্রয়োজন হয় নাঃ আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাদেরকে সৃষ্টি করেছেনতাঁরা পানাহারের মুহতাজ বা মুখাপেক্ষী ননতারা বিবাহ করেননা, সন্তান ও হয়না

(ঘ) ফিরিশতারা অন্তর বিশিষ্ট ও জ্ঞানীঃ তাঁরা আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন, এবং আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলেছেনতারা আদম ও অন্যান্য নবীদের সাথে ও কথা বলেছেন

(ঙ) তাদের নিজ আকৃতি ছাড়া অন্য আকৃতি ধারণ করার ক্ষমতা রয়েছেঃ আল্লাহ স্বীয় ফিরিশতাদেরকে পুরুষ মানুষের আকৃতি ধারণ করার ক্ষমতা দিয়েছেনইহা মূর্তি পূজকদের ভ্রান্ত ধারণার খন্ডন যারা ধারণা করে যে ফিরিশতারা আল্লাহর মেয়ে বা কন্যাতাদের আকৃতি ধারনের পদ্ধতি আমাদের জানা নেইতবে তারা এমন সূক্ষ্ম আকৃতি ধারণ করে যে তাদের ও মানুষের মাঝে পার্থক্য করা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে

(চ) ফিরিশতাদের মৃত্যুবরণঃ মালাকুল মাউত বা জান কবজকারী ফিরিশতা সহ সকল ফিরিশতারা কিয়ামত দিবসে মৃত্যু বরণ করবেনঅতঃপর আল্লাহ তাদেরকে যে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সে দায়িত্ব পালন করার জন্য পুনরুথ্যান করা হবে

(ছ) ফিরিশতাদের ইবাদাতঃ ফিরিশতারা আল্লাহর অনেক ধরণের ইবাদাত করেনসালাত, দো', তাসবীহ রুকু, সিজদাহ, ভয়-ভীতি ও ভাল বাসা ইত্যাদি

তাদের ইবাদাতের বর্ণনা নিম্নরূপঃ

(১) তারা ক্লান্তহীন ভাবে আল্লাহর ইবাদাতে সর্বদায় রত থাকেন

(২) তারা একনিষ্টতার সাথে আল্লাহ তাআলার জন্যে ইবাদাত করেন

(৩) তারা নাফারমানী বর্জন করে সর্বদায় আনুগত্যে মাশগুল থাকেন, কেননা তারা মাসুম অর্থাৎ, নাফারমানী ও পাপাচার হতে মুক্ত

(৪) অধিক ইবাদাত করার সাথে সাথে আল্লাহর জন্য বিনয়-নম্রতা প্রকাশ করাআল্লাহ তাআলা বলেনঃ

يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ

[سورة الأنباء، الآية: 20]

অর্থঃ ((তারা রাত্রি দিন তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করে এবং ক্লান্ত হয়না।)) [সূরা আল-আম্বিয়া,আয়াত-২০]

পঞ্চমতঃ ফিরিশতাদের কর্ম সমূহঃ ফিরিশতারা অনেক বড় বড় কাজ সম্পাদন করেন, যার দায়িত্ব আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেনসে কাজ গুলো নিম্নরূপঃ

(১) আরশ বহন করা

(২) রাসূলগণের উপর ওয়াহী অবতীর্ণের দায়িত্ব প্রাপ্ত ফিরিশতা

(৩) জান্নাত ও জাহান্নামের পাহারাদার

(৪) উদ্ভিদ, বৃষ্টি বর্ষণ ও বাদল পরিচালনার দায়িত্ব প্রাপ্ত

(৫) পাহাড়-পর্বতের দায়িত্ব প্রাপ্ত

(৬) শিংগায় ফুকারের দায়িত্ব প্রাপ্ত ফিরিশতা

(৭) আদম সন্তানের কর্ম লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব প্রাপ্ত

(৮) আদম সন্তানকে হেফাযত করার দায়িত্ব প্রাপ্তআল্লাহ যখন আদম সন্তানের উপর কোন কাজ নির্ধা করেন, তখন তারা তাকে পরিত্যাগ করেন, অতঃপর আল্লাহ তাদের জন্য যা নির্ধারণ করেছিলেন, তা পতিত হয় বা সংঘটিত হয়

(৯) মানুষের সাথে থাকার ও তাদেরকে কল্যানের দিকে আহ্বানের দায়িত্ব প্রাপ্ত

(১০) জরায়ুতে বীর্য সঞ্চার, মানুষের (দেহে) অন্তরে আত্মা প্রক্ষেপ, তার রিযিক, কর্ম ও সৌভাগ্য বা দূর্ভাগ্য লিপিবদ্ধে দায়িত্ব প্রাপ্ত ফিরিশতা

(১১) মৃত্যুর সময় আদম সন্তানের আত্মা কবজ করার দায়িত্ব প্রাপ্ত ফিরিশতা

(১২) মানুষকে কবরে জিজ্ঞাসাবাদ এবং উত্তর অনুযায়ী শান্তি বা শাস্তি প্রদানে দায়িত্ব প্রাপ্ত

(১৩) নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর তাঁর উম্মতের সালাম পৌঁছানোর দায়িত্ব প্রাপ্ত ঐতাই মুসলিম ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর তার সালাম প্রেরণের জন্য তাঁর কাছে (তাঁর কবরের কাছে) ভ্রমণের প্রয়োজন হয় নাবরং পৃথিবীর যে কোন স্থান হতে তাঁর উপর সালাম, ও দরুদ পাঠ করাই যথেষ্টকারণ ফিরিশতারা তার সালাম পৌঁছিয়ে দেনমাসজিদে নাবাবীতে এক মাত্র নামাজ পড়ার উদ্দেশে ভ্রমণ করা বৈধ রয়েছে

উল্লেখিত এ প্রসিদ্ধ কাজ সমূহ ব্যতীত তাদের (ফিরিশতাদের) আরো অনেক কাজ রয়েছেনিম্নে এর প্রমাণ বর্ণিত হলো-

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آمَنُوا

[سورة غافر، الآية: 7]]

অর্থঃ ((যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চার পাশে আছে, তারা তাদের পালনকর্তার সপ্রশংসা পবিত্রতা বর্ণনা করে, তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।)) [সূরা গাফির, আয়াত-৭] তিনি আরো বলেনঃ

قُلْ مَن كَانَ عَدُوّاً لِّجِبْرِيلَ فَإِنَّهُ نَزَّلَهُ عَلَى قَلْبِكَ بِإِذْنِ اللّهِ

[سورة البقرة، الآية: 97]

অর্থঃ ((আপনি বলে দিন, যে কেউ জিবরাঈলের শক্র হয়-যেহেতু তিনি আল্লাহর আদেশে এ কালাম আপনার অন্তরে নাযিল করেছেন।)) [সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-৯৭] তিনি আরো বলেনঃ

وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلآئِكَةُ بَاسِطُواْ أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُواْ أَنفُسَكُمُ

[سورة الأنعام، الآية: 93]

অর্থঃ ((যদি আপনি দেখেন যখন জালেমরা মৃত্যু-যন্ত্রনায় থাকে এবং ফিরিশতারা স্বীয় হস্ত প্রসারিত করে বলে, বের কর স্বীয় আত্মা।)) [সূরা আল-আনআম,আয়াত-৯৩]

ষষ্টতঃ আদম সন্তানের উপর ফিরিশতাদের অধিকারঃ

(ক) তাদের প্রতি ঈমান আনা

(খ) তাদেরকে ভাল বাসা, সম্মান করা,ও তাদের মর্যাদা বর্ণনা করা

(গ) তাদেরকে গালি দেওয়া, মর্যাদা ক্ষুন্য করা,ও তাদেরকে নিয়ে হাসি রহস্য করা হারাম

(ঘ) ফিরিশতারা যা অপছন্দ করেন তা হতে দূরে থাকাকারণ,আদম সন্তানরা যাতে কষ্ট পায়,তারাও তাতে কষ্ট পায়

ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান আনার সুভ-ফলাফলঃ

(ক) ঈমান পরিপূর্ণ হয়কারণ তাদের প্রতি ঈমান আনা ছাড়া কারো ঈমান পরিপূর্ণ হবেনা

(খ) তাদের সৃষ্টিকর্তার মহত্ব বা শ্রেষ্ঠত্ব ও তাঁর শক্তি ও রাজত্বে জ্ঞান অর্জনকারণ, সৃষ্টিকর্তা, শ্রেষ্ঠত্ব হতে সৃষ্টি জীবের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পায়

(গ) তাদের গুণাগু, তাদের অবস্থা, ও কর্ম জানার মাধ্যমে মুসলিম ব্যক্তির ঈমান বৃদ্ধি পায়

(ঘ) আল্লাহ তাআলা যখন মুমিনদেরকে ফিরিশতা দিয়ে হেফাযত করেন, তখন তাদের (মুমিনদের) শান্তি ও তৃপ্তি অর্জন হয়

(ঙ) তাদের ইবাদাত সঠিক পন্থায় হওয়ায় ও মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে ফিরিশতাদেরকে ভালবাসা।

(চ) খারাপ ও নাফারমানী পূর্ণ কাজকে অপছন্দ করা

(ছ) আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের গুরুত্ব দেন এই জন্য তাঁর প্রশংসা করাযেমন আল্লাহ ঐ সকল ফিরিশতাদের কাউকে তাদেরকে (বান্দাদেরকে) হিফাজতের,ও কর্ম লিখার ইত্যাদি কল্যাণ জনক কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন

তৃতীয় স্তম্ভ

الركن الثالث :الإيمان بالكتب

তৃতীয় রুকনঃ আসমানী গ্রন্থ সমূহের প্রতি ঈমান

রাসূলগণের উপর আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান আনা, ইহা ঈমানের তৃতীয় রুকন বা স্তম্ভ নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলগণ কে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছেনএবং তাঁদের (রাসূলগণের) উপর কিতাব সমূহ অবতীর্ণ করেছেন, মাখলুকাতের হিদায়াত ও রহমত স্বরূপযাতে-দুনিয়া ও আখিরাতে সৌভাগ্যশীল হয়এবং যাতে তাদের চলার একটি সুন্দর পথ হয়আর মানুষ যে বিষয়ে মতনৈক্যে লিপ্ত, তার সমাধানকারী বা ফায়সালাকারী হয় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

َقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ

[سورة الحديد، الآية:25]

অর্থঃ ((আমি আমার রাসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও মীযান (মানদন্ড) যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্টা করে।)) [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত-২৫] তিনি আরো বলেনঃ

كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُواْ فِيهِ

[سورة البقرة، الآية:213]

অর্থঃ ((সকল মানুষ একই জাতি সত্তার অর্ন্তভুক্ত ছিলঅতঃপর আল্লাহ তাআলা নবীদেরকে পাঠালেন সুসংবাদ দাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবেআর তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করলেন সত্য কিতাব, যাতে মানুষের মাঝে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন।)) [সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-২১৩]

(১) কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান আনার মূল কথাঃ

কিতাব সমূহের প্রতি ঈমানঃ এ কথার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আল্লাহর অনেক কিতাব রয়েছেযা তিনি তাঁর রাসূলগণের (আলাইহিমুস সালাম) উপর নাযিল করেছেনআর তা সত্যিকার অর্থে তাঁর (আল্লাহর) বাণীআর তা হল জ্যোতি ও হিদায়াতআর নিশ্চয় এ কিতাব সমূহের মধ্যে যা রয়েছে তা সত্য ও ন্যায় সিণ্ঠ, এর অনুসরণ করা ও তদানুযায়ী আমল করা ওয়াজিবএকমাত্র আল্লাহ ছাড়া এ কিতাব সমূহের সংখ্যা কেউ জানে নাআল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَكَلَّمَ اللّهُ مُوسَى تَكْلِيماً

[سورة النساء، الآية:164]

অর্থঃ ((আর আল্লাহ মূসার সাথে কথোপথন করেছেন সরাসরি।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৬৪] তিনি আরো বলেনঃ

وَإِنْ أَحَدٌ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّى يَسْمَعَ كَلاَمَ اللّهِ

[سورة التوبة، الآية:6]

অর্থঃ ((আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দিবে, যাতে সে আল্লাহর বাণী শুনতে পায়।)) [সূরা আত তাওবাহ-আয়াত-৬]

(২) কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান আনার বিধানঃ

সকল কিতাবের প্রতি ঈমান আনা যা আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের (আলাইহিমুস সালাম) উপর অবতীর্ণ করেছেন, আল্লাহ তাবারাকা ও তাআলা সত্যিকার অর্থে কিতাব সমূহের মাধ্যমে কথা বলেছেনএবং তা (আল্লাহর পক্ষহতে) অবতীর্ণ, মাখলুক বা সৃষ্ট নয়,আর যে ব্যক্তি তা (কিতাব সমূহ) অথবা তাঁর কিছুকে অঙ্গীকার করবে, সে কাফের হয়ে যাবে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ آمِنُواْ بِاللّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِيَ أَنزَلَ مِن قَبْلُ وَمَن يَكْفُرْ بِاللّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيداً

[سورة النساء، الآية:136]

অর্থঃ ((হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন কর এবং বিশ্বাস স্থাপন কর তাঁর রাসূল ও তাঁর কিতাবের উপর ,যা তিনি অবতীর্ণ করেছেন স্বীয় রাসূলের উপর এবং সে সমস্ত কিতাবের উপর যে গুলো অবতীর্ণ করা হয়েছিল ইতিপূর্বেযে আল্লাহর উপর,তাঁর ফিরিশতাদের উপর, তাঁর কিতাব সমূহের উপর,এবং রাসূলগণের উপর ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাস করবেনা, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৩৬] তিনি আরো বলেনঃ

وَهَـذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ وَاتَّقُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

[سورة الأنعام، الآية:155]

অর্থঃ ((এটি এমন একটি গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুব মঙ্গলময়অতএব এর অনুসরণ কর এবং ভয়কর-যাতে তোমরা করুনা প্রাপ্ত হও।)) [সূরা আল-আনআম,আয়াত-১৫৫]

(৩) এসব কিতাবের প্রতি মানুষের প্রয়োজনীয়তা এবং তা অবতীর্ণ করার পিছনে হিকমাত বা রহস্যঃ

প্রথমতঃ যাতে রাসূল 'আলাইহিস্ সালামের উপর অবতীর্ণ কিতাব তাঁর উম্মাতের জন্য জ্ঞান কোষ স্বরূপ হয়ফলে তারা তাদের দ্বীন সম্পর্কে জানার জন্যে এর দিকে প্রত্যাবর্তন করে

দ্বিতীয়তঃ যাতে রাসূল 'আলাইহিস্ সালামের উপর অবতীর্ণ কিতাব তাঁর উম্মাতের প্রত্যেক মতনৈক্য পূর্ণ বিষয়ে ইনসাফ ভিক্তিক বিচারক হয়

তৃতীয়তঃ যাতে অবতীর্ণ কিতাব রাসূল 'আলাইহিস্ সালামের ইন্তেকালের পর দ্বীন বা ধর্ম সংরক্ষণকারী হিসাবে দাঁড়াতে পারে, স্থান ও কালের যতই দুরুত্ব হোকনা কেনযেমন-আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (পরবর্তী)দাওয়াতের অবস্থা

চতুর্থতঃ যাতে এ অবতীর্ণ কিতাব সমূহ আল্লাহর পক্ষহতে হুজ্জাত (পক্ষ বিপক্ষের দলীল)স্বরূপ হয়যেন সৃষ্টি জীব এর (কিতাব সমূহের) বিরোধিতা করা এবং এর আনুগত্য হতে বের হয়ে যাওয়ার সমর্থ্য না রাখেআল্লাহ্ তা‌‌'আলা বলেনঃ

كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُواْ فِيهِ

[سورة البقرة، الآية:213]

অর্থঃ ((সকল মানুষ একই জাতি সত্ত্বার অন্তর্ভুক্ত ছিলঅতঃপর আল্লাহ তাআলা নবীদেরকে পাঠালেন সুসংবাদ দাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসাবেআর তাদের সাথে অবতীর্ণ করলেন সত্য কিতাব,যাতে মানুষের মাঝে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন।)) [সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-২১৩]

(৪) কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান আনার নিয়মঃ

আল্লাহর কিতাব সমূহের প্রতি সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত ভাবে ঈমান আনা হয়ে থাকে

সংক্ষিপ্ত ঈমানঃ এ বিশ্বাস করবে (ঈমান আনা) যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলগণের উপর অনেক কিতাব অবতীর্ণ করেছেন

বিস্তারিত ভাবে ঈমানঃ ইহা হলো, আল্লাহ কুরআন কারীমে যে সকল কিতাবের নাম উল্লেখ্য করেছেন, তার প্রতি ঈমান আনাতা হতে আমরা জেনেছি-কুরআন, তাওরাত, যাবুর, ইনজীল, এবং ইব্রাহীম, ও মূসা এর প্রতি অবতীর্ণ পুস্তিকা সমূহ (আলাইহিমুস সালাম)

আরো ঈমান আনা যে, ঐসকল কিতাব ছাড়াও আল্লাহর অনেক কিতাব রয়েছে, যা তাঁর নবীগণের উপর অবতীর্ণ করেছেনআর আল্লাহ ছাড়া ঐ সকল কিতাবের নাম ও সংখ্যা কেউ জানেনা এ কিতাব গুলো অবতীর্ণ হয়েছে যাবতীয় সতকর্ম ও ইবাদাত একমাত্র আল্লাহ তাআলার নিমিত্তে সম্পাদনের মাধ্যমে তাঁর তাওহীদ (একত্ববাদ) বাস্তবায়ন এবং পৃথিবীতে শিরক ও অন্যায়-অনাচার দূরীভূত করার জন্যমূলত সকল নবীদের দাওয়াত এক মূলনীতির (তাওহীদ প্রতিণ্ঠা ও শির্ক বর্জনের) উপর ছিল, যদিও তাঁরা নিয়ম কানুন ও বিধি-বিধানে কিছুটা ভিন্ন রকম ছিলেন

এ ঈমানও রাখা যে, পূর্ববর্তী রাসূলদের প্রতি (আল্লাহর পক্ষ হতে) কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল আর আল-কুরআনের প্রতি ঈমান আনা হলোঃ তা (অন্তরে ও মুখে) স্বীকৃতি দেয়া এবং কুরআনে যা রয়েছে তা অনুসরণ করা আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللّهِ وَمَلآئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ

[سورة البقرة، الآية:285]

অর্থঃ ((রাসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালন কর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুমিনরাওসকলেই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থ সমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি।)) [সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-২৮৫] তিনি আরো বলেনঃ

اتَّبِعُواْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء

[سورة الأعراف، الآية:3]

অর্থঃ তোমরা অনুসরণ কর,যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছেআর আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করোনা। [সূরা আল-আরাফ,আয়াত-৩]

পূর্ববতী কিতাবের চেয়ে কুরআনের কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট রয়েছেঃ

(১) আল-কুরআন স্বীয় শব্দ, অর্থ এবং তাতে যে জ্ঞান ও পার্থিব তথ্য রয়েছে তা সর্ব বিষয়ে এক অলৌকিক শক্তি

(২) আল-কুরআন সর্ব শেষ আসমানী কিতাব, কুরআনের মাধ্যমে আসমানী কিতাবের সমাপ্তি ঘটেছেযেমন-আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রিসালাতের দ্বারা সকল রিসালাতের পরিসমাপ্তি ঘটেছে

(৩) সকল প্রকার বিকৃতি ও পরিবর্তন হতে আল্লাহ কুরআনকে হেফাজত করবেনইহা অন্যান্য কিতাব হতে সতন্ত্রকেননা সে সব কিতাবে বিকৃতি ও পরিবর্তন পরিবর্ধন ঘটেছে

(৪) আল-কুরআন পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়ন ও সংরক্ষণকারী

(৫) কুরআন পূর্ববর্তী সকল কিতাবের রহিতকারীআল্লাহ তাআলা বলেনঃ

مَا كَانَ حَدِيثاً يُفْتَرَى وَلَـكِن تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلَّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

[سورة يوسف، الآية:111]

অর্থঃ ((এটা কোন মনগড়া কথা নয়, কিন্ত যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের জন্য পূর্বেকার কালামের সামর্থন এবং প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ রহমত ও হিদায়াত।)) [সূরা ইফসুফ,আয়াত-১১১]

(৫) পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের সংবাদ গ্রহণ করাঃ

আমরা নিশ্চিত ভাবে জানি যে, পূর্ববর্তী কিতাবে আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের নিকটে ওয়াহীর মাধ্যমে যে সংবাদ দিয়েছেন তা সত্য, তাতে কোন প্রকার সন্দেহ নেইএর অর্থ এ নয় যে, বর্তমানে আহলে কিতাবদের (ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের) নিকট যে কিতাব রয়েছে তা গ্রহণ করবোকারণ তা বিকৃত করা হয়েছে, আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের নিকট যে ভাবে অবতীর্ণ করেছেন সে ভাবে নেইপূর্ববর্তী কিতাব হতে আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর কিতাবে (কুরআনে) যে সংবাদ দিয়েছেন তা হতে আমরা নিশ্চিত ভাবে জেনেছি যে, কেউ কারও গোনাহ বহন করবে নামানুষ তাই পায় যা সে করে, তার কর্ম শীঘ্রই দেখানো হবে, অতঃপর তাকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

َمْ لَمْ يُنَبَّأْ بِمَا فِي صُحُفِ مُوسَى - وَإِبْرَاهِيمَ الَّذِي وَفَّى - أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى - وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَى - َأَنَّ سَعْيَهُ سَوْفَ يُرَى - ثُمَّ يُجْزَاهُ الْجَزَاء الْأَوْفَى

[سورة النجم، الآيات:36-41]

অর্থঃ ((তাকে কি জানানো হয়নি যা আছে মূসার কিতাবে এবং ইবরাহীমের কিতাবে যে,তার দায়িত্ব পালন করে ছিল ? কিতাবে আছে যে, কেউ কারও গোনাহ বহন করবে না, এবং মানুষ তাই পায় যা সে করেআর তার কর্ম শীঘ্রই দেখানো হবে, অতঃপর তাকে পূর্ণ-প্রতিদান দেয়া হবে।)) [সূরা আন-নজম,আয়াত-৩৬-৪১] তিনি আরো বলেনঃ

َلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا - وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى - إِنَّ هَذَا لَفِي الصُّحُفِ الْأُولَى - صُحُفِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى

[سورة الأعلى، الآيات:16-19]

অর্থঃ ((বস্ততঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও,অথচ পরকালের জীবন উতকৃষ্ট ও স্থায়ীএটা লিখিত রয়েছে পূর্ববর্তী কিতাব সমূহে, ইবরাহীম ও মূসার কিতাব সমূহে।)) [সূরা আল-আলা,আয়াত-১৬-১৯]

পূর্ববর্তী কিতাবের বিধানঃ কুরআনে যে সকল বিধান রয়েছে তা মেনে চলা আমাদের অপরিহার্যতবে পূর্ববর্তী কিতাবে যা রয়েছে তা নয়কারণ আমরা দেখবো পূর্ববর্তী কিতাবে যে বিধান রয়েছে তা যদি আমাদের শরিয়াতের পরিপন্থী হয়, তবে আমরা তা আমল করবো না, তা বাতিল এ জন্যে নয়, বরং তা সে সময় সত্য ছিল, এখন তা আমল করা আমাদের উপর অপরিহার্য নয়কারণ তা আমাদের শরীয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছেআর যদি তা আমাদের শরীয়াতের অনুসরণ হয়, তবে তা সত্য বলে বিবেচিত হবেআমাদের শরীয়াত তা সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে

(৬) কুরআন ও হাদীসে যে সকল আসমানী কিতাবের নাম উল্লেখ্য হয়েছে তা হলোঃ

(১) কুরআনুল কারীমঃ কুরআন হল আল্লাহর বানী যা তিনি শেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল করেছেনকুরআন সর্বশেষ অবতীর্ণ কিতাবআল্লাহ কুরআনকে বিকৃতি ও পরির্বতন হতে হেফাযত করার দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছেন এবং সকল আসমানী কিতাবের রহিতকারী করেছেন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ

[سورة الحجر، الآية:9]

অর্থঃ ((আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।)) [সূরা আল-হিজর, আয়াত-৯] তিনি আরো বলেনঃ

وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِناً عَلَيْهِ فَاحْكُم بَيْنَهُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ

[سورة المائدة، الآية:48]

অর্থঃ ((আমি আপনার প্রতি অবতীর্ন করেছি সত্যগ্রন্থ, যা পূর্ববর্তী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী এবং সে গুলোর বিষয়বস্তর রক্ষণা বেক্ষণকারীঅতএব আপনি তাদের পারস্পারিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করুন।)) [সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত-৪৮]

(২) তাওরাতঃ তাওরাত ঐ কিতাব যাকে আল্লাহ মূসা 'আলাইহিস্ সালামের উপর নূর (জ্যোতি) ও হিদায়াত স্বরূপ নাযিল করেছিলেনবানী ইসরাঈলের নবী ও আলেমগণ এর দ্বারা ফায়সালা করতেনসুতরাং মূসা 'আলাইহিস্ সালামের উপর আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব তাওরাত এর প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব, বর্তমান তথা কথিত ইয়াহুদীদের হাতে বিকৃত তাওরাতের প্রতি নয়আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

ِنَّا أَنزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُواْ لِلَّذِينَ هَادُواْ وَالرَّبَّانِيُّونَ وَالأَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُواْ مِن كِتَابِ اللّهِ

[سورة المائدة، الآية:44]

অর্থঃ ((আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি, এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে, আল্লাহর আনুগত্যশীল নবী, আল্লাহভক্ত ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইয়াহুদীদের ফায়সালা দিতেনকেননা তাদেরকে আল্লাহর এই গ্রন্থের দেখা শোনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।)) [সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত-৪৪]

(৩) ইঞ্জীলঃ ইঞ্জীল ঐ কিতাব যা সত্যিকার অর্থে আল্লাহ ঈসা 'আলাইহিস্ সালামের উপর নাযিল করেছিলেন, যা পুর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবের সত্যায়নকারীসুতরাং ঐ ইঞ্জীলের উপর ঈমান আনা ওয়াজিব, যা সঠিক মূলনীতি সহ আল্লাহ ঈসা 'আলাইহিস্ সালামের উপর নাযিল করেছিলেনখৃষ্টানদের নিকট বিক্রিত ইঞ্জীল সমূহে নয় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَقَفَّيْنَا عَلَى آثَارِهِم بِعَيسَى ابْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَآتَيْنَاهُ الإِنجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ وَمُصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِينَ

[سورة المائدة، الآية:46]

অর্থঃ ((আমি তাদের পেছনে মারিয়ামের পুত্র ঈসাকে প্রেরণ করেছিতিনি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তাওরাতের সত্যায়নকারী ছিলেনআমি তাকে ইঞ্জীল প্রদান করেছিএতে হেদায়াত ও আলো রয়েছেএটি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তাওরাতের-সত্যায়ন করে,পথ প্রদর্শন করে এবং এটি আল্লাহভীরুদের জন্যে হেদায়াত ও উপদেশবানী।)) [সূরা আল-মায়িদাহ,আয়াত-৪৬] তাওরাত ও ইঞ্জীলে যা রয়েছে তন্মধ্যে আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রিসালাতের সুসংবাদ রয়েছে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الرَّسُولَ النَّبِيَّ الأُمِّيَّ الَّذِي يَجِدُونَهُ مَكْتُوباً عِندَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالإِنْجِيلِ يَأْمُرُهُم بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَالأَغْلاَلَ الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهِمْ

[سورة الأعراف، الآية:157]

অর্থঃ ((যারা আনুগত্য করে এ রাসূলের, যিনি নিরক্ষর নবী,যার সম্পর্কে তাদের নিজেদের কাছে রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জীলে লিখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে নির্দেশদেন সতকর্মের, বারণ করেন অসতকর্ম থেকে, তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষনা করেন ও নিষিদ্ধ করেন নিকৃষ্ট বুæসমূহ, আর তাদের উপর থেকে সে বোঝা নামিয়েছেন এবং বন্দীত্ব অপসারণ করেন যা তাদের উপর বিদ্যমান ছিল।)) [সূরা আল-আরাফ, আয়াত-১৫৭]

(৪) যাবুরঃ যাবুর ঐ কিতাব যা আল্লাহ দাউদ 'আলাইহিস্ সালামের উপর নাযিল করেছিলেনসুতরাং ঐ যাবুরের প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব যা আল্লাহ দাউদ 'আলাইহিস্ সালামের উপর নাযিল করেছিলেনসে যাবুর নয় যা ইয়াহুদীরা বিকৃত করে ফেলেছে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَآتَيْنَا دَاوُودَ زَبُوراً

[سورة النساء، الآية:163]

অর্থঃ ((আর দাউদকে দান করেছি যাবুর।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৬৩]

(৫) ইবরাহীম ও মূসা (আলাইহিস সালাম)এর সুহুফ বা পুস্তিকা সমূহঃ তা ঐ সকল পুস্তিকা যা আল্লাহ ইবরাহীম ও মূসা (আলাইহিস সালাম)কে দিয়েছিলেনকুরআন ও হাদীসে যা উল্লেখ্য হয়েছে তা ছাড়া এ সকল পুস্তিকা নিরুদ্দেশ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

َمْ لَمْ يُنَبَّأْ بِمَا فِي صُحُفِ مُوسَى - وَإِبْرَاهِيمَ الَّذِي وَفَّى - أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى - وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَى - َأَنَّ سَعْيَهُ سَوْفَ يُرَى - ثُمَّ يُجْزَاهُ الْجَزَاء الْأَوْفَى

[سورة النجم، الآيات:36-41]

অর্থঃ ((তাকে কি জানানো হয়নি যা আছে মূসার কিতাবে এবং ইবরাহীমের কিতাবে যে,তার দায়িত্ব পালন করে ছিল? কিতাবে আছে যে, কেউ কারও গোনাহ বহন করবে না, এবং মানুষ তাই পায় যা সে করেআর তার কর্ম শীঘ্রই দেখানো হবে, অতঃপর তাকে পূর্ণ-প্রতিদান দেয়া হবে।)) [সূরা আন-নজম,আয়াত-৩৬-৪১] আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

بَلْْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا - وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى - إِنَّ هَذَا لَفِي الصُّحُفِ الْأُولَى - صُحُفِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى

[سورة الأعلى، الآيات:16-19]

অর্থঃ ((বস্ততঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও,অথচ পরকালের জীবন উতকৃষ্ট ও স্থায়ীএটা লিখিত রয়েছে পূর্ববর্তী কিতাব সমূহে, ইবরাহীম ও মূসার কিতাব সমূহে।)) [সূরা আল-আলা, আয়াত ১৬-১৯]

{{{ পরবর্তী অংশ পূর্বের পোষ্ট থেকে পড়ুন }}}

1 comment:

IslamicActivity said...

বিংশ শতাব্দীর ইসলামী আন্দোলনের বিপ্লবী কন্ঠস্বর ও আপসহীন তাওহীদবাদী উস্তাজ সাইয়েদ কুতুব (রাহ:) তাঁর এই বইটিতে ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসকল বাধা বিপত্তি ও সংকটের সৃষ্টি হয় সেগুলোর যথাযথ কারণ এবং কোর’আন ও সুন্নাহর আলোকে সেগুলোর সমাধান তুলে ধরেছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রত্যেক ইসলামি আন্দোলনের কর্মীর জন্য এ বইটি অবশ্যপাঠ্য।

ডাউনলোড লিঙ্ক : http://www.mediafire.com/?rgal26vwor10aca